আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে বেড়েছে সুস্থতার হার

0
281
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ জনের মৃত্যু

খবর৭১ঃ এক দিনে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে সুস্থতার হার। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬২টি পরীক্ষাগারে ১৫ হাজার ৫৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ৪৮০ জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। রবিবারের চেয়ে সোমবার ৫২ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। রবিবার ১৫ হাজার ৫৮৫টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিল ৩ হাজার ৫৩১ জন। দেশে বর্তমানে মোট করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৮৬ জন। নমুনা পরীক্ষায় গতকাল শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২২ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

এদিকে সরকারি হিসাবে দেশে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেল। নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা সোমবার দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরে বলেন, গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৩৮ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৫০২ জন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬৭৮ জন। রবিবারের চেয়ে সোমবার ৫৯৪ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪৬ হাজার ৭৫৫ জন। তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৪০ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর একদিনে শনাক্ত বিবেচনায় মৃতের হার ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৬ লাখ ২৭ হাজার ৭১৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ৮ মার্চ, তার ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায় গত ১০ জুন। এরপর ১৮ জুন দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ এবং পাঁচ জন নারী। ২৫ জন হাসপাতালে, ১২ জন বাড়িতে মারা গেছেন। এক জন রোগীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। মৃতদের মধ্যে ১৫ জন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, দুই জন রাজশাহী বিভাগের, দুই জন খুলনা বিভাগের, চার জন বরিশাল বিভাগের, এক জন সিলেট বিভাগের এবং দুই জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা। এই ৩৮ জনের মধ্যে এক জনের বয়স ৮০ বছরের বেশি। তিন জনের বয়স ৭১-৮০ বছরের মধ্যে, ১০ জনের বয়স ৬১-৭০ বছরের মধ্যে, ১৬ জনের বয়স ৫১-৬০ বছরের মধ্যে, তিন জনের বয়স ৪১-৫০ বছরের মধ্যে, এক জনের বয়স ৩১-৪০ বছরের মধ্যে, তিন জনের বয়স ২১-৩০ বছরের মধ্যে এবং এক জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।

গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে আরো ৬১৮ জনকে এবং এ পর্যন্ত আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে ২০ হাজার ৪৩২ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৩৪১ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৭ হাজার ৯৬৫ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ১২ হাজার ৪৬৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৬৬৩ জনকে, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ২৪৬ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১ হাজার ৯৭২ জন, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন থেকে মোট ছাড় পেয়েছেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫০ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৬৩ হাজার ৮৯৬ জন। দেশে কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাত্ক্ষণিকভাবে সেবা দেওয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।

অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) গত ২৪ ঘণ্টায় বিতরণ হয়েছে ৮ হাজার ৬০০টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ২৮ হাজার ২৪৫টি। বিতরণ হয়েছে ২৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮৪০টি। বর্তমানে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৩১টি পিপিই মজুত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৫২টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫৫টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাস চিকিত্সা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩৮৮ জন চিকিত্সক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘণ্টায় আরো পাঁচ জন চিকিত্সক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ারর হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা জনগণকে চিকিত্সাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৬০৯ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ২৫ হাজার ৩২৩ জনকে স্ক্যানিং করা হয়েছে। বুলেটিনে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরলজাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়। ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here