খবর ৭১ঃ কোনো বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবি করে আসছে বিএনপি। দলের প্রধানের চিকিৎসার জন্য যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আপত্তি জানিয়েছিল দলটি সেখানেই তাঁর চিকিৎসার জন্য সুপারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষ মেডিকেল বোর্ড।
বিএসএমএমইউ’র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তির সুপারিশ করেছে তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। এই সুপারিশসহ খালেদা জিয়ার প্রেসক্রিপশন এরই মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েও দেয়া হয়েছে।’
রবিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খালেদা জিয়ার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
আবদুল্লাহ আল হারুন আরও জানান, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখে চিকিৎসা করানোর জন্য অগ্রাধিকারের পরামর্শ দিয়েছেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। বর্তমানে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। নতুন করে কোনো রোগে তিনি আক্রান্ত হননি। খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেই তাঁর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন বোর্ডের সদস্যরা। খালেদা জিয়ার আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। তাঁর সব ধরনের চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘পূর্বে যে সমস্ত রোগ খালেদা জিয়ার ছিল, সেই রোগগুলোই পেয়েছেন। আর উনার শারীরিক অবস্থা এ মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ নয় এবং উনারা (মেডিকেল বোর্ড) উনাকে আরও সুচিকিৎসার জন্য অন্য একটা হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য অ্যাডভাইস করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কেই রেফারেল হসপিটাল হিসেবে উনারা সর্বোচ্চ পর্যায়ের বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন।’ এছাড়া খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে হৃদযন্ত্র, রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের কোনও সমস্যা পাওয়া যায়নি বলেও জানান বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের পরিচালক।
এর আগে রবিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল জলিল চৌধুীরা জানান, ‘খালো জিয়ার শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে সমস্যা দেখা দিয়েছে। হাত-পা কাঁপে। তাকে কারাগারে রেখে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব না। হাসপাতালে নিয়ে তাকে চিকিৎসা দিতে হবে।’
শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, রবিবার (আজ) চিকিৎসকেরা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার জন্য ব্যবস্থাপত্র দেবেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর কারাগারের ভেতরে স্থাপিত বিশেষ আদালত হুইল চেয়ারে হাজির করা হয় বিএনপি প্রধানকে। এসময় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। আমার পা ফুলে গেছে। বসে থাকলে আমার পা ফুলে যাবে। ডাক্তার বলেছে, পা ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। এখানে আমি আদালতে বারবার আসতে পারবো না। আপনাদের যা মনে চায়, যতদিন ইচ্ছা সাজা দিয়ে দিন।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এ হাতটা ইয়ে (প্যারালাইজড) হয়ে গেছে, ডান পা বাঁকাতে পারি না। আমি খুবই অসুস্থ। ওরা (আদালত) যা খুশি তাই করুক।’
এরপর গত ৯ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠক করে মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দ্রুত বিশেষায়িত হাসপাতালে করার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দাবি জানায় দলটি।
এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএনপি নেতাদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন- খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিশেষ মেডিকেল বোর্ড বসবে। সেখানে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠন করা হয় পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। বোর্ডের প্রধান করা হয় বিএসএমএমইউ’র ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল জলিল চৌধুরীকে।
তবে গঠিত এই মেডিকেল বোর্ডে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের রাখা হয়নি। ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্ত না করা সরকারের অশুভ পরিকল্পনারই ইঙ্গিতবাহী বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।