“বাংলা ভাষা আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন” “বেঁচে থাকার অক্সিজেন”

0
258

শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোল : ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনের একুশে ফেব্রুয়ারি ছিলো বাঙালী জাতির তাজা রক্তে আল্পনা এঁকে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন। সেদিন বাংলার দামাল ছেলেরা- সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ অসংখ্য বাঙালী জাতি তাদের বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়ে বাংলা ভাষা রক্ষার দাবিতে শত্রুদের মোকাবেলা করেছিলো। নিজেদের জীবন বিষর্জন দিয়ে টিকিয়ে রেখেছিলো আমার বাংলা ভাষা। রাজপথে ঝরেছিলো বাংলার অসংখ্য তাজা প্রাণ। তাইতো বাংলার লেখক আব্দুল গাফফার চৌধূরীর লেখায় আজো কণ্ঠায়িত হচ্ছে বিশে^র কোটি কোটি মানুয়ের গান, “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি”। অসংখ্য ভাষা শহীদের রক্তে রঞ্জিত আমার মায়ের ভাষা বাংলার জয়গান আমাদের রক্তের শিরায় উপ-শিরায় প্রবাহিত হচ্ছে। ভাষার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এমন নজীর বিশে^র ইতিহাসে বিরল। রবিবার দিনব্যাপী দেশের বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে দু’বাংলার মোহনায় দু’দেশের একুশে উদযাপন কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত বাংলা ভাষার মেলায় সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদে কথাগুলি বললেন যশোর-১(শার্শা) আসনের এমপি আলহাজ¦ শেখ আফিল উদ্দিন।

এসময় ভারতের বনগা মহাকুমার একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের নেত্রী আরতী দেবী বলেন, মায়ের ভাষারটানে জীবন দিয়েছেন এমন ইতিহাস বিশে^র ইতিহাসে বিরল। একমাত্র বাঙালী জাতিই পেরেছে বাংলা ভাষার টানে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে বাংলা ভাষার অধিকার সমুন্নত রাখতে। তাইতো প্রতিবছর বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে দু’বাংলার মোহনায় একুশে উদযাপনের অনুষ্ঠানে ছুটে আসি। এদিন দু’বাংলার বাংলা ভাষাপ্রেমীরা যেনো পূণঃজীবন লাভ করি। কম্পিউটারে যেমন রিফ্রেসের প্রয়োজন হয়, তেমনি একুশের এই মিলন মেলায় আমাদের জীবনে নতুন জীবনের সঞ্চার হয়।

কথা হয় বনগাঁ পৌরসভার মেয়র শঙ্কর আঢ্য ডাকু’র সাথে। বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তঘেষা জেলা যশোরের শার্শার এমপি আফিল দা’র চিন্তা-চেতনায় আমরা দীর্ঘ বছর যাবত কেবল মায়ের ভাষা বাংলার খোরাক হিসেবে দু’বাংলার বাংলা ভাষা প্রেমীরা দু’দেশের সীমান্তের মোহনায় একুশে উদযাপন করে থাকি। একই সাথে গেয়ে থাকি সাম্যের গান, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি। হৃদয়ের আবেগ বাংলা ভাষায় বের করি। পাগোলের মতো হয়ে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরি। মনে হয় আমরা একই বৃন্তে দু’টি কুসুম। ভারত-বাংলাদেশ আমরা একই মায়ের গর্ভের দু’ভাই।

কথা হয় ভারতের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার হরিদাসপুর থানার প্রতিমা মুখোপাধ্যয় নামের এক কিশোরীর সাথে। বলে, আমার মা বাংলায় কথা বলে। আমরা বাংলাভাষাতেই কথা বলি। দূর থেকে আমরা যখন মা’কে মা’ মা’ বলে ডাকি, তখন কি-যে এক আবেগ কাজ করে, কতো যে মায়া জড়িত থাকে যা অন্য ভাষায় পাওয়া যায়না।

ভারতের পেট্রাপোল ২১’র মঞ্চে কথা হয় বারসাতের সেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলা জাগরণের নেত্রী প্রমিলা দেবীর সাথে। বলেন, আমি একজন মা। আমার সন্তান যখন আমাকে “মা” বলে ডাকে তখন কি যে তৃপ্তি লাগে, যেনো পৃথিবীর সকল সম্পদকে তুচ্ছ করে সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরি। মনে হয় পৃথিবীর সকল সুখ মা ডাকের মধ্যেই লুকিত রয়েছে। তাইতো ২১’র এই প্রাণ মেলায় দু’বাংলার বাংলাভাষীরা যখন একসাথে শুন্যরেখায় মিলিত হয় তখন তা অনুধাবন করে শতব্যস্ততার মাঝে হলেও ছুটে আসি বাংলা ভাষার টানে। অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করি, আর মনের গহিন থেকে ভাবি, মনে হয় আমার নিজ মায়ের পেটের ভাই আমার মুখের ভাষা বাংলাকে টিকিয়ে রাখতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলো। চোখের কোণে জল আসে আর শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছি। কাঁদি আর গাই, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।

কথা হয় এপারের একুশ উদযাপন কমিটির আহবায়ক শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু’র সাথে। বলেন, আমরা বাংলায় কথা বলি, বাংলায় চলাচল করি। বাংলা আমার মায়ের ভাষা, বাংলাতেই আমরা প্রেম নিবেদন করি। এতো সুন্দরভাবে প্রেম নিবেদন করা আর কোন ভাষাতেই সম্ভব না। তাই, বাংলা আমার ছন্দ্রে ভরা রুপকথার যাদু, বাংলা আমার সুচের ফোঁড়ে নকশি কাঁথার মতো হৃদয়ের অনুভূতি প্রকাশের মধু। সর্ব্বপরি, বাংলা ভাষা আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন, ঁেবচে থাকার অক্সিজেন।

এপার বাংলায় ২১ উদযাপনের প্রথম প্রহরে ভারতের বনগা পৌরসভার সাবেক মেয়র জোছনা আঢ্য বলেন, যখন থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিতো হওয়া শুরু হলো তখন থেকেই প্রতিক্ষণে আমাদের ভারতীয় বাঙালীরা এদিনটির অপেক্ষায় থাকি। কখন একুশে ফেব্রুয়ারি আসবে! কখন আমরা দু’বাংলার বাংলা ভাষা প্রেমীরা একই স্থানে বসে মনের দুটো কথা বাংলায় আদান প্রদাণ করব। অধি
র আগ্রহে থাকা প্রতিটি দিন যেনো আর যায়না। বাংলাভাষার আবেগ প্রকাশ যেনো তারকাটার বেড়া ভেদ করে দু’পার বাংলার বাঙালীদের জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে। মনে হয়, পাখি হদি হইতাম আমি উড়ে উড়ে দু’দেশের বাংলাভাষীদের সাথে মনের ভাব আদান প্রদাণ করতাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here