হেরে বছর শেষ করলো টাইগাররা, সিরিজ ড্র

0
53

খবর ৭১ : লক্ষ্য ছিলো মাত্র ১১১ রানের। বোলিংয়ে নেমে দারুণ লড়াই করেছে টাইগার বোলাররা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ফিন অ্যালেনের দুর্দান্ত ব্যাটিং আর জেমি নিশাম ও অধিনায়ক স্যান্টনারের দৃঢ়তা ও বৃষ্টি সহায়তায় ১৭ রানে জিতেছে ব্লাক ক্যাপসরা। ফলে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-১ এ ড্র করলো বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড।

এর আগে রোববার (৩১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে মুখোমুখি হয় নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশ। টস হেরে প্রথমে ব্যাটে নামে টাইগাররা। ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই টিম সাউদিকে দারুন একটা চার মারেন সৌম্য। তবে পরের বলেই আম্পায়ার্স কলে লেগ বিফোরের ফাঁদে কাটা পড়েন তিনি।

সৌম্য আউট হবার পরে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে মাঠে নামেন শান্ত। নেমেই দারুণ এক ড্রাইভে চার মারেন অধিনায়ক। খেলছিলেন আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায়। তবে অতি-আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে হয়েছেন আউট।

মিলনেকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে জোরের ওপর খেলতে গিয়েছিলেন টাইগার অধিনায়ক। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তিনি। ক্যাচ তুলে দেন পয়েন্টে। ১৫ বলে ১৭ রান করে থামেন তিনি। বাংলাদেশ হারায় গুরুত্বপূর্ণ আরও একটি উইকেট। ৪ দশমিক ২ ওভারে বাংলাদেশের রান তখন ৩১।

পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে উইকেট খুইয়েছেন রনিও। হৃদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে রিভিউ না নিয়েই সাজঘরের দিকে হাঁটা দেন রনি। তবে রিভিউ নিলে আউটই হতেন না তিনি! রিভিউতে দেখা গেছে লেগ স্টাম্প মিস করে যেত রনিকে আউট দেয়া বলটি!

নবম ওভারে পাঁচে নামা আফিফ কাঁটা পড়েন স্যান্টনারে। ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। ইনসাইড-এজে প্যাডে লেগে ক্যাচ উঠে যায়। লুফে নেন কিউই উইকেটরক্ষক টিম সাইফার্ট। ৫৯ রানে ৪ উইকেট হারায় টাইগাররা।

দুই ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হয়েছেন পেসার শরিফুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত।
আফিফের পরে হৃদয়ও ফেরেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। তবে প্রথমে আউট দেননি আম্পায়ার। ফলে রিভিউ নেন অধিনায়ক স্যান্টনার, সফল হন তিনি। হৃদয়কে ফেরান ব্যক্তিগত ১৬ রানে। ১১ ওভার শেষে ৬৮ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে খাঁদের কিনারায় চলে যায় বাংলাদেশ।

মাঝে একবার জীবন পান শামীম পাটোয়ারি। উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দিলে ডাইভ দেন সেইফার্ট। তবে ধরতে পারেননি এই কিউই উইকেটরক্ষক। এদিকে উইকেটে এসে মাত্র ৪ রানেই আউট হয়ে যান শেখ মেহেদি। স্যান্টনারের তৃতীয় শিকারে ফেরেন তিনি।

হ্যাটট্রিকের সুযোগ ছিল স্যান্টনারের সামনে। ১১তম ওভারের শেষ বলে ফিরিয়েছিলেন হৃদয়কে। ১৫তম ওভারের প্রথম বলেই ফেরান মেহেদিকে। কিন্তু পারেননি পরের বলে উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক করতে। তবে তিন বল পর ঠিকই তুলে নিয়েছেন শামীমের উইকেট। এই ওভারে দুই উইকেট নেন তিনি। বাংলাদেশ হারায় ৭ উইকেট। রান তখন ৮১।

এই রানের সাথে আর ৬ রান যোগ হতে না হতেই আউট হন পেসার শরিফুল। ব্যক্তিগত ৪ রানে ফেরেন তিনি। বাংলাদেশ হারায় ৮ উইকেট। তখনও ওভার বাকি চারটি। শঙ্কা জাগে শতরানের আগেই অলআউট হয়ে যাওয়ার।

তবে শতরান পেরিয়েছে টাইগার ব্যাটাররা। ৯৫ যখন বাংলাদেশের রান তখনই দারুণ এক ড্রাইভে চার মারেন দশ নম্বর ব্যাটার তানভীর ইসলাম। পরের বলে সিংগেল নিয়ে পূরণ করেন শতরানের কোটা। ওই ওভারে আসে ৯ রান।

১৯তম ওভারে আউট হয়ে যান তানভীর। ব্যক্তিগত ৮ রান করেন তিনি। বাকি থাকে আর এক উইকেট। শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসেন মিলনে। তার দ্বিতীয় বলেই বোল্ড হয়ে যান ১০ রান করা রিশাদ। চার বল বাকি থাকতেই বাংলাদেশের রানের চাঁকা আটকে যায় ১১০-এ।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ চার উইকেট শিকার করেছেন স্যান্টনার। চার ওভারে খরচ করেছেন মোটে ১৬ রান। বাকি দুইটি করে উইকেট নিয়েছেন বেন সিয়ার্স, টিম সাউদি আর এডাম মিলনে।

১১১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে নিজের প্রথম ওভারেই সেইফার্টকে ফেরান শেখ মেহেদি। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বেসামাল হয়ে ক্রিজের বাইরে চলে গিয়েছিলেন সেইফার্ট। ভুল করেননি উইকেটকিপার রনি তালুকদার। ১ রানে স্টাম্পিং করে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়েছেন তাকে।

এরপরে ক্রিজে আসা ড্যারেল মিশেলকেও ১ রানে ফেরান মেহেদি। ফুললেন্থ থেকে তুলে মারতে গিয়ে মিড অফে শান্তর হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৩ দশমিক ৪ ওভারে কিউইদের রান দাঁড়ায় ২ উইকেটে ২৬।

উইকেটে থিতু হবার আগেই গ্লেন ফিলিপসকে বোল্ড করে দেন শরিফুল। ১ রানেই হাঁটা দেন সাজঘরের পথে। পাঁচ ওভার শেষে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। চাপ আরও বাড়িয়ে দেন মার্ক চাপম্যান। দলের খাতায় আট রান যোগ হতেই আউট হয়ে যান তিনি। দৌঁড়ে ডাবলস নিতে গিয়ে ফিন অ্যালেনের সাথে ক্রিজেই সংঘর্ষ হয় তার। পড়ে যান দুজনেই। ফিন বসে পড়েন ক্রিজের মধ্যেই। তবে তাকে আউট না করে চাপম্যানকে আউট করেন মোস্তাফিজ।

ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ফিন অ্যালেনকে ফেরান শরিফুল। তবে ততক্ষণে বাংলাদেশের জয়ের আশায় ভাটা পড়ে গেছে। আউট হবার আগে ৩১ বলে ৩৮ রান করেন এই ব্যাটার। দুই ছক্কার সাথে হাঁকিয়েছেন ৪টি চার।

এরপরে আর উইকেট নিতে পারেনি টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডকে জয়ের দারপ্রান্তে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত ক্রিজে ছিলেন জেমি নিশাম ও মিশেল স্যান্টনার। তাদের জুটি থেকে আসে ৪৬ রান।

১৪ দশমিক ৪ ওভারে কিউইদের রান যখন ৫ উইকেটে ৯৫, তখনই নামে বৃষ্টি। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি আইনে ম্যাচটি জিতে যায় ব্লাক ক্যাপসরা।

শেষ ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন অধিনায়ক স্যান্টনার। বল হাতে ৪ উইকেটের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও ১৮ রানে ছিলেন অপরাজিত। আর সিরিজ সেরা হয়েছেন পেসার শরিফুল ইসলাম।

হারের মাধ্যমে বছর শেষ হলেও বেশ কিছু অর্জন রয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। চলতি মাসেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতে প্রথম ওয়ানডে জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টিতেও কিউইদের মাটিতে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় পায় টাইগাররা।

তাছাড়াও পাওয়ার হিটিংয়ের ফরম্যাটে ২০২৩ সালটা এযাবৎকালের সবচেয়ে সফল বছর বাংলাদেশের জন্য। চলতি বছর এখন পর্যন্ত খেলা ১৪ ম্যাচের ১০টিতেই জিতেছে টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) সিরিজের ২য় ম্যাচ খেলতে নেমেছিল শান্ত-মোস্তাফিজরা। তবে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে। সেজন্য ১৩ ম্যাচেই ১০ জয় বলা যায় বাংলাদেশের। অর্থাৎ চলতি বছর লাল সবুজ জার্সিধারীদের টি-২০ তে জয়ের হার ৭৬ শতাংশের বেশি।

মার্চে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশের মাধ্যমে ২০ ওভার ক্রিকেটের বছর শুরু করে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও সিরিজ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। জুলাইয়ে আফগানদের সিলেটে ধবলধোলাই করে সাকিবের দল। এরপর হাংঝুতে এশিয়ান গেমসে সাইফ হাসানের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানকে হারায় আফিফ-ইয়াসির আলীরা।

কিউইদের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজ দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের বছরটা শেষ হচ্ছে তাসমান সাগরপাড়ে। ৫ উইকেটের জয়ে ইতিহাস গড়ে শুরুর পর ২য় ম্যাচটা বৃষ্টির কারণে ভেস্তে যাওয়ার পর শেষ ম্যাচের এই হারে ১৩ ম্যাচে ১০ জয় নিয়ে বছর শেষ করলো টিম টাইগার্স। ২০২৪ বিশ্বকাপের আগে যা বড় অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করবে লাল সবুজের বাংলাদেশের জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here