মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর :
সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী ও নীলফামারী-২ আসনের সংসদ মদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, ফেসবুকে টিকটক নয়, জীবনে শিক্ষাটাই আসল, জ্ঞান অর্জন করাটা মুল লক্ষ্য। কিন্তু এখনকার ছাত্র-ছাত্রীরা একটি বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েনা। সম্পূর্ণ লেখাপড়া না করে পাস করা যায় ঠিকই, কিন্তুু তাদের জীবনের পরীক্ষায় ফেল করতে হয়। তাই বেশী করে বই পড়ে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজের পেশার পাশাপাশি দেশ সেবায় এগিয়ে আসতে হবে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর পাইলট বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি উৎসবে গতকাল মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিদ্যালয় ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোখছেদুল মোমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নীলফামারী পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক, সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান প্রমুখ। বর্ণাঢ্য এ আয়োজনে স্কুল জীবনের স্মৃতিচারণ করেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক শিক্ষার্থী ঢাকার মিরপুর আইডিয়াল কলেজের অধ্যাপক ড. জেসমিন আরা বুলি,নীলফামারী জেলা কৃষি দপ্তরের উপ পরিচালক হুমায়রা মন্ডল হিমু ও ডা. মাহেরুখ সাদী হেনা। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজমল হোসেন সরকার, প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান শিক্ষক তৌসিকা খাতুন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সভাপতি আইউব আলী সরকার, সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রাজিব উদ্দিন বাবু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, একটি নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭৫ বছর পূর্ণ হলো। এটা আমাদের জন্য গৌরবের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী শিক্ষার প্রসারে অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। মেয়েরা বিনা বেতনে পড়ছেন ও উপবৃত্তি পাচ্ছেন। তিনি মেয়েদের নিজেদের উপর ভরসা রাখার আহবান জানিয়ে বলেন, অর্ধেক লেখাপড়া শিখে লাখ নেই। ওই লেখাপড়া দিয়ে কি হবে? অনেকে এম এ পাস অফিস সহকারির চাকরি করছেন। তাই মুল শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে হবে। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ কখনো স্কুলে যাননি, কবি নজরুল বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারেননি। কিন্ত তাঁদের বই পড়ে আমরা জ্ঞান অর্জন করছি। বঙ্গবন্ধু জেলখানাতেও বন্দিদশায় প্রচুর বই পড়তেন। আমাদেরও প্রচুর লেখাপড়া করতে হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান নূর সহশিক্ষার উপর জোর দিয়ে বলেন, ছেলে-মেয়ে একসাথে লেখাপড়া করে বেড়ে উঠলে তাঁদের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি অতীত টেনে বলেন, আমার বাবা-মা একসাথে নারী শিক্ষা প্রসারে অনেক কাজ করেছিলেন। ৪৭ এর দেশ বিভাগের পর আমরা নীলফামারীতে আসি। তখন মুসলমান মেয়েরা খুব বেশি লেখাপড়া করতো না। আমার মা একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আর বাবা এমএ পাস হলেও মায়ের অধীনে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বাবার যুক্তি হলো স্কুলের প্রধান শিক্ষক নারী হলে মেয়েদের আস্থার জায়গা তৈরি হবে। এ কারণে মনে করি মেয়েদের অনেক বেশি শিক্ষিত হওয়া দরকার। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করে বলেন, লেখাপড়া শিখে মানুষ হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সাবেক শিক্ষার্থীদেরও (যারা উচু পদে কর্মরত) শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
এর আগে সকালে প্রতিষ্ঠানটির ৭৫ বছর পূর্তিতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে শহর প্রদক্ষিণ করে। পরে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পরিশেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। এতে সঙ্গীত শিল্পী মন্টিসহ স্থানীয় শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।