বাগেরহাটে খাল খননে বাধা ৯৮ অবৈধ স্থাপনা

0
397

স্টাফ রিপোটার,বাগেরহাট: বাগেরহাটের চিতলমারীতে খালের জমি দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলায় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প খালের খননকাজ বন্ধ রয়েছে। দ্রুত অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করে খাল খননের মাধ্যমে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছে, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় শিগগিরই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খননকাজ করা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা সদরের বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সাড়ে ১২ কিলোমিটার নদীটি দখল-দূষণে এখন খালে পরিণত হয়েছে, যা ‘হক ক্যানেল’ নামে পরিচিত। এ হক ক্যানেলের মধ্যে ১৫-২০ ফুট জমি দখলে নিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অবৈধভাবে অসংখ্য বহুতল ভবন, পাকা ঘরবাড়ি ও স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। চিতলমারীতে নাব্য সংকটের কারণে নদী ও খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ হওয়ায় কৃষিকাজসহ দৈনন্দিন কাজে পানি ব্যবহারে এলাকার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। প্রবাহ ফেরাতে সরকার চিতলমারীর পুরনো মধুমতি, হক ক্যানেল ও মরা চিত্রাসহ তিনটি নদী ও ৫৫টি খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু অবৈধ স্থাপনার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খাল খননকাজ করতে পারছে না। এছাড়া ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি চাষাবাদ ও নৌ-চলাচল হুমকির মুখে।

চিতলমারী সদরের বেয়ালিয়া গ্রামের সানজিদা বেগম বলেন, ১৫ বছর ধরে খালের পানি ব্যবহার অনুপযোগী। স্থানীয়রা জানায়, অবৈধ স্থাপনা ও দখলবাজির কারণে এক সময়ের নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে। এখন আর খালে পানি নেই। আর্সেনিকের কারণে খালের পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু খননকাজ বন্ধ থাকায় আমরা দুশ্চিন্তায় পড়েছি।

সদর বাজারের ফয়জুল শিকদার বলেন, হক ক্যানেলের পানির ওপর নির্ভর করে এ উপজেলার অধিকাংশ কৃষিকাজ। বর্তমানে খাল ও নদীতে পানি কম থাকায় খননের উপযুক্ত সময়। নদী ও খালপাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খননকাজ না করলে সরকারের কোটি টাকার প্রকল্প কাজ বিফলে যাবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমডি শামীম আহসান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. শামীম আহসান বলেন, ২০১৯ সালের শেষের দিকে ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে ১২ কিলোমিটার হক ক্যানেলের খননকাজ শুরু হয়। কিন্তু অবৈধ দখলদারের কারণে আমরা উপজেলা সদরের ১ কিলোমিটার খাল খনন করতে পারছি না। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী (এসও) আবু হানিফ জানান, হক ক্যানেল পাড়ের ৯৮টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে যৌথ তালিকা বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুই বছর আগে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়ায় ঠিকাদার খননকাজ করতে পারছেন না। এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে খননকাজের এক্সক্যাভেটর মেশিন হক ক্যানেলের পাড়ে যেতে পারছে না। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে আশপাশের খনন করা নদী ও খালগুলোর স্রোত বা গতিপ্রবাহ অস্বাভাবিক আটকে থাকছে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কৃষ্ণেন্দু বিকাশ সরকার বলেন, নদী ও খাল খননের শুরুতে উচ্ছেদের জন্য মরা চিত্রা নদী ও হক ক্যানেলের দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু অবৈধ দখলদাররা নানা কৌশলের আশ্রয় নেন। এখন খননকাজ বন্ধ। আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। আশা করি, অল্প সময়ের মধ্যে প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালের খননকাজ শুরু করতে পারব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here