মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর)ঃ চৌগাছা-যশোর সড়কের সিংহঝুলী মল্লিকবাড়ি সন্নিকটের সড়কটির উপর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় মহাবিপাকে পড়েছেন পথচারীসহ সব ধরনের যনবাহন। অল্প বৃষ্টিতেই সড়কের বহু অংশ জুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির পানি বের হওয়ার সব গুলো ডোবা নালা পুকুর ভরাট করে ফেলায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। একদিনের বৃষ্টিপাতেই সড়কটি পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে, শুধু তাই না সড়ক সংলগ্ন একটি কবর স্থানও থাকছে পানির নিচে তলিয়ে। বর্ষা মৌসুম শুরু হলে সিংহঝুলীর কারিগরপাড়া ও কলুপাড়ার সকল বাসিন্দা হয়ে পড়ছেন পানিবন্দি। অভাবনীয় দূর্ভোগের কবল থেকে মুক্তি পেতে তারা সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সূত্র জানায়, চৌগাছার উপজেলাবাসির জেলা সদরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে চৌগাছা-যশোর সড়ক। প্রায় ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ এই সড়কটির চরম বেহালদশা। বিশেষ করে চৌগাছা-চুড়ামনকাটি পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়ক বছরের পুরো সময়ই চলাচলের অনুপযোগী থাকছে। এই সড়কটি পিচ ইট খোয়া উঠে সৃষ্টি হয় বড়বড় গর্তের। মাঝে মাধ্যে কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গাচোরা গর্ত পুটিং করে দিলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। গত দুই মাস আগেও সড়কটি মেরামত করা হলেও বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে থেকেই সড়কটি তার পুরোনো চেহায়ায় ফিরতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে গোটা সড়কের দু’একটি অংশ ছাড়া বাকি সড়কটিতে সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। এখনই মেরামত করা না হলে ভরা বর্ষা মৌসুমে সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। এদিকে চৌগাছা উপজেলা সদর হতে ৫ কিলোমিটার দুরাত্বে অবস্থিত সিংহঝুলী ইউনিয়নের মল্লিক বাড়ি। মল্লিক বাড়ি বাসষ্টান্ডের পশ্চিম পাশের সড়কটি বর্ষা শুরুর সাথে সাথে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিপাতে ওই স্থানের সড়কে হাটু পানি জমে গেছে। দিন রাত সারাক্ষনই সড়কটি পানির নিচে তলিয়ে থাকায় যান চলাচলে চরম বেঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। ভোগান্তি কম পোহাতে হচ্ছে না সাধারণ পথচারীদেরও। বৃহস্পতিবার চৌগাছায় কোন বৃষ্টিপাত না হলেও এখনও পর্যন্ত সড়কের উপর জমে আছে পানি। গতকাল সরেজমিন ওই এলাকায় যেয়ে এই দৃশ্য চোখে পড়ে। এ সময় কথা হয় সিংহঝুলী কারিগরপাড়া মহল্লার বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আক্কাচ আলী (৭০) সাথে। তিনি জানান, সিংহঝুলী ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকা অন্য যে কোন এলাকার চেয়ে তুলনা মুলক অনেক নিচু। তাই বছরের বার মাসই আমাদের এলাকার খাল বিল পুকুর ডোবা নালায় পানি পাওয়া যায়। বর্ষা মৌসুম শুরু হলে প্রতিটি এলাকা পানিতে টইটুম্বুর হয়ে যায়। তিনি জানান, সিংহঝুলীর কারিগরপাড়া ও কলুপাড়া মহল্লা ও এর আশপাশে এক সময় অসংখ্য পুকুর ছিল। বর্ষার পানি ওই সব পুকুরে নেমে যাওয়ায় সে সময় কোন সমস্যা দেখা যেত না। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ অনেক পুকুর ভরাট করে সেখানে তৈরী করেছে বসতবাড়ি। এরফলে এই মহল্লা দুটির পানি বের হওয়ার আর কোন জায়গা নেই। তাই অল্প বৃষ্টি হলেও দুই মহল্লার পানি এসে এই সড়কের উপর জমা হচ্ছে। শুধু তাই না টানা বৃষ্টিপাত শুরু হলে যেমন সড়ক তলিয়ে যাচ্ছে অনুরুপ ভাবে দুই মহল্লার মানুষও পনি বন্দি হয়ে পড়ছেন। বর্ষা মৌসুম এলে এক অভাবনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এখানকার মানুষের। সড়ক সংলগ্ন একটি কবরস্থান আছে যা এখনও পানির নিচে তলিয়ে আছে বলে তিনি জানান। এই সড়ক দিয়ে প্রতি দিনই সরকের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধিরা যাতায়াত করলেও কেউ এই সমস্যার সমাধানে কাজ করছেননা বলে তিনি অভিযোগ করেন। সড়কের পাশ দিয়ে ড্রেন নির্মান করে পানি বের করা না হলে সড়কটি যেমন নষ্ট হবে তেমনি দুই মহল্লার মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। তাই অবিলম্বে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে সংশ্লিষ্ঠ সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসি। সূত্র জানায়, সময়ের ব্যবধানে সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছা অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এই উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ তুলা গবেষনা ও বীজ বর্ধন খামার, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গামেন্টস শিল্পের মত শিল্প কলকারখানা, সুবিশাল দুটি কোল্ড ষ্টোরেজ। দেশ সেরা মডেল হাসপাতাল তাও চৌগাছাতে। নানা কারনে রাত দিন ২৪ ঘন্টায় এ জনপদের মানুষ চৌগাছা-যশোর সড়কটি ব্যবহার করেন। জেলা সদরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সড়কটির বেহালদশার ফলে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে সব শ্রেনীর মানুষের। সড়কটির এই বেহালদশার কারনে ব্যবসা বানিজ্যেও মন্দাভাব দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। চৌগাছার সার্বিক উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি পুনঃনির্মানের দাবি করছেন এ জনপদের সর্বস্তরের মানুষ।
খবর ৭১/ইঃ