আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাটঃ খুঁটি, সংযোগ, লাইন ও মিটার কোনটাই নেই। তবুও ৪৩ পরিবারের নামে বিদ্যুতের বিল দুই লাখ ১৮ হাজার ৯৯৯টাকা। ভুয়া বিল বাতিল করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ। মঙ্গলবার (১০জুলাই) বিকেলে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষাশ্বহর বাজারে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।
ভুক্তভুগি ও এলাকাবাসী জানান, উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বহর গ্রামের বিদ্যুতহীন ৩৩ পরিবার বিদ্যুতের সংযোগের জন্য গত তিন বছর আগে আবেদন করেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কালীগঞ্জ শাখায়। আবেদনের পর স্থানীয় বিদ্যুতের দালাল সাইফুল ইসলাম প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার প্রতিটি ১২/১৫ হাজার টাকা বুঝে নেন এবং তিন মাসের মধ্যে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তিন বছর তিন মাস অতিবাহিত হলেও খুঁটি, লাইন বা মিটার কোনটাই মিলে নি তাদের ভাগ্যে। এরই মাঝে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বে সরকারী খাতে চলে যায় এবং বিধি মতে পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় তাদের নতুন সংযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। এতেই বিপাকে পড়েন বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা ও দালাল চক্রটি। এ দিকে গ্রাহকদের চাপের মুখে গত বছর ওই গ্রামের ৩৩টি পরিবারের জন্য ৩৩ টি মিটার পাঠান দালাল সাইফুল ইসলাম। খুঁটি বা লাইন না পেয়ে গ্রাহকরা মিটারগুলো বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এরই মাঝে গত জুন মাসে ওই গ্রামের ৪৩টি পরিবারের নামে জনপ্রতি ৫ হাজার ৯৩ টাকা হারে দুই লাখ ১৮ হাজার ৯৯৯ টাকার বিদ্যুৎ বিল পাঠায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো। বিদ্যুৎ বিল দেখে হতভম্ভ পরিবারগুলো বিলের কাগজপত্র নিয়ে কালীগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিস গিয়ে এর সমাধান দাবি করলেও কোন কাজ হয়নি। তাই এসব ভুয়া বিল বাতিল করে দ্রুত লাইন সংযোগ করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।
ওই গ্রামের লুৎফর রহমান ও জসির মিয়া জানান, তিন মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে তার প্রতিবেশী বিদ্যুতের দালাল সাইফুল ইসলাম ১৫ হাজার টাকা নেন। বিদ্যুতের জন্য কেউ কেউ গরু- ছাগল বিক্রি করে দালালকে টাকা দেন। কিন্তু আজ কাল বলে তিন বছর পার হলেও কোন কাজ হয়নি। উপরন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না পেলেও ৫ হাজার ৯৩ টাকার বিদ্যুৎ বিল চলে আসে তাদের নামে। বিল পরিশোধ না করলে মামলায় জড়ানোর আতংকে ভুগছেন তারা।
মহিষাশ্বহর গ্রামের আব্দুল হাই, মতিন, জহুরুল, মজমুল ও বাবুল জানান, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সবাই আবেদন করে ঘুষ দিলেও তারা আবেদন করেননি। অথচ তাদের ১০ জনের নামেও ৫ হাজার ৯৩ টাকা হারে বিদ্যুৎ বিল চলে আসে। ব্যবহার না করেও বিদ্যুতের এ ভুয়া বিল বাতিল করে দ্রুত সংযোগ ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।
ওই এলাকার বিদ্যুতের দালাল সাইফুল ইসলাম জানান, আবেদনকারীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা বিদ্যুৎ অফিসের ঠিকাদার রেজাউলের মাধ্যমে অফিসে দিয়েছেন। তবে সংযোগ না দিতে বিল আসায় তিনিও হতভম্ব হয়েছেন। তারও জানা নেই বিলগুলো কেন পাঠানো হয়েছে বা পরিশোধ না হলে কি হবে এসব পরিবারের।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকো কালীগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী শাহানুর ইসলাম জানান, যদিও বাস্তবে সংযোগ নেই। তবুও এসব গ্রাহকের নামে গত ১৫ সালের জানুয়ারী মাসে কাগজ কলমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেখানোর কারনে তাদের নামে নুন্যতম বিল হিসাব অনুযায়ী বিল পৌছেছে। যেহেতু তারা ব্যবহার করেনি। তাই আবেদন করলে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তাদের এসব বিল মওকুফ করা হতে পারে। তবে এসব গ্রাহক আদিতমারী উপজেলা তথা পল্লী বিদ্যুৎ অ লের আওতায় পড়ায় তাদেরকে নেসকোর সংযোগ দেয়ার কোন নিয়ম নেই বলেও জানান তিনি।
খবর ৭১/ইঃ