খবর৭১ঃ মাত্র দুই দশকের ব্যবধানে কর্ণফুলী নদীর প্রস্থ কমে দাঁড়িয়েছে ৪১০ মিটারে। ২০০০ সালেও এই নদীর প্রস্থ ছিল ৯৩০ মিটার। দুই দশকের মধ্যে বাণিজ্যিক দিক থেকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদীটি ৫২০ মিটার অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি প্রশস্ততা হারিয়েছে।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন পরিচালিত এক জরিপে ভয়াবহ এই তথ্য উঠে এসেছে। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে রবিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জরিপের তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। আর প্রতিবেদন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন নদী গবেষক প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী, সমুদ্র বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নোমান আহমেদ সিদ্দিকি ও বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ।
বক্তারা বলেন, দুই দশক আগেও যেখানে নদী ছিল দখল আর ভরাটে এখন সেখানে নদীর কোনো চিহ্ন নেই। বিশেষ করে শহরের অভয় মিত্র ঘাট, সদরঘাট, ফিরিঙ্গিবাজার ফেরিঘাট, বাংলাবাজারঘাটসহ কর্ণফুলীর প্রায় প্রতিটি খেয়াঘাট হারিয়ে গেছে। শহরের ওপারে নদীর দক্ষিণ তীরেও একই চিত্র।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ধারণ করা গুগলের টাইমলেপস ম্যাপচিত্রে দেখা যায়, চাক্তাই খালের মোহনায় নদীর প্রশস্ততা ছিল ৯৫২ দশমিক ২৮ মিটার, গ্রাউন্ড লেংথ ৯৫২ দশমিক ২৯ মিটার।
২০০০ সালের ২ ডিসেম্বর একই জায়গায় নদীর প্রশস্ততা কমে ৯৩০ দশমিক ৩১ মিটার, গ্রাউন্ড লেংথ কমে ৯৩০ দশমিক ৩২ মিটারে ঠেকে। ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল একই জায়গায় নদীর ম্যাপ লেংথ ৬৬৬ দশমিক ৫৬ মিটার, গ্রাউন্ড লেংথ ৬৬৬ দশমিক ৫৬ মিটার।
আর গেল বছরের ১২ অক্টোবর ধারণ করা চিত্রে দেখা যায়, নদীর শাহ আমানত সেতুর নিচে রাজাখালী খালের মোহনায় কর্ণফুলীর প্রস্থ ৪৪৭ দশমিক ৩৭ মিটার, গ্রাউন্ড লেংথ ৪৪৬ দশমিক ৩৭ মিটার।
বক্তারা বলেন, দখল-দূষণের কারণে কর্ণফুলী নদীর গভীরতা কমে বিভিন্ন পয়েন্টে তৈরি হয়েছে চর। দুই দশকে ৪৮৪ মিটার নদী দখল হয়েছে। দখল করা নদীর জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে মাছবাজার, ভেড়া মার্কেট, মেরিনার্স পার্ক ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, খনন না করায় শাহ আমানত সেতুর নিচ থেকে চাক্তাই খালের মোহনা এলাকা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার চর জেগে কর্ণফুলীর গতিধারা সংকীর্ণ হয়ে গেছে। আর একারণে শাহ আমানত সেতুর চার ও পাঁচ নম্বর পিলারের নিচে প্রায় ৭৯ ফুট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বড় জলোচ্ছ্বাস বা অতি বর্ষণে পানির স্রোতে শাহ আমানত সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সেতুর দক্ষিণ পাশের গাইড ওয়াল ধসে যেতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাটার সময় ফ্যাদোমিটারের মাধ্যমে নদীর গভীরতা পরিমাপ করা হয়েছে। শিকলবাহা খালের মোহনা থেকে ফিরিঙ্গি বাজার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার নদীর তলদেশের সর্বোচ্চ গভীরতা পাওয়া গেছে ৭৮.৬ ফুট। শাহ আমানত সেতুর ৩ নম্বর পিলারের কাছে গভীরতা প্রায় ৬১ ফুট।
চর পাথরঘাটা ব্রিজঘাট থেকে উত্তর পাশে গভীরতা পাওয়া গেছে ২৫ ফুট। আর মাত্র দুই ফুট গভীরতা মিলেছে চাক্তাই খালের মোহনা এলাকায়। রাজাখালী খালের মোহনায় পাওয়া গেছে চার ফুট।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান লিখিত বক্তব্যে ৬ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, কর্ণফুলী নদী রক্ষায় হাইকোর্টের নির্দেশমতো চাক্তাই খালের মোহনায় গড়ে ওঠা মাছবাজারসহ ৪৭ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকা আঠারো শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা, শাহ আমানত সেতুর নিচ থেকে চাক্তাই খালের মোহনা পর্যন্ত তিন কিলোমিটারব্যাপী জেগে ওঠা চর খনন করে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা এবং সঠিক খনন ও শাসনের মাধ্যমে কর্ণফুলীর স্বাভাবিক গতিধারা বজায় রাখা।