উদ্বোধনের আগে দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু সংযোগ সড়কে ধস

0
583

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট ঃ লালমনিরহাট-রংপুর বিভাগের মানুষের স্বপ্নের দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু উদ্বোধনের আগেই সংযোগ সড়কে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ এলজিইডি বিভাগের, এক শ্রেনীর দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর সহায়তায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি দায়সারা ভাবে কাজ করার কারনে সংযোগ সড়কের বিশাল অংশ ধ্বসে যেতে বসেছে। নদী পাড়ের মানুষের অভিযোগ সেতু এবং সংযোগ সড়ক নির্মানে ব্যাপক অনিয়ম করে সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ অপচয় করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী একাধিকবার প্রতিবাদ করেও কোন প্রতীকার পাননি। বরং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীরা অনিয়ম কে নিয়ম হিসেবে জায়েজ করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নি¤œমানের কাজকে বৈধতা দেয়ার জন্য সড়ক নির্মানে তিন দফায় মোট ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। তবুও উদ্বোধনের আগেই ধ্বসে যেতে শুরু করেছে সংযোগ সড়কটি। যদিও লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস,এম জাকিউর রহমান দাবী করেছেন সম্প্রতি বন্যায় তিস্তা দ্বিতীয় সড়ক সেতুর কিছু অংশ ধ্বসে গেছে। বালুর বস্তা ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আপাতত ভাঙ্গন ঠেকানো গেছে। তবে বড় ধরনের বন্যা হলে কি হবে, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে প্রকাশ, রংপুর-লালমনিরহাট জেলার মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে তিস্তা নদীর ওপর ৮৫০ মিটার দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর নির্মাণকাজ ২০১২ সালে ১২ এপ্রিল লালমনিরহাট কালেক্টরেট মাঠের জনসভা থেকে উদ্বোধন ঘোষনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লালমনিরহাটের চারটি উপজেলাসহ বৃহত্তর রংপুরের প্রায় ৫০ লাখ মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল কাকিনা-মহিপুর দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু। ২০১৪ সালের ৩১ জুন নির্মান কাজ শেষ করার প্রতিশ্রæতি দিলেও দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর সেতুর নির্মান কাজ শেষ করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কন্সট্রাকশন। এরই মধ্যে সেতুর কাজ বুঝে নিয়েছেন সরকারী বাস্তবায়নকারী বিভাগ এলজিইডি।
জানা গেছে, ১২৩ কোটি ৮৬লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুটি নির্মিত হয়। একই অর্থে সেতুটি রক্ষার জন্য উভয় পাশে ১৩০০ মিটার নদী শাসন বাঁধ নির্মান করা হয়েছে। সেতুর সাথে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের কাকিনা থেকে সেতু পর্যন্ত ৫.২৮০ কিলোমিটার সড়ক নির্মানে দুইটি প্যাকেজে ৪ কোটি ৪৬ লাখ এবং এ সড়কে ২টি ব্রীজ ও তিনটি কালভার্ট নির্মানে ৩টি প্যাকেজে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয় হয়। সেতু থেকে রংপুরের অংশে ৫৬৩ মিটার সড়ক নির্মানে ব্যয় হয় এক কোটি ৪২ লাখ টাকা। এ সেতু বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর। আর এ কাজের অগ্রগতি মনিটরিং করা হয় লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে। ২০১৪ সালের ৩১ জুন নির্মান কাজ শেষ করার আশ্বাস দেয়া হয়ে ছিল। কিন্তু সময়মত কাজ করতে পারেনি। ফলে আবারো দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর সেতুর নির্মান কাজ সম্পন্ন করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কন্সট্রাকশন। এরই মধ্যে চলতি বছর জুন মাসে সেতুর কাজ এলজিইডি বিভাগ কে বুঝে দিয়েছেন বাস্তবায়নকারী সংস্থা এলজিইডি বিভাগকে ।
স্থানীয় লোকজন জানান, ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কে দুই ফিট এটেল মাটি দেয়ার কথা থাকলেও শুধু বালুর উপর খোয়া দিয়ে দায়সাড়া কাজ করায় সামান্য বৃষ্টি হলেই ধ্বসে যাচ্ছে সড়ক। ব্যবহৃত খোয়ার গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সুফল পাননি স্থানীয়রা। ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মানেও বিস্তর অনিয়ম থাকলেও টাকার জোরে স্থানীয় প্রকৌশলীরা সব কিছু বৈধ করে নিয়েছেন বলে এলাকাবাসীরা জানান। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এক মাস আগে ব্রীজটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই জনগনের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এটি দিনক্ষন ঠিক হলেই প্রধানমন্ত্রী আনুষ্টানিক উদ্বোধনের কথা রযেছে বলে জানা গেছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কন্সট্রাকশন এর ম্যানেজার প্রবীর কুমার বিশ্বাস নি¤œমানের কাজ করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা সেতুর কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে বূঝিয়ে দিযেছে। সেতুটির দুধারে ৬২ মিটার করে মোট ১২৪ মিটার সংযোগ সড়কের কাজ করেছি। বাকী কাজ অন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান করেছে। এদিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে লালমনিরহাট এলজিইডি’র দপ্তর । বিভিন্ন সড়ক, ব্রীজ ও সংস্কার কাজে ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে কতিপয় প্রকৌশলী। কোথায় সামান্য কাজ দেখিয়ে পুরো টাকা লুট, কোথাও ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজস করে, নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার আবার কোথাও বা পছন্দের ঠিকাদারদের সুযোগ করিয়ে দিয়ে মোটা অংকের পার্সেন্টেস গ্রহন। বিশেষ করে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বিলুপ্ত ছিটমহলসহ লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় এলজিইডির তত্বাবধানে রাস্তা, ঘাট, ব্রীজ কালভাটসহ সরকারের উন্নয়ন মূলক বিভিন্ন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও এ যেন দেখার কেউ নেই।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here