বাগেরহাটে নারকেল গাছে হোয়াইট ফ্লাই’র আক্রমণ, কমেছে উৎপাদন, মরছে গাছ

0
453

স্টাফ রিপোটার,বাগেরহাট: নারকেল গাছ বাগেরহাট জেলার অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। এ জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়ীতেই কম-বেশি নারকেল গাছ রয়েছে। জেলার চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি এর ওপর ভিত্তি করে জেলায় গড়ে উঠছে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। তবে নানা কারণে বর্তমানে নারকেল গাছের ফলন কমতে শুরু করেছে। তার সাথে নতুন করে শুরু হয়েছে হোয়াইট ফ্লাই (সাদা মাছি) পোকার আক্রমণ। বর্তমানে জেলার প্রায় প্রতিটি নারকেল গাছে হোয়াইট ফ্লাই পোকা আক্রমণ করায় জেলায় নারকেল গাছের ফলন কমেছে ৩০ থেকে ৩৫ এর শতাংশ। শুধু ফলন কমে যাওয়া নয় ২০১৯ সাল থেকে শুরু হওয়া হোয়াইট ফ্লাই পোকার আক্রমণ এখন মারাত্মক আকার ধারন করেছে। এর প্রভাবে মরতে শুরু করেছে নারকেল গাছ। তবে জেলা কৃষি বিভাগ বলছে সংক্রমণ ঠেকাতে জেলার কৃষকদের কীটনাশক প্রয়োগসহ নানা পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। আর কৃষকরা বলছেন, এখনই নারকেল গাছের এ সংক্রমণ ঠেকানো না গেলে ভয়াবহ আকার ধারন করবে।
সরোজমিনে জেলার সদর উপজেলার কাড়াপাড়া, ষাটগম্বুজ, যাত্রাপুর, ফকিরহাট উপজেলা ও কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখাযায়, নারকেল গাছের পাতার ওপর কালো আবরণ পড়েছে। পাতার নিচে রয়েছে তুলার মতো সাদা রঙ্গের পোকা। এই পোকাগুলোই বলা হয় হোয়াইট ফ্লাই বা সাদা মাছি। পোকাগুলো প্রথমে পাতায় ওপর বসে। পরে পাতায় মাকড়সার জালের মতো আবরণ তৈরি করে। প্রতিদিন এর পরিমাণ বাড়তে থাকে। এর ফলে ধীরে ধীরে ওই গাছের পাতা নষ্ট হয়ে গাছ দূর্বল হয়ে পরে। গাছের ফল দেয়ার ক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে গাছে এ পোকার আক্রমণে একটি সময় গাছ মারা যায়।
বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের কাঠিগোমতি এলাকার কৃষক বাসুদেব রায় বলেন, “সাদা সাদা পোকের কারনে, আমাদের নাইরকেল (নারকেল) গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। নাইরকেল গাছের মাথি (মাথা) মরে যাচ্ছে। গাছ মইরে যাচ্ছে। ফলনও কমে যাচ্ছে। আমরা এই পোক চিনিনা। আমার মত গ্রামের সবাইর (সবার) গাছে একই অবস্থা। আমরা এর প্রতিকার চাই”।
জেলার ফকিরহাট উপজেলার নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক ছোট শেখ বলেন, “আমার ঘেরের পাড়ে (মাছের খামার) প্রায় ৫০টির মত নাইরকেল (নারকেল) গাছ রয়েছে। বছরে এই গাছ থেকে আমি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার নাইরকেল (নারকেল) বেচিছি (বিক্রি করেছি)। গত বছর থেকে আমার নাইরকেল গাছের ফলন কুমতি (কমতি) শুরু করিছে। এহন ১০ হাজার টাকারও নাইরকেল বেছতি (বিক্রি) পারতিছি না। গাছের পাতায় সাদা সাদা পোকে ভইরে (ভরে) গেছে। গাছের পাতা কেমন জানি পুইরে (পুড়ে) যাচ্ছে”।
জেলার কচুয়া উপজেলার বাধাল এলাকার বাসিন্দা কৃষক সালাম শেখ বলেন, “একটা সুমা (সময়) ছিলো, আমাদের ঘেরের মাছ ও গাছের নাইরকেল (নারকেল) বেইছে (বিক্রি করে) সংসার চলে যেতো। হাট-বাজারে নাইরকেল বেইছে ব্যাগ ভইরে বাজার করিছি। বাইরের ব্যবসায়ীরা এসে নাইরকেল কিনে নিয়ে গেছে। আগে গাছে কত বড় বড় নাইরকেল হইছে। সেই নাইরকেল এহন আর হয় না। তার উপর গত বছর থেকে দেখতিছি, সাদা সাদা পোকার জন্নি (জন্য) গাছের পাতা শুকোইয়ে (শুকিয়ে) যাচ্ছে, গাছ গুলো মইওে (মরে) যাচ্ছে। এই পোকা আগে দেখিছি পিয়ারা (পেয়ারা) গাছে, কলা গাছে। নাইরকেল গাছে এই পোকা কোনদিন দেখিনেই। এহন আমরা নাইরকেল বেচি না, উল্টো কিনে খাতি (খেতে) হচ্ছে”।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে জেলায় ৩ হাজার ৬১৯ হেক্টর জমিতে নারকেল গাছের আবাদ হয়েছে। এ অর্থ বছরে জেলায় নারকেলের উপাদন হয় ৩০ হাজার ৯৩৬ মেট্রিক টন। তবে পরিমান বলতে না পারলেও বিগত অর্থ বছরের চেয়ে জেলায় নারকেল গাছের আবাদ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমেছে বলে দাবী করছে কৃষি বিভাগ।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে বাগেরহাট জেলায় নারকেল গাছে হোয়াইট ফ্লাই বা সাদা মাছি ব্যাপক ভাবে আক্রমন করেছে। এটি আসলে ২০১৯ সালে দেখা যায়। বর্তমানে এর প্রভাবে জেলায় নারকেলের ফলন ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ^ বিদ্যালয় থেকে একদল বিজ্ঞানী এসে সরেজমিনে বিষয়টি পর্যাবেক্ষণ করেছেন। তারা দেখেছেন প্রায় ৬১টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছে এই পোকা আক্রমণ করে। বিশেষ করে নারকেলের পরে কলা এবং পেয়ারা গাছে এই পোকা অবস্থান করে। আমরা বর্তমানে কৃষকদেরকে “ইমিডা ক্লোরোফিড জাতীয়” ঔষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি। যেহেতু নারকেল গাছ অনেক ল¤॥^া। এ কারনে ফুট পাম্প এর মাধ্যমে স্প্রে করতে হয় এবং সব গাছে একসাথে করতে হয়। আসলে এটি ভালো ভাবে দমন করতে হলে “আইপিএম” (সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা) এর মাধ্যমে দমন করা দরকার”। কিন্তু এই পোকা দমনে “আইপিএম” (সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা) এর সঠিক গাইড লাইন এখন পর্যন্ত হয়নি। “আইপিএম” (সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা) গাইড লাইন হলে এটি কার্যকর ভাবে দমন করা সম্ভব হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here