ঘাতক চালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না

0
375

খবর৭১ঃরাজধানীর প্রগতি সরণিতে চাপা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরীকে হত্যাকারী সুপ্রভাত বাসচালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না।

ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, হালকা যান চালনোর লাইসেন্স নিয়ে তিনি বাসের মতো ভারী যান চালাচ্ছিলেন।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রবেশমুখে আসেন মেয়র আতিকুল। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও বিইউপির উপাচার্য মেজর জেনারেল এমদাদ-উল বারী।

বিস্ময় প্রকাশ করে মেয়র বলেন, হালকা যানের লাইসেন্স নিয়ে ভারী যান চালাচ্ছিলেন ওই চালক। এটি কীভাবে সম্ভব! আইন অনুসারে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সুপ্রভাত পরিবহনের সব বাসের সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির রুট পারমিট।

এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ফের রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেট, প্রগতি সরণি, রামপুরা, ধানমণ্ডি, উত্তরা ও রায়সাহেব বাজারে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আওয়াজ তোলেন। এতে এসব এলাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসসহ (বিইউপি) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হন। আবরার ছিলেন বিইউপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী।

এ সময় ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম এসে শিক্ষার্থীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান করে বলেন, আমি আপনাদের সব দাবির সঙ্গে একমত, আমিও ন্যায়বিচার চাই। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। এখানে একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ হবে। আপনারা আমার সঙ্গে থাকেন। আপনাদের সব দাবি বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, আমি আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি, আমি আপনাদের প্রতিনিধি। তখন শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া বলে চিৎকার করে ওঠেন।

এর পর আন্দোলন স্থগিত করতে অনুরোধ করা হলে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ঘুম পাড়ানির মাসিপিসির গল্প শুনতে চাই না। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। মেয়রের সঙ্গে ছিলেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

এদিকে রায়সাহেব বাজার মোড়ের বিক্ষোভ নিয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ডিউটি অফিসার এসআই খালিদ বলেন, সেখানে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।

এ ছাড়া ফার্মগেট এলাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেন।

এ বিষয়ে তেজগাঁও থানার এএসআই রানা মিয়া বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। এতে সড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়, পরে পুলিশ গিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়।

বুধবার দলে দলে শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে এসে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, আবরার হত্যার বিচার চাই,’ ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর নর্দা এলাকায় বিইউপির শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীকে চাপা দিয়ে হত্যা করে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস। শিক্ষার্থীরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার এসআই মুফিজুর বলেন, দুপুরের দিকে কয়েকশ শিক্ষার্থী শাহবাগ মোড়ে এসে জড়ো হয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। তবে তাদের বিক্ষোভ একেবারে শান্তিপূর্ণ। গাড়ি চলাচল ব্যাহত হলেও আশপাশ দিয়ে দুয়েকটা চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে।

বিইউপির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি), সিদ্ধেশ্বরী কলেজ এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।

উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ আলি হোসেন বলেন, হাউস বিল্ডিং এলাকায় মাইলস্টোন কলেজ ও উত্তর ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। এতে যান চলাচল ব্যাহত হলেও সড়কের একপাশ দিয়ে যান চলছে।

মঙ্গলবার সকালে দুর্ঘটনার পরও মেয়র আতিকুল ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালায় এবং বুধবার আবার অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিয়ে রাস্তা ছেড়ে দেন।

ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুরও মঙ্গলবার নর্দায় গিয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।

সহপাঠীরা জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ক্লাস ধরার জন্য আবরার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে উঠতে বসুন্ধরা গেটে গিয়েছিলেন। সাড়ে ৭টার দিকে তিনি যখন রাস্তা পার হচ্ছিলেন, সুপ্রভাত পরিবহনের উত্তরাগামী একটি বাস তাকে চাপা দেয়।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসটির নিবন্ধন সাময়িকভাবে বাতিল করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here