খবর ৭১ ডেস্ক: তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ আমানুল হক গত ২৭শে ডিসেম্বর তুরস্কের নির্মানাধীন আকুইউ পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এটা নির্মান করছে রাশিয়ার অন্যতম স্বনামধন্য হোল্ডিং কোম্পানী টিটান-২ এর সিস্টার কোম্পানী টিএসএম।
টিএসএম এনার্জি তুরস্কের একটি স্বনামধন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ও বিপণন কোম্পানি। স্বনামধন্য এই কোম্পানিটি বৃহৎ তুরস্কের দশ ভাগ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করে থাকে। বর্তমানে এই কোম্পানিটি আদানা এলাকার মার্সিন শহরের নিকটে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী আকুইউ নামক স্থানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজে নিয়োজিত আছে। টিএসএম এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন পেশায় বাংলাদেশ থেকে ১৫২২ জন দক্ষ জনশক্তি আমদানির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। সেই লক্ষ্যে দুবাইয়ের বিখ্যাত নির্মাণ কোম্পানি ‘নুর-আত্ব-তিন বিল্ডিং কনস্ট্রাক্টিং এলএলসি’।
টিএসএম’ এর বিশিষ্ট সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানির বিষয়টি ব্যবস্থাপনা করছে। ইতোমধ্যে টিএসএম এনার্জি দুবাইয়ের নূর-আত্ব-তিন বিল্ডিং কনস্ট্রাক্টিং এলএলসি’কে ১৫২২ জন জনশক্তি প্রেরণের চাহিদা পত্র প্রেরণ করেছে। টিএসএম-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়েভগনী ইয়াতচেংকো পরিদর্শনকালে মাননীয় রাষ্ট্রদূতকে অভ্যার্থনা জানান এবং তিনি নিজেই এই পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে রাষ্ট্রদূতকে বিস্তারিতভাবে অবহিত করেন। তিনি বলেন যে বাংলাদেশে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে তিনি সম্পূর্নভাবে অবহিত আছেন, কারন টিএসএম রোসাটমের সাথে ওতপ্রোতভাবে কাজ করে এবং আকুইউ পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও রোসাটমের একটি প্রকল্প।
তিনি এটাও জানেন যে বাংলাদেশে প্রচুর দক্ষ জনশক্তি আছে এবং রূপপুরে তারা তাদের দক্ষতা অত্যন্ত সাফল্যের সাথে প্রমান করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় টিটান-২ রাশিয়ার লেনিনগ্রাদের সসনভি বোর ও নভোসিবিরস্ক এলাকায়ও নির্মানাধীন পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সহস্রাধিক দক্ষ জনশক্তি আমদানির ব্যাপারে ইতোমধ্যেই নুর-আত্ব-তিন বিল্ডিং কন্সট্রাক্টিং এলএলসি’র সাথে আরও একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির ফলে রাশিয়াতে বাংলাদেশী দক্ষ শ্রমিক রপ্তানির ক্ষেত্রে এক নব দিগন্তের সূচনা করবে। পরিদর্শনকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মহোদয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি বিষয়টি’র ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশের জনশক্তি কর্মঠ, নিয়মানুবর্তী এবং কাজের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল। তিনি জেনে খুশী হন যে, এইসব প্রার্থীদেরকে টিএসএম’এর নিজস্ব ট্রেইনার এবং সিলেক্টর বাংলাদেশে অবস্থান করে, তাদের নিজেদের কারিকুলাম অনুযায়ী ব্যবাহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নির্বাচন করবেন।
বাংলাদেশ হতে প্রেরণকৃত শ্রমিকদের বাসস্থান, খাবার ও বিনোদনের ব্যবস্থাগুলোও তিনি পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে, প্রতিটি কক্ষে এয়ার কন্ডিশন আছে, প্রতি রুমে চারজন করে থাকবে। এছাড়া আছে, প্রশস্থ মসজিদ, পরিস্কার সুবিশাল ক্যাফেটেরিয়া, সুপার শপ, লন্ড্রী (সেখানে বিনা পয়সায় প্রতিদিন কর্মীদের কাপড় ধোয়া হবে)। মাননীয় রাষ্ট্রদূত এই সুবিশাল আয়োজন দেখে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদূত মহোদয় যোগদান পরবর্তী তুরস্কের সাথে দ্বিপাক্ষিক ব্যাবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে সচেষ্ট থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাবসা-বানিজ্যের প্রসারতার ক্ষেত্রে তুরস্কে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টা’কে তিনি খুবই ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেন। তুরস্কে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে দুবাইয়ের স্বনামধন্য নির্মাণ কোম্পানি ‘নূর-আত্ব-তিন বিল্ডিং কনস্ট্রাক্টিং এলএলসি’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। নুর-আত্ব-তিনের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ‘ভার্সেটাইলো এইচ আর’ এর উদ্ভাবিত ‘ম্যানেজমেন্ট গভরনিং ইকো সিস্টেম (এম জি ই এস)’ নামক সফটওয়্যার ও প্রযুক্তিগত সহায়তাসহ বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি নির্বাচন ও রপ্তানির বিষয়ে ইতোমধ্যেই সফলতার পরিচয় দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন টিএসএম এনার্জি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
দিনশেষে মান্যবর রাষ্ট্রদূত মোঃ আমানুল হকের সম্মানে টিএসএম-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব ইয়েভগনী ইয়াতচেংকো এক নৈশভোজের আয়োজন করেন। সেখানে মাননীয় রাষ্ট্রদূত আবারো তাকে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক আমদানী করার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বলেন যে, তিনি তুরস্কের অন্যান্য স্থানে একে এক অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করবেন। নুর-আত্ব-তিন’এর এই মহৎ উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার ফলে তুরস্কে বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মান্যবর রাষ্ট্রদূত মোঃ আমানুল হক আশা’বাদ ব্যক্ত করেন।