ফেঁসে যাচ্ছেন এনবিআরের মতিউর!

0
66

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা পদে অধিষ্ঠিত থেকে দিনে দিনে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। নানা প্রভাব খাটিয়ে ছিলেন অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে এবারের কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে ১৫ লাখ টাকায় নিজের ছেলের একটি ছাগল কেনাকে কেন্দ্র করে তিনি এখন দেশজুড়ে বিপুল আলোচিত। গণমাধ্যমে উঠে আসছে তার বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের নতুন নতুন তথ্য। বাবার অবৈধ টাকায় ছেলের বিলাসিতার মুখরোচক গল্পও এখন টক অব দ্য কান্ট্রি।

আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের অবৈধ সম্পদের খোঁজে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকও। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তার হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসব তথ্য সত্য হলে এই কর্মকর্তা ফেঁসে যেতে পারেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হারাতে পারেন চাকরিও। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মুখোমুখি হতে পারেন শাস্তিরও।

মতিউর রহমান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঈদের আগে তার ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকায় কোরবানির ছাগল, ৭০ লাখ টাকায় কয়েকটি গরু কেনার ছবি ও খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে তিনি দাবি করেন, ইফাত তার ছেলে নয়।

যদিও অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে, ইফাত তার দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র সন্তান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবা-ছেলের একাধিক ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই প্রতারণার তথ্য সামনে আসার পর কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে যেন সাপ বেরিয়ে আসছে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার অবৈধ সম্পদের ফিরিস্তি উঠে আসছে একের পর এক। এবার আর তিনি গণমাধ্যমের সামনে মুখ খুলছেন না। অনেকটা চুপসে গেছেন এই কর্মকর্তা।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, বরিশালসহ বিভিন্ন জায়গায় মতিউরের নামে বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ রয়েছে। তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান। এ দম্পতির মেয়ে ফারজানা রহমান ইস্পিতা ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা জমা রয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ অনুসন্ধান করে এ পর্যন্ত মতিউর রহমান, তার দুই স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীতে অন্তত ১৫টি ফ্ল্যাট ও তিনটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে ধানমন্ডিতে একটি, সেগুনবাগিচায় দুটি, শান্তিনগর টুইন টাওয়ারে একটি, লালমাটিয়ায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি-ব্লকে একটি সাততলা বাড়ি, আই-ব্লকে তার যৌথ মালিকানাধীন ডেভেলপার কোম্পানি জেসিক্সের তত্ত্বাবধানে একটি বহুতল ভবনে অংশ আছে।

দুদকের অনুসন্ধানে মতিউর রহমানের মালিকানায় ময়মনসিংহের ভালুকার সিডস্টোর এলাকার পাশে প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে গ্লোবাল ম্যাক্স নামের জুতার কারখানা, রাজধানীর নিকেতনের ৮ নম্বর সড়কে গ্লোবাল ম্যাক্সের প্রধান কার্যালয় এবং চাঁদপুরে একটি গরুর খামার পাওয়া গেছে।

নরসিংদীর রায়পুরার মরজালে ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্টের পরিচালক মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রীর ঘরের দুই সন্তান ফারজানা রহমান ঈপ্সিতা ও আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব। ফারজানা ও আহমেদ তৌফিকুরের নামে গাজীপুরের পুবাইলের খিলগাঁওয়ে রয়েছে আপন ভুবন পিকনিক ও শুটিং স্পট।

সোনাগাজীর সোনাপুরে শ্বশুরবাড়িতে রয়েছে বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি। স্ত্রী-সন্তান ছাড়াও শ্যালক, শ্যালিকা, ভাই ও আত্মীয়স্বজনের নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এনবিআরের এই কর্মকর্তা। এছাড়াও পুঁজিবাজারে রয়েছে তার বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ।

বিভিন্ন অভিযোগ ওঠার পর গত বুধবার (১৯ জুন) মতিউর রহমান একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘কমিশনার থাকাকালে কেউ এক টাকার দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে আমাকে যে শাস্তি দেওয়া হবে, তা আমি মাথা পেতে নেব। রাজস্ব আদায় পারফরম্যান্সে কখনো ফেল করিনি। অথচ দুর্ভাগ্য আমার, চাকরি জীবনের প্রতিটি প্রমোশনের আগে দুদক তদন্ত করেছে। এখন আবার সদস্য পদে পদোন্নতির আগে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন ব্যবসায়ী পাওয়া যাবে না, যিনি বলতে পারবেন মতিউর রহমান তার সঙ্গে দুর্নীতি করেছেন। এটা একশ পার্সেন্ট আস্থার সঙ্গে বলতে পারি।’

যদিও গত দুই দিন ধরে তিনি আর কোনো গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। অনেকে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাচ্ছেন না।

দুদক সূত্র জানায়, এর আগে মতিউরের বিরুদ্ধে কমিশনে চারবার দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ে। তবে তার তদবিরের চাপে প্রতিবারই তাকে ‘ক্লিন সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়। তবে এবার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গণমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় তাকে আর ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মইনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে কমিশন সভায় এনবিআর সদস্য (শুল্ক ও আবগারি) ড. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। দুদকের মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. মোকাম্মেল হক অভিযোগ তুললে অনুসন্ধানে একটি দল গঠন করতে বলা হয়। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে মামলা করবে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here