আর কিছু বলবো না, মেরে ফেলছে: আঁখির বোন

0
89

খবর৭১ঃ
রাজধানীর গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণার শিকার মাহবুবা রহমান আঁখিও মারা গেছেন।

রোববার দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আঁখির চাচাতো ভাই শাখাওয়াত হোসেন শামীম। পরে দুপুর সোয়া ২টার দিকে আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমনও এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

গত বুধবার (১৪ জুন) সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণার শিকার হন আঁখি। এ সময় তিনি মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়েন। তার আগে গত ৯ জুন দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে প্রসব ব্যথা ওঠায় আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু হাসপাতালের দ্বি-চারিতায় তার সন্তানের মৃত্যু হয়।

এদিকে আঁখির মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন স্বজনরা। কেউ করছেন আহাজারি, কেউবা বাকরুদ্ধ। শোকে পাথর হয়ে গেছেন সহপাঠী ও বন্ধুরাও। মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুর খবরে হাসপাতালজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন আঁখির বোন খালেদা আকতার জুঁই। হাসপাতালের মেঝেতে বসেই করছেন আহাজারি। তিনি বলছেন, ‘মেরে ফেলছে, আমার বোনকে মেরে ফেলছে।’

জুঁই আরও বলেন, ‘আর কিছু বলবো না, মেরে ফেলছে।’

মেঝেতে বসে আঁখির ভাই শামীম বলছিলেন, ‘বাবাও লাশ হয়ে ঢাকা থেকে ফিরছিলেন। আঁখিও তাই।’

জানা গেছে, গত তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল বলে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই সন্তান প্রসব সম্ভব বলে তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা।

এ বিষয়ে আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী বলেন, আমার স্ত্রীকে যখন ওটিতে ঢোকানো হয় এবং নরমাল ডেলিভারির জন্য চেষ্টা শুরু করা হয়, তখনও আমি সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে আছেন কি না জানতে চাই। কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরে জানতে পেরেছি ডা. সংযুক্তা সাহা ছিলেন না এবং তারা রোগীর কোনোরকম চেক-আপ ছাড়াই ডেলিভারির কাজ শুরু করে দেন।

এদিকে, এ ঘটনায় বুধবার ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র একটি মামলা দায়ের করেন ইয়াকুব আলী। মামলায় ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা, ডা. মুনা সাহা, ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়।

এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর ১৫ জুন রাতে ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা সাহাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ডা. সংযুক্তা সাহার গ্রেফতার দাবি আঁখির সহপাঠীদের: এদিকে মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় ডা. সংযুক্তা সাহার গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত সহপাঠীরা। একইসঙ্গে সেন্ট্রাল হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করে একদিনের মধ্যে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

আঁখির মৃত্যুর খবরে রোববার বিকেলে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে এসে এমন প্রতিক্রিয়া জানান তারা।

ইডেন কলেজের অধ্যয়নরত মুনিরা আঞ্জুম বলেন, আজ আমার সহপাঠী আঁখি মারা গেল, তখন সবাই তাকে দেখতে আসছে, তার খোঁজ নিচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেন্ট্রাল হাসপাতালের পক্ষ থেকে কেউ আসেনি খোঁজখবরও নেয়নি। এমনকি যার আশ্বাসে আঁখি ঢাকায় এসেছিল, সেই ডা. সংযুক্তা সাহাও একদিন রোগীকে দেখতে আসেনি। আমরা মনে করি, সেন্ট্রাল হাসপাতলে বা ডা. সংযুক্তা কেউই এই হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here