লাগামছাড়া নিত্যপণ্যের দাম

0
545

খবর৭১: সরকার ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে নানা আশ্বাস দেয়া হলেও রমজানে নিত্যপণ্যের লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন পণ্যের দাম কোনো কারণ ছাড়াই বাড়তে শুরু করেছে।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেছেন, রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেগুলোর দাম বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই।

কারণ ব্যবসায়ীদের কাছে চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণ মজুদ রয়েছে। কেউ বাজার অস্থির করে তোলার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরও বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দু’দিন আগে যে বেগুন কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, বৃহস্পতিবার তা বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। কাঁচামরিচ ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।

শুধু তাই নয়, রামজানকে টার্গেট করে ফল-ফলাদি থেকে শুরু করে শাক-সবজি, পেঁয়াজ, রসুন, মাংস, মুড়িসহ সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভোক্তারা। তারা বলছেন, রমজানে কী এমন হল যে, হঠাৎ করে সবকিছুর দাম বেড়ে গেল। এটা নিঃসন্দেহে অতিরিক্ত মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজি।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্বল বাজার মনিটরিং ব্যবস্থার সুযোগে ব্যবসায়ীরা ছক কষে রমজাননির্ভর পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। সরকারের উচিত এখন থেকেই পুরো বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনা। তা না হলে এ রমজানেও ভোক্তার পকেট কাটা থামবে না।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরান ঢাকার নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার, মালিবাগ ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোলা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা। যা দু’দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।

বেগুন দু’দিন আগে কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, বৃহস্পতিবার বিক্রি হয় ৯০ টাকায়। তবে রাজধানীর নয়াবাজারে এ বেগুন ১০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা।

যা দু’দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০৮ টাকা। যা দু’দিন আগে বিক্রি হয় ১০৫ টাকা। তবে নয়াবাজার ও শান্তিনগর কাঁচাবাজারে ১০৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বেড়েছে খোলা সয়াবিন তেলের দামও। দু’দিন আগে যে তেল প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৮৮ টাকায়। তা বৃহস্পতিবার বিক্রি হয় ৯০ টাকায়। প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। যা দু’দিন আগে ছিল ৩০ টাকা। ৩৫ টাকা দরের শসা বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সুমন বলেন, বাজারে প্রত্যেকটি পণ্যের দাম দু’দিনের ব্যবধানে বেড়ে গেছে। পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম দ্বিগুণ। যার কারণে আমাদের বেশি দামে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

অন্যদিকে রমজানে চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে সব ধরনের মুড়ির দাম। বড় আকারের মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৬০ টাকায়। স্বর্ণা ছোট মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৬০ টাকায়।

বরিশালের হাতে ভাজা মোটা মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা। এদিকে চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ টাকা। বাজারে বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকায়। যা দু’দিন আগে ছিল ৬২ টাকা।

এদিকে রমজানে মাংসের চাহিদাও বেড়ে গেছে। গরু ও খাসির মাংস বেশি দামের কারণে অনেকেই ভিড় করছেন ব্রয়লার মুরগির দোকানে। বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি ব্রয়েলার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। যা দু’দিন আগে ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।

এছাড়া ১৫ দিন আগে থেকেই অস্থির পেঁয়াজ, রসুন ও আদার বাজার। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। যা ১৫ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। যা ওই সময় বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকায়।

রাজধানীর শান্তিনগর কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা সোলাইমান শাওন বলেন, এবার ভেবেছিলাম পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু সেই বরাবরের চিত্রই দেখতে হল। রমজানে প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দামই বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘আজ যে দামে পাচ্ছেন কাল দাম আরও বেড়ে যাবে।’ এ ব্যাপারে সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, কোন পণ্যে কারা দাম বাড়ায় সরকারের উচিত হবে তা চিহ্নিত করা। একই সঙ্গে কোন স্তর থেকে কতটা বাড়ানো হয় তার যৌক্তিক পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

সরকার এখানে কতটা মনিটরিং করছে সেটি বোধগম্য নয়। দাম বাড়ার এ প্রবণতায় দুর্বল বাজার মনিটরিংয়ের কারণে ভোক্তাদের সুফল মিলছে না।

তিনি আরও বলেন, ভোক্তা সাধারণকে মূল্যের নিরাপত্তা দিতে নিত্যপণ্যের মূল্য কারসাজির সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এছাড়া ভোক্তাদেরও অতি উৎসাহী হয়ে এক দিনে ১০ দিনের পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে।

যাতে বাজারে চাহিদার তুলনায় পণ্যের ঘাটতি দেখা না দেয়। কারণ ক্রেতার পণ্য কেনার হিড়িক দেখে বিক্রেতারা এ সুযোগে দাম বাড়িয়ে দেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, রোজার আগেই কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা অধিদফতরের পক্ষ থেকে সারা দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজার মনিটরিং করছি।

ভোক্তার অধিকার রক্ষায় কাউকেই ছাড় দেব না। অনৈতিকভাবে দাম বাড়ালেই ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here