শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে যৌতুক না পেয়ে নববধূর হাত কেটে নিল কসাই স্বামী

0
371

শেরপুর থেকে আবু হানিফ : প্রেম ভালোবাসা করে বিয়ে করেছিল শেরপুর জেলা সদরের পাকুড়িয়া ইউনিয়নের নিভৃত পল্লীর মেয়ে কুলসুম বেগম ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরের কসাই লিটন মিয়াকে। কুলসুম বেগমের বিয়ের ৯ মাস যেতে না যেতেই কসাই লিটন নববধূ কুলসুম বেগমকে বাবার বাড়ী থেকে এক লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলে। পিতৃহীনা কুলসুম যৌতুকের টাকা এনে দিতে না পারায় পাষন্ড কসাই স্বামী লিটন মিয়া টাকার জন্য কুলসুমকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করতো এবং এক পর্যায়ে তাকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করাতে চায়। এ অনৈতিক প্রস্তাবে কুলসুম রাজী না হওয়ায় ঈদুল ফিতরের তিন দিন আগে ১৩ জুন বিকেলে পাষন্ড কসাই স্বামী লিটন মিয়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুলসুমকে কুপিয়ে প্রথমে তার ডান হাত বিচ্ছিন্ন করে এবং পরে শরীরের বিভিন্নস্থানে কুপিয়ে জখম করে। বেশ কিছুদিন চিকিৎসার পর কুলসুম বেগম কিছুটা সুস্থ হয়ে ৩ জুলাই লিটন মিয়াসহ অপরাপর ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর সদর উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের বাদাতেঘরিয়া গ্রামের মৃত চাঁন মিয়ার মেয়ে কুলসুম বেগম এর সাথে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরের কসাই পাড়া গ্রামের জনৈক কুদরত আলী ছেলে পেশায় কসাই মোঃ লিটন মিয়ার সাথে কুলসুম বেগমের এক আত্মীয়র মাধ্যমে পরিচয়ের এক পর্যায়ে লিটনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে প্রেম ভালোবাসার পর উভয় উভয়কে ভালোবেসে রেজিঃ কাবিন মূলে তারা বিয়ে করে।
এদিকে স্বামী লিটন মিয়া ও স্ত্রী কুলসুম বেগমের দাম্পত্য জীবন শুরুর পর কিছুদিন যেতে না যেতেই যৌতুক লোভী কসাই লিটন মিয়া (২৫) সহ তার ভাই রিপন (৩৫), উজ্জল মিয়া (৪২), নূর ইসলাম (৪৭), শফিকুল ইসলাম (৪০) ও রবি মিয়া (৫০) স্ত্রী কুলসুম বেগমকে তার বাবার বাড়ী থেকে একলাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বেশ কয়েক দফা চাপ প্রয়োগ করে। পিতৃহীনা কুলসুম বেগমের পক্ষে একলক্ষ টাকা যৌতুক এনে দেয়া সম্ভব নয় বলে জানালে তার উপর পাষন্ড কসাই লিটনসহ তার অন্যান্য ভাইয়েরা অমানুষিক নির্যাতক চালায়। চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা নববধূ কুলসুম বেগমের উপর নির্যাতন চালিয়েও ক্ষান্ত থাকেনি ওই পাষন্ডরা। তাদের যৌতুকের দাবী পূরণ করতে না পারায় বিভিন্ন স্থানে থেকে খদ্দের এনে কুলসুমকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করানোর অপচেষ্টা চালায় বলে নির্যাতিতা কুলসুম বেগম জানান। এসব ঘটনায় প্রথমত যৌতুক দাবী প্রত্যাখ্যান এবং দ্বিতীয়ত দেহ ব্যবসায় রাজী না হওয়ায় স্বামী কসাই লিটন মিয়া ঘটনার দিন ১৩ জুন বিকেলে মদ্যপ অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্ত্রী কুলসুম বেগমকে প্রথমে তার ডান হাতটি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে জখম করে। এসময় তার অন্যান্য ভাইয়েরা কুলসুমকে জীবনে শেষ করে দেয়ায় উসকানি দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরে গুরুত্বর আহত অন্তঃসত্ত্বা কুলসুম বেগমকে পাষন্ড স্বামী লিটন মিয়া সহ অপরাপর সহযোগিরা একটি সিএনজিতে তুলে দেয়। পরে তাকে প্রথমে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে এবং সেখান থেকে কুলসুম বেগমকে ঢাকায় নেয়া হয়। চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হলে ৩ জুলাই নির্যাতিতা কুলসুম বেগম পাষন্ড কসাই স্বামী লিটন মিয়াকে প্রধান আসামী করে ও তার অপরাপর ভাইদের আসামী শ্রেণি ভূক্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (২০০৩ সংশোধনী) আইনের ১১ (খ)/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করে। পরে আদালত ওইদিন দুপুরে মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করার জন্য ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে নির্দেশ দেন। এমন লোমহর্ষক ঘটনায় আদালত প্রাঙ্গনে মানুষের মাঝে এক হৃদয় বিদারক ও চা ল্যর সৃষ্টি হয়।
নির্যাতিতা ও মামলার বাদী কুলসুম বেগমের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী আলমগীর কিবরিয়া কামরুল দেশবার্তা বিডি ডট কমকে জানান, যৌতুকের দাবীতে ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে লোমহর্ষক নির্যাতন এবং হাত কেটে নেয়ায় সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিনা খরচে তার মামলার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন। আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি সু-সৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

প্রেরক : মো: আবু হানিফ, শেরপুর জেলা প্রতিনিধি। তারিখ : ০৫-০৭-২০১৮ ইং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here