খবর৭১ঃ রমজানের শুরুতে রাজধানীর ডেমরা ও পাশ্ববর্তী এলাকাগুলোতে তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে।রমজানের ছোঁয়ার সাথে সাথে ডেমরার বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় গ্যাস সংকট দেখা দিচ্ছে।এতে সমস্যা হচ্ছে নিত্যদিনের রান্নাসহ গৃহস্থালীকর্মে।ডেমরার বেশিরভাগ এলাকায় গ্যাসের চুলা কখনো জ্বলছে, কখনো জ্বলছে না। আবার কখনো জ্বলছে নিবু নিবু করে। তবে রোজা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে অনেক এলাকায় এখন আর রাতেও চুলা জ্বলছে না। ফলে ইফতার ও সেহরি বন্ধের উপক্রম এতে বিপাকে পড়ছেন গৃহিণীরা।ডেমরার অধিকাংশ এলাকায় সকাল থেকে মধ্য রাত অবধি গ্যাসের চাপ নেই বললেই চলে। ফলে বাধ্য হয়ে লাকড়ির চুলায় রান্নার কাজ শেষ করছেন গৃহিণীরা।
গ্যাস সংকটের ক্ষোভ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপগুলোতে সরব রয়েছে জোরালো প্রতিবাদে।ডেমরার বৃহত্তম ডেমরা গ্রুপে বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ প্রতিবাদের পোষ্টে জোরালো ভুমিকা রেখেছে ।সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে কমেন্টে দেখা যাচ্ছে নানান ধরনের কৌতুকপূর্ণ মন্তব্য ও বিষাদের ছোয়া। গ্যাস না থাকায় গৃহিণীদের মেজাজ চড়ে আছে। বাসায় চুলা না জ্বালাতে পেরে অনেকেই আবার বাইরে থেকেই ইফতার ও সেহরির জন্য খাবার কিনে নিচ্ছেন। গ্যাসের ভোগান্তিতে পড়ে সব গ্রাহকই রাত-দিন তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের গোষ্ঠী উদ্ধার করছেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে,ডেমরার মাতুয়াইল,ফামের মোড়,মোমেনবাগ, ,কোনাপাড়া,শাহজালাল রোড,ডগাই ব্যাংক কলোনী, মদিনাবাগ, বাশেরপুল,বড়ভাঙ্গা, গ্রীনসিটি, মোমেনবাগ, আল আমিন রোড, বক্রনগর,হাজীনগর,হিজলতলা,খন্দকার রোড,ইস্টান হাউজিং ডগাইসহ ডেমরার বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের এ সংকট চলছে।
কোনাপাড়ার রোডের বাসিন্দা রোকসানা আক্তার জানান,রহমতের মাসে এগুলা কেমন ধরনের অবিচার? গতকালকে রাত থেকে গ্যাস নাই। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত চুলায় আগুন ই নাই। ইফতার করবে কেমন করে মানুষ?
একইকথা জানিয়েছেন ডগাইরের গামেন্ট ব্যবসায়ী মো: ওমর ফারুক ও মুদিদোকানদার আলমগির হোসেন। তারা জানান,গত ১৫ দিন ধরে গ্যাস নাই এলাকায়। অনেকে হোটেল থেকে খাবার কিনে আনছেন। আবার খেয়ে না খেয়ে দিন পার পার করছেন বলেও জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডেমরার বাশেরপুলের একটি কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন,গ্যাসের কারণে ঘরে ইফতার বানানো সম্ভব হয়নি, সব দোকানে গিয়ে দেখি ইফতার শেষ। মুড়ি বানানোর স্বাদ নিয়ে ১ম ইফতার হলোও না। আল্লাহ আমাদের প্রতি সহায় হোন।কারো প্রতি অভিযোগ নাই। ফারজানা মুন্নি নাম একজন গৃহিনী বলেন,গ্যাসের সমস্যার জন্য এই এলাকা থেকে বাসা ছাড়ার পরিকল্পনা নিচ্ছি।এসময় তিনি অভিযোগ করেন, রোজার প্রথম দিন থেকেই গ্যাসের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। মধ্য রাতের আগে গ্যাস পাওয়া যায় না।তাই সেহরি ও ইফতার বাসায় তৈরি করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। এই অত্যাচার আর ভালো লাগে না। গত বছর এই এলাকায় তেমন গ্যাস সংকট ছিল না। কিন্তু এবার গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। বামৈল এলাকার বাসিন্দা হাসিবুল হাসান জানান, প্রথম রোজার দিন সকালের পর গ্যাস চলে যায়।গ্যাসের অভাবে সেহরির জন্য খাবার রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। এই এলাকার অনেক বাসাবাড়িতে সারাদিন গ্যাস থাকে না। সন্ধ্যার দিকে গ্যাস আসতে শুরু করে। কিন্তু ততক্ষণে ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসে। বাইরে থেকে ইফতার কিনে আনতে হয়। আবার নগরীর অনেক স্থানে খুব ভোরের দিকে অল্প গ্যাস থাকলে তবে মধ্য রাত পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ মিলেছে।
ডিএসসিসি ৬৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান মোল্লা বাবুল জানান, গ্যাস সংকট নতুন না। তবে পবিত্র রমজানের শুরুতে এই সংকট আরো বেড়েছে। তিনি বলেন, গ্যাসের চোলা কখনো মিটমিট করে জ্বলে আবার বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা ঠিক মতো খাবার খেতে পারছেনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় জনবান্ধব কাজ করে। তাই জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ অতিদ্রুত গ্যাস সংকটের দিকে নজর দিন। তাহলে সরকারের সুনাম আরো বাড়বে।
ডিএসসিসির ৬৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ সিফাত বলেন,গত ৩/৪ মাস হলো গ্যাসের এই অবস্থা সারাদিন চুলার উপর ভাত বসাইয়া রাখার পর দিনশেষে ভাত রান্না শেষ হয়। একটা ছোট পরিবার দীর্ঘ সময় রান্না করলে চলতে পারে কিন্তু এই গ্যাসে একটা বড় পরিবারের অনেক সময়ই অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয় অথচ এইখান থেকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির দূরত্ব মাত্র ৫ মিনিটের।
ডেমরার বাসিন্দা ও স্কুল শিক্ষক মোঃ সালে আহমেদ সালে বলেন,রহমতের মাসে এ সংকট মেনে নেয়া যায় না,মানুষ কষ্ট করে রোজা রেখে যদি ইফতারের সময় রান্না করতে না পারে তাহলে এর থেকে দুঃখ কি হতে পারে। তিনি আরো ও বলেন,বাসায় অসুস্থ মা লাকডির চুলায় কষ্ট করে ইফতারে সামগ্রী গওলো তৈরী করেছেন।বিকাল বেলা কম বেশি সবারই রান্না বান্না করতে হয় এই সময় টা তে যদি গ্যাস না থাকে তখন কেমন টা লাগে।
রমজানে গ্যাসের এ সংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিতাসের জন সংযোগ কর্মকর্তা মিজ্জা মাহবুব হোসেন বলেন,বিবিয়ানা থেকে গ্যাস উত্তোলনে সমস্যা সৃষ্টির কারনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্যাস স্বল্পতা সংক্রান্ত অভিযোগ আসছে’।গ্যাস সংকট উত্তোরনে কাজ চলছে ইতিমধ্যে। গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি না পাওয়া এবং চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গ্যাসের সংকট তীব্র গ্যাসের সরবরাহ কম থাকার কারণেই মূলত সংকট তৈরি হয়েছে।তিনি আরো ও জানান, জ্বালানি বিভাগ থেকে রোজার মাসের শুরুতেই নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘোষণা দেয়া হয়। এই ঘোষণা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্ল্যান্টগুলোতে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়। ফলে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে।