উদ্বোধনের ১০ মাসেও চূড়ান্ত হয়নি জবি ছাত্রীহলের নীতিমালা, হয়নি হস্তান্তরও

0
154

জবি প্রতিনিধি: উদ্বোধনের দশ মাস পেরিয়ে গেলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র হল ‘বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হল’-এর নীতিমালা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দু’জন প্রভোস্ট এখন পর্যন্ত এই হল নিয়ে কাজ করলেও চূড়ান্ত করতে পারেননি কোনো নীতিমালা। এমনকি হল হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ও সম্পন্ন করেনি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)।

জানা যায়, গতবছর ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ছাত্রী হলের উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়েই অনাবাসিক তকমা ঘুচে বিশ্ববিদ্যালয়টির। তবে হলের নীতিমালা কিংবা ছাত্রীদের সিট বণ্টন কার্যক্রমের কোনো অগ্রগতিও চোখে পড়েনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, নীতিমালা তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গঠন করে দেয়া কমিটির কাজ শেষ। তবে লকডাউনের জন্য নীতিমালা নিয়ে উপাচার্যের সাথে বসা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া হলের নির্মাণ কাজও শেষ।

এদিকে এখনও নীতিমালা তৈরি না হওয়া এবং সিট বণ্টনেরও পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর হলে উঠা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।

বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম এ বিষয়ে বলেন, “নীতিমালা তৈরির জন্য যে কমিটি করা হয়েছে, কমিটির নীতিমালার কাজ শেষ। কিন্তু আমরা লকডাউনের জন্য উপাচার্যের সাথে বসতে পারিনি। দশ তারিখের পর লকডাউন শেষ হলে আমরা বসবো। আর নীতিমালা অনুমোদন হয় সিন্ডিকেটে, এই লকডাউনের জন্য সিন্ডিকেটও পিছিয়ে গিয়েছে।”

হল প্রভোস্ট আরো বলেন, হলের আসবাবপত্রের জন্যও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোন আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে থাকলে সেগুলো পরিবর্তন করে দেওয়া হবে।

ছাত্রীহলের কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী (পিইঞ্জ) বলেন, কন্ট্রাক্টর ও ইইডি হলটি হস্তান্তর করার জন্য লোক পাঠিয়েছিলো। আমরা তখন এভাবে হলটি নিতে চাইনি। আমি তাদের বলি যে, আপনাদের লোক দেন আর আমি ইঞ্জিনিয়ার দেই। আমরা যৌথ টিম মিলে আগে ভিজিট করি যে, সব কাজ ঠিক মতো হয়েছে কি না। তারপর হল পরিদর্শন করে যেসব ত্রুটি রয়েছে সেগুলোর তালিকা করে সংশোধনের জন্য বলা হয়। এরপর তারা কাজ ধরেছে এবং অনেক গুলো কাজ তারা করেছেও। কিন্তু এখনও শত ভাগ হয়নি, কিছু কাজ বাকি আছে। কতটুকু করেছে তা আসলে লকডাউনের কারণে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে এমনিতে হলের কাজ শেষ। লিফট চারটিই চালু হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আসবাবপত্রের ব্যাপারে একটু ঝামেলা হয়েছিলো। কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছিলো। তখন আবার যারা আসবাবপত্র সরবারহ করেছে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফআইডিসি) তাদের চিঠি দেয়া হয়। পরে তাদের আবার লোক এসেছিলো। তারা এটা মেরামত করলে বুঝে নেয়া হবে।

হল হস্তান্তর সহ সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, হল এখনও হস্তান্তর হয়নি, কেননা অনেক ফার্নিচার তারা ঠিক মতো দেয় নি। আমি একটি বড় কমিটি করে দিয়েছি। প্রভোস্ট, চিফ ইঞ্জিনিয়ার সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকও রয়েছেন কমিটিতে। কমিটি সব বুঝে নিবে, যেনো পরে বলতে না পারে যে এইটা খারাপ, ওইটা খারাপ। এখন একদম যেগুলো নষ্ট, সেগুলো ক্লিয়ার করে বুঝে নিবে। স্টুডেন্ট উঠার আগেই সব বুঝে নিবেন প্রভোস্ট, যেনো দ্বিতীয় বার আর ঝামেলা না হয়।

ছাত্রী তুলার ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় না খুললে তো আর শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে শিক্ষার্থী তুলার প্রশ্ন। আগে আমরা হল বুঝে নেই, বুঝে নেয়ার পর সিট বণ্টন সহ আরো আনুষাঙ্গিক বিষয় গুলো দেখবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০ তলা ভিত্তির ওপর ১৬ তলা ভবনের হলটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৩৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ৩৬ মাস। প্রকল্প বাস্তবায়নের ভার দেওয়া হয় শিক্ষা প্রকৌশল দফতরের ওপর। ১৬তলা হলটির ১৫৬টি কক্ষে চারজন করে মোট ৬২৪ জন ছাত্রী থাকতে পারবেন। হলের তৃতীয় থেকে ১৬তলা পর্যন্ত ছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আর নিচতলা ও দোতলায় রয়েছে লাইব্রেরি, ক্যান্টিন, ডাইনিং। এছাড়া প্রতি তলায় সাতটি করে টয়লেট ও আটটি গোসলখানা রয়েছে। এছাড়াও ভবনটিতে চারটি লিফটের ব্যবস্থা রয়েছে। হলটির প্রথম হল প্রভোষ্ট এর দায়িত্ব পালন করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম।

২০০৯ ও ২০১১ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ছাত্রী হল নির্মাণের ঘোষণা আসে। ২০১১ সালেই শুরু হয় ছাত্রী হল প্রকল্পের কাজ। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, ৩/১, লিয়াকত এভিনিউয়ের ২৩ কাঠা জায়গাটির অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে শিক্ষার্থীরা। তারা ওই সময় ছাত্রী হলের ব্যানার টাঙিয়ে জায়গাটি দখলে নেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট জায়গাটিতে ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ ছাত্রী হল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। ওইদিন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বৈঠকে এক হাজার ছাত্রীর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে ২০ তলা ফাউন্ডেশনের দুটি টাওয়ার নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর এ হলটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এর এক বছর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে হলটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়।

এ হল নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম দফায় মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত। দ্বিতীয় মেয়াদ ২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন। তৃতীয় দফায় ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয় মেয়াদ। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। ২০১৯ সালেও কাজ শেষ না হলে ২০২০ সালেও অতিরিক্ত সময়ে কাজ চলতে থাকে। শুরুতে এই হলের নির্মাণ ব্যয় ৩৩ কোটি টাকা ধরা হলেও কাজ শেষ করতে ৩৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান হলটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের সাব অ্যাসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাৎ হোসেন।

যদিও নির্মাণ কাজের শুরু থেকে অনিয়ম হয়ে আসছে হলটিতে। ৩ বছরের কাজ শেষ হয়নি ১০ বছরেও। সরকারী কাজে যেকোনো প্রকল্পের মেয়াদ ২ বারের বেশি বাড়ানোর সুযোগ না থাকলেও, ৫ দফায় কাজের মেয়াদ বৃদ্ধির পরও হলের কাজ সময়মতো শেষ করাতে পারেনি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।

উল্লেখ্য যে, প্রায় ১০ বছর পর নির্মাণ কাজ শেষে উদ্বোধন হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এখনও হলে উঠতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here