এপ্রিল থেকে শিল্পাঞ্চলের বাইরের কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ নয়

0
244
এপ্রিল থেকে শিল্পাঞ্চলের বাইরের কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ নয়

খবর৭১ঃ
দেশে পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলের বাইরে শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হলে সেখানে আর গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেবে না সরকার। আগামী ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইকোনমিক জোন), রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), বিসিক শিল্প এলাকা এবং বিভিন্ন জেলায় চিহ্নিত ৬৫টি শিল্প এলাকার বাইরে নতুন করে গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে না বিতরণ কোম্পানিগুলো। সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সিস্টেম লস কমিয়ে আনা এবং সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। বিদ্যুৎ বা গ্যাসের অপচয় যতটুকু কমানো যাবে ততটুকু উত্পাদন করার প্রয়োজন হবে না। অর্থাৎ সম্পদ ও অর্থের অপচয় কমবে।

তিনি বলেন, দেশে বিচ্ছিন্নভবে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। মালিক-উদ্যোক্তারা নিজেদের পছন্দমতো স্থানে মিল-কারখানা তৈরি করেছেন। এর ফলে অনেক কারখানা দূরবর্তী ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়-জমিতে গড়ে উঠেছে। এগুলোতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে দীর্ঘ লাইন স্থাপন করতে হয়। অনেকখানি গ্যাসের অপচয় হয়। এছাড়া শিল্প এলাকার বাইরে বিদ্যুৎ ও গ্যাস চুরি মনিটরিং করা কঠিন। তাই শিল্প-কারখানায় পরিকল্পিত এলাকার বাইরে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জ্বালানি বিভাগের এক সভা সূত্রে জানা যায়, পরিকল্পিত শিল্প অঞ্চল ছাড়া অন্য কোনো স্থানে শিল্প শ্রেণিতে আগামী ২০২১ সালের ৩১ মার্চের পর কোনো গ্যাস-সংযোগ প্রদান করা হবে না। এই সময়ের মধ্যে চলমান আবেদনগুলোর ডিমান্ড নোট নিষ্পন্ন বা সংযোগ প্রদানের সব কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার অধীন সব গ্যাস বিতরণ কোম্পানি নিজেদের আওতাধীন এলাকায় ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করবে এবং স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের সব স্থানীয় সংগঠনকে জানাতে হবে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পরিকল্পিত এলাকায় শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হলে গ্যাস-বিদ্যুতের অপচয় কমবে। চুরি বন্ধ করা যাবে। আর কৃষিজমির অপচয়ও রোধ করা যাবে। তবে শিল্প এলাকার বাইরে বর্তমানে যে শিল্প-কারখানা রয়েছে সেগুলোতে গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।

এদিকে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ এবং সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা জরুরি বলে মনে করছে এ খাতের নেতৃস্থানীয় সংস্থা পেট্রোবাংলা এবং পিডিবি।

সংস্থা দুটির একাধিক কর্মকর্তা সভার বরাত দিয়ে জানান, সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলোকে দুই মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শতভাগ গ্রাহককে তিন বছরের মধ্যে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হবে। তবে কোম্পানিগুলোর একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুই মাস পার হয়ে গেলেও সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং অবৈধ স্থাপনা এখনো অপসারণ করা যায়নি। আর জ্বালানিসচিব জানিয়েছেন, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে কোম্পানিগুলোকে চলতি ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

সরকারের বিদ্যুৎ খাত মহাপরিকল্পনায় ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন উৎপাদন ও সঞ্চালন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে নির্ধারিত স্থানের বাইরে শিল্প-কারখানা স্থাপন নিরুত্সাহিত করার পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলে ক্যাপটিভ পাওয়ারও বন্ধ করা হচ্ছে। এতে বিদ্যুতের সার্বিক দাম ও শিল্প উত্পাদনের গড় ব্যয় কমানো যাবে বলে আশা করছেন নীতিনির্ধারকরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here