গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পেট্রোলের আগুনে দুই বোনের মৃত্যুর ৫ বছর পার হলেও পাষন্ড স্বামীকে ধরতে পারেনি পুলিশ

0
253

এম শিমুল খান, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে টুঙ্গিপাড়ায় পেট্রোলের আগুনে দুই বোনের মৃত্যু ও ঝলসে যাওয়া অপর বোন মামলায় দীর্ঘ ৫ বছরেও মামলার প্রধান আসামী পাষন্ড স্বামীকে ধরতে পারেনি পুলিশ। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে ছিল ২০১৪ সালের ২৮ মার্চ গভীর রাতে টুঙ্গিপাড়া পাকুড়তিয়া গ্রামে। এ ছাড়া আদালতে বার বার নারাজি দেওয়া সত্বেও মামলার প্রধান আসামী ছাড়া বাকী আসামীরা চার্জসিট থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে।
মামলার বিবরনে জানা যায়, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া পাকুড়তিয়া গ্রামের আলতাব মোল্লার মেয়ে কুলসুমের (১৮) সাথে ফরিদপুর জেলার মৃত: সাত্তার মোল্লার ছেলে লুৎফার মোল্লা ওরফে মান্দারের সাথে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে তারা নিজেরা বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে এক পর্যায়ে স্ত্রী কুলসুম স্বামীকে ডিভোর্স দেয়। এতে স্বামী মান্দার মোল্লা স্ত্রীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের ভিতর পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনার দিন রাতে কুলসুম টুঙ্গিপাড়ায় বাবার বাড়ীতে ছোট বোন স্বর্ণা (৮) ও চাচাতো বোন সাথী (১২) সহ ৩ বোন একই বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল। পাষন্ড স্বামী মান্দার মোল্লা ও তার সহযোগীদের সাথে নিয়ে ওই দিন গভীর রাতে ঘরের ভিতর পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। স্বামী মান্দার মোল্লার পেট্রোলের আগুনে স্ত্রী কুলসুম ও তার ছোট বোন স্বর্না মৃত্যুবরণ করে। এ সময় চাচাত বোন সাথী ঝলসে গিয়ে গুরুতর দগ্ধ হয়। মান্দার মোল্লার সহযোগীরা হলেন ফরিদপুর জেলার সালথা থানার চন্ডীবর্দী গ্রামের মনু শেখের ছেলে জামাল, সাত্তার মিয়ার ছেলে তারা মিয়া, মৃত: সাত্তার মোল্লার ছেলে নুর মোহাম্মদ মোল্লা ও ফারুক মোল্লা। এছাড়াও গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া থানার পাকুড়তিয়া গ্রামের কেরামত কাজীর ছেলে রুবেল কাজী, ছোবান শেখের ছেলে কবির শেখ, কামরুল শেখের ছেলে সুমন শেখ ও তারাইল গ্রামের সুবল কর্মকারের ছেলে দেবদাস কর্মকার।
এ ব্যাপারে মো: আলতাব মোল্লা কন্যা হত্যার বিচারের দাবিতে টুঙ্গিপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-০৬।
উক্ত মামলায় এস আই মো: ইকরাম হোসেন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন। তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামী মো: শুকুর আলী সরদার, অসীম বিশ্বাস, ফারুক মোল্লা ও নুর মোহাম্মদ মোল্লাকে গ্রেফতার করে। এদের কাছ থেকে প্রধান আসামী লুৎফার মোল্লা ওরফে মান্দারের মোবাইল উদ্ধার করে। তদন্তকালে মোবাইল কল লিষ্ট যাচাই কালে প্রধান আসামী মান্দার মোল্লার সাথে ধৃত আসামীদের কথোপকথন হয়েছে। অথচ তিনি কর্মকর্তা ধৃত আসামীদের জবানবন্দী রেকর্ড করার কোন ব্যবস্থা করেন নাই, তাদের মামলার কোন স্বাক্ষীও করেন নাই। এমনকি পেট্রোলের আগুনে ঝলসে বেঁচে যাওয়া অপর বোন সাথীর কোন জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়নি।
তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার সঠিক তদন্ত না করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট স্বাক্ষী প্রমান থাকা সত্বেও তাদেরকে বাদ দিয়ে শুধু মাত্র লুৎফর মোল্লা ওরফে মান্দারের বিরুদ্ধে চার্জ সিট দাখিল করেন। এতে অত্র মামলার এজাহারকারী ক্ষুব্ধ হয়ে নারাজী দাখিল করলে মামলাটি পূনরায় সিআইডিতে প্রেরিত হয়। সিআইডির প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ইফতেকার আলম আসামী জামাল এবং রুবেলকে গ্রেফতার করেন। তদন্তে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আসামী রুবেল কাজীর বাড়ীতে প্রধান আসামী মান্দারসহ অন্যান্যদের সহিত বৈঠক করার কথা স্বীকার করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা দীপক বাবু তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পরে মামলার আসামীদের সাথে অবৈধ যোগাযোগের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা উৎকোচের বিনিময়ে হত্যা কান্ডের সহিত জড়িত আসামীদের বাদ দিয়ে পূর্বের ন্যায় একই রকমের চার্জ সিট দাখিল করে। এজাহারকারী ক্ষুব্ধ হয়ে নারাজী দাখিল করলে মামলাটি পূনরায় পিবিআইতে প্রেরিত হয়। পিবিআইতেও একই রকম চার্জ সিট দাখিল করায় এজাহারকারী পূনরায় নারাজী দাখিল করে উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এসপি সমমর্যাদা সম্পন্ন যে কোন আইন শৃঙ্খলা এজেন্সি দ্বারা পূন: তদন্তের আবেদন করেন।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here