বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, সিলেট-এ ইলেক্ট্রনিক্স পন্য উৎপাদন করবে র‌্যাংগস

0
880

খবর ৭১: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, সিলেটে ভূমি বরাদ্দের লক্ষ্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং র‌্যাংগস ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেড এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আজ (২৮ ফেব্রুয়ারি, রবিবার) বেলা ১২টায় রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) জনাব হোসনে আরা বেগম এনডিসি এবং র্যাংগস ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেড এর পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জে. একরাম হোসেন উক্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি। চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ র্যাংগস ইলেক্ট্রনিক লিমিটেডকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, সিলেট-এ ৩২ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করলো। তারা এই পার্কে ৮০ মিলিয়ন মার্কিন বিনিয়োগ করবে। এছাড়াও বিনিয়োগে নীতিগত সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি যৌথভাবে কাজ করবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, সিলেটে এখন পর্যন্ত ২০টি প্রতিষ্ঠান মোট ৭৪.০৬ একর ভূমি ও ১৬,৫০০ বর্গফুট স্পেস বরাদ্দ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো শীঘ্রই সেখানে কার্যক্রম শুরু করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। কোম্পনিগুলোর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমরা আশা করছি এখানে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সিলেটের এই পার্ক থেকে ভারতের সেভেন সিস্টার’স এর বাজারে প্রবেশের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকায় দেশি-বিদেশি আরো অনেক কোম্পানি এই পার্কে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। একারণে আমরা পার্কের পাশ্ববর্তী এলাকায় আরো ৬৪০ একর ভূমি অধিগ্রহন করার উদ্যোগ নিচ্ছি। এর মধ্যে ৮৫ একরের প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল কলেজ, সিলেট এমসি কলেজসহ সিলেটে প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের কথা বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অঞ্চলের জন্য একটি হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। তাঁরই ধারাবাহিকতায় তিনি গত ২১ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখ সিলেট হাই-টেক পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে সিলেটবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে সিলেটকে একটি প্রযুক্তি নগরী হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থানের একটি ডিজিটাল ইকোনমিক হাব হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আর আমদানীকারক দেশ থাকতে রাজি নই, আমাদেরকে এখন রাপ্তানীকারক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে। দেশে এখন বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ বিরাজ করছে পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। র্যাংগস ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেড এই পার্কে আগামী তিন বছরের মধ্যে রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার (এসি), হোম এন্ড কিচেন এপ্লায়েন্সেস এবং মোলডিং এর জন্য পৃথক পাঁচটি ফ্যাকটরি স্থাপন করবে। এর ফলে শুধু র্যাংগস ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেডেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৫০০০ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। হাই-টেক পার্কে কাজ করলে তারা ১৪টি প্রনোদনা সুবিধাসহ ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে ১৪৮ ধরনের সেবা পাবে। এর বাইরেও যেকোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আইসিটি বিভাগ সর্বদা পাশে থাকবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, সিলেট হবে একটি ব্যতিক্রমী হাই-টেক পার্ক। এই পার্কের মধ্যেই ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখান থেকে যে দক্ষ জনবল তৈরি হবে তারাই আবার এই পার্কে কাজ করার সুযোগ পাবে। এরফলে ঢাকার বাইরে দক্ষ জনবলের যে সংকট তা দূরীভূত হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) জনাব হোসনে আরা বেগম এনডিসি বলেন, সরকারেরর নিজস্ব অর্থায়নে মোট ৩৩৬ কোটি ৪২ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, সিলেট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকারের অগ্রাধীকার প্রকল্প হওয়ায় সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই হাই-টেক পার্কটি এখন বিনিয়োগের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

র্যাংগস ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব একরাম হোসেন বলেন, র্যাংগস ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড বাংলাদেশে দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ সুনাম ও সফলতার সাথে র্যাংগস, সনি, কেলভিনেটর, ফুজি ইত্যাদি ব্রান্ডের ইলেকট্রনিক্স পণ্য সামগ্রীর ব্যবসা পরিচালনা করছে। র্যাংগস ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড সিলেটে প্রতি বছর দশ লক্ষ রেফ্রিজারেটর, পাঁচ লক্ষ টেলিভিশন, দুই লক্ষ এয়ার কন্ডিশনার (এসি) এবং দেড় লক্ষ হোম এন্ড কিচেন এপ্লায়েনন্সেস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সাথে যুক্ত হতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। আমরা ভবিষ্যতে কনজিউমার ইলেক্ট্রনিক্স-এর আওতাধীন হাই-টেক পণ্য সামগ্রী (যেমনঃ আইওটি, ইউআইডিএস) উৎপাদন করতে চাই। এজন্য আমরা কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, সিলেট প্রকল্পের পরিচালক জনাব ব্যারিস্টার মোঃ গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া জানান যে, প্রকল্পের আওতায় ভূমি উন্নয়ন, প্রশাসনিক ভবন, অভ্যন্তরীন রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। গ্যাস লাইন স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চতকরতে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here