সুন্দরবনে এবার আড়াই মাস চলবে মধু আহরণ

0
310

স্টাফ রিপোটার,বাগেরহাট: সুন্দরবনে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) থেকে মধু আহরণ মৌসুম শুরু। চলবে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত। মৌয়ালরা বন বিভাগ থেকে অনুমতিপত্র (পাশ-পারমিট) নিয়ে সুন্দরবনে যাচ্ছেন। মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। বিগত বছরগুলোতে সুন্দরবন বিভাগ মধু আহরণ মৌসুম ১ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত দুই মাস সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার খলসি গাছের ফুলের মধু আহরণ করতে আড়াই মাস সময় দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম দুই বিভাগের বনা লের ভৌগোলিক অনেক পার্থক্য থাকায় দুই বিভাগের সমগোত্রের গাছপালাও একই রকম জন্মায় না। সুন্দরবনে যে কয়টি প্রজাতির ফুলের মধু পাওয়া যায়, তার মধ্যে খলসি ও গরাণ ফুলের মধু উন্নতমানের। এর মধ্যে আাগাম ফুল আসে খলসি গাছে। সুন্দরবনের দুই বিভাগের মধ্যে পশ্চিম বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জে খলসি প্রজাতির গাছ বেশি থাকায় সেখানের মৌয়ালরা বন বিভাগ থেকে অনুমতিপত্র (পাশ-পারমিট) নিয়ে গতকাল ভোর থেকে সুন্দরবনে যাচ্ছেন। তবে, সাতক্ষীরা তুলনায় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে খলসি গাছ কম থাকায় বাগেরহাটের মৌয়ালরা এখনও বন বিভাগ থেকে নেননি। আজ সুন্দরবনে মধু আহরণে যাচ্ছে না তারা।

সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার অভিজ্ঞ মৌয়াল ও মধু ব্যবসায়ীরা জানান, সুন্দরবনের গাছে মাত্র ফুল আসতে শুরু করেছে। মৌমাছিরা এখন বাসা তৈরিতে ব্যস্ত। পূর্ণাঙ্গ মৌচাক তৈরি হয়নি। এই মুহূর্তে চাকে আঘাত লাগলে বা মধু সংগ্রহের জন্য মশাল জ্বালিয়ে ধোঁয়া দিলে মৌমাছিরা বন ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবে। ফলে মধু সংরক্ষণ বাধাগ্রস্ত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে মৌমাছি-মৌয়াল উভয়ই।

মোংলা উপজেলার জয়মনি গ্রামের বেল্লাল হোসেন, নজরুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান ও আব্দুল মালেক ফরাজি বলেন, আগাম পাশে লাভবান হবেন পশ্চিম বিভাগের মৌয়ালরা। এই সময় বনে গেলে পূর্ব বিভাগের মৌয়ালদের পুরো একটি গোন (১৫ দিনে এক গোন) লোকসান গুনতে হবে। এখনও সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের এসব মৌয়ালরা দল গঠন, নৌকা প্রস্তুত বা মহাজনের কাছ থেকে দাদনও নেওয়া শুরু করেননি। তারা সবাই বনে মাছ ধরাসহ এলাকায় অন্য কাজে ব্যস্ত। তাই আগামী ১ এপ্রিল থেকে মধু আহরণ করতে সুন্দরবনে যাবেন তারা।

সুন্দরবন বিভাগ গতবারের তুলনায় এবার মধু আহরণের রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ। আগে যেখানে ১৫ দিনে জনপ্রতি রাজস্ব ছিল ৭৫০ টাকা, এবার সেখানে জনপ্রতি ১৫০০ টাকা করা হয়েছে। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ এ বছর (২০২১-২০২২ অর্থবছর) ১০৫০ কুইন্টাল মধু এবং ৩৫০ কুইন্টার মোম আহরণ ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ লাখ টাকা। গত বছর পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ থেকে ২৭৩ জন মৌয়াল পাশ-পারমিট নিয়ে সুন্দরবন থেকে ১০৪৪ কুইন্টাল মধু ও ৩৫০ কুইন্টার মোম আহরণ করেন। এতে রাজস্ব আয় হয় ১০ লাখ ৯৬ হাজার ২০০টাকা।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকতা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন মৌয়ালদের এই যুক্তির সঙ্গে একমত প্রকাশ করে বলেন, সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই এলাকা নিয়ে বাগেরহাট পূর্ব বন বিভাগ এবং খুলনা ও সাতক্ষীরা নিয়ে পশ্চিম বিভাগ। দুই বনা লের ভৌগোলিক অনেক পার্থক্য রয়েছে। এ কারণে দুই অ লে সমগোত্রের গাছপালাও একই রকম জন্মায় না। সুন্দরবনে খলসি ও গরাণ ফুলের মধু উন্নতমানের। বাগেরহাটের পূর্ব বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে গরাণ গাছ বেশি। গরাণের ফুল আসা শুরু হয় মার্চের শেষে, থাকে পুরো এপ্রিল মাস। এদিকে আগাম ফুল আসা খলসি প্রজাতির গাছ শুধু পশ্চিম বিভাগের সাতক্ষীরা অ লেই বেশি। তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনে খলসি প্রজাতির গাছে ফুলের মধু দেশে প্রাকৃতিকভাবে আহরিত মধুর চেয়ে ভালো। দাম এবং চাহিদা দুটোই বেশি। সঠিক সময় এই মধু আহরণ না করায় তা বনের অন্য পেশাজীবীরা চুরি করে নিয়ে যায়। ফলে, প্রকৃত ও পাসি মৌয়ালরা পর্যাপ্ত খলসি মধু সংগ্রহ করতে পারেন না। এতে বনবিভাগও রাজস্ব বি ত হয়। যে কারণে খলসি ফুলের উৎকৃষ্ট মধু বেশি আহরণ করতে ১৫ দিন এগিয়ে দুই মাস থেকে আড়াই মাস আহরণ মৌসুম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুন্দরবন বিভাগ। পূর্ব বিভাগে মধু আহরণ করতে মৌয়ালরা এখন না গেলেও সমস্যা হবে না। আহরণ না করলে সেই মধু চাকেই থেকে যাবে। পরে যখন যাবেন তখন আহরণ করতে পারবেন। মধু যাতে অন্য কেউ অবৈধভাবে আহরণ করতে না পারে, সেজন্য স্মার্ট প্যাট্রলিংসহ বন বিভাগের টহল জোরদার করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here