মনু নদীর বাঁধের ৬টি স্থানে ভাঙ্গনে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

0
852

এম এ হামিদ,মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারে মনু নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার প্রতিরক্ষা বাঁধের ৬টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনের মুখে আরও বেশ কয়েকটি স্থান,যেগুলো যে কোনও সময় ভেঙ্গে যেতে পারে। ফলে দু’টি উপজেলা ৪টি ইউনিয়নের শতাধিক ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। পানিবনদি         হ্যে পড়েছেন কয়েক হাজার পরিবার। বন্যা কবলিত মানুষ নদীর উঁচু বাঁধ এ আশ্রয় নিয়েছেন। তালয়ে গেছে ব্যাপক ফসলি জমি ও রাস্তা। এলাকাবাসী বলছেন বারবার প্রশাসনকে জানানোর পর প্রশাসন কোনও প্রকার ব্যবস্থা না নেয়াতে জনগন অনাকাঙ্কিত সমস্যার সন্মুখীন হয়েছেন। প্রশাসন বরাবরের মতই বলছে তাদের গাফিলতি ছিলনা। এখনো সরকারী কোনও সাহায্য বা ত্রাণ পৌঁছায়নি এসমস্ত এলাকায়।
গত কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে মৌলভীবাজারে মনু নদীর পানি বিপদ সীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। এতে করে রবিবার দিনে ও রাতে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের মাদানগর-নিশ্চিন্তপুর নামক স্থানে,টিলাগাঁও ইউনিয়নের মিয়ারপাড়া এলাকায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে অর্ধশত গ্রাম এবং রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের ভোলানগর গ্রাম এলাকায় ও টেংরা ইউনিয়নের উজিরপুর,চাটি কোনাগাঁও,গরুরঘাট এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে আরও অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসময় পানিবন্ধী হয়ে পড়েন কয়েক হাজার পরিবার। বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় আশ্রয় নিয়ে যেটুকু প্রতিরক্ষা বাঁধ অবশিষ্ট আছে সেটুকুতে। হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়াতে অনেকে সেহরী না খেয়ে রোজা রেখেছেন। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে টিলাগাঁও ও শরীফপুর এলাকা। তাছাড়া টেংরা ও কামার চাক ইউনয়ন ছাড়াও প্রত্যেক উপজেলার পাশর্^বর্তী ইউনিয়নগুলোতে পানি ডুকে প্লাবিত হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় লোকজন নিজ থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছে বাড়ি-ঘর ও ফসল রক্ষার জন্য।
অনেকে অভিযোগ করে বলেন মেম্বার চেয়ারম্যানরা শুধু নির্বাচনের সময় আসেন পরে আর জনগণের খুঁজ নেননা।
মিয়ারপাড়া এলাকার ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন স্থানীয় এমপি আব্দুল মতিন,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,পিআইও শিমুল আলীসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনেককেই লিখিত এবং মৌখিকভাবে বললেও তারা এসবে কোনও কর্ণপাত করেননি। এমনকি ঘটনার পরদিন দুপুরের পরেও প্রশাসনের কোনও লোকও দূর্গতদের দেখতে আসেননি। খোদ চেয়ারম্যান আসেননি বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন এলাকার ফসল,গাছ, ফিশারীসহ অনেক কিছুই নষ্ট হয়েছে। ইউপি সদস্য নিজ উদ্যোগে ৪/৫ দিন পূর্ব থেকে কাজ করিছেন বলে জানান এলাকাবাসী। তিনি নিজের তহবিল থেকে ৫ কেজি করে চাল বিতরন করেন বানবাসী মানুষের মধ্যে।
কোনও কোনও এলাকায় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান না যাওয়ার কথাও বলেন কেউ কেউ। লোকজন খুবই অসহায় অবস্থায় বন্যা নিয়নত্রন বাঁধে অবস্থান করছেন। তারা অনেকেই বলেন পানির তোড়ে তাদের অনেকের গরু-বাছুর চলে গেছে,অবশিষ্ট যা আছে তা নিয়ে কোনও মতে আশ্রয় নিয়েছেন। এই মুহুর্তে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহন না করলে অবশিষ্ট বাঁদগুলোও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে জানান অনেকে।
কৃষক আব্দুস শহিদ আক্ষেপ করে বলেন নদীগর্ভে তার সবকিছু বিলীন হয়ে গেছে,সরকার প্রদক্ষেপ না নিলে ছেলে-সন্তান নিয়ে নদীতে ঝাপ দিয়ে মরবেন।
ব্রাক্ষন বাজার-শ্রীমঙ্গল রোডের টিলাগাঁও-কটারকোন অংশ এবং শমসেরনগর বিমানবাহিনী এলাকায় বেশ কিছু এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়াতে পথচারীরা ও যাত্রীরা পড়েছেন দূর্ভোগে।
অভিযুক্ত টিলাগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক বলেন রাতে ছিলাম তবে দিতে আসতে দেরী হয়েছে,তবে তিনির কাছে কোনও ফান্ড না থাকাতে কাজ করাতে পারেননি। তিনি বলেন প্রশাসনের লোকদের জানালেও তারা কোনও প্রদক্ষেপ নেননি।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য চান্দ আলী বলেন তিনি এলাকায় ছিলেননা এটি সঠিক নয়। তিনি রাতে এলাকায় ছিলেন বলেও জানান।
হাজিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্ছু বলেন তার ইউনিয়নে ৬টি স্থান মারাত্মক ঝুকির মধ্যে রয়েছে। শরীফপুর ইউনিয়নের পানি এসে তার ইউনিয়নের ২৬টি গ্রাম প্লাবিত করেছে। উঠতি আউষ ধানের ৯০ শতাংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌ: মো: গোলাম রাব্বী বলেন তাঁর কাছে তাৎক্ষনিক কোনও ফান্ড না থাকাতে সাহায্য করতে পারেননি। জেলা প্রশাসকের অনুমোদন সাপেক্ষে নগদ ২৫ হাজার টাকা ও ৬ মেট্রিকটন চাল বরাদ্ধ পেয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩শত প্যাকেট শুকনো খাবার দূর্গতদের মাঝে বিতরন করা হবে বলেও জানান। বাঁধের ব্যাপারে তিনি বলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে তাঁর কথা হেেয়ছে তারা প্রদক্ষেপ নিচ্ছেন। তাঁর উপর আণীত অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান তালুকদার বলেন বিভিন্ন টিমে ভাগ হয়ে জরিপ চালানো হচ্ছে,পানি কমলেই কাজ করানো শুরু হবে।
এখনো মনু নদীর পানি বিপদ সীমার ১০৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বেলেরতল নামক জায়গায় মনু নদীর বাঁধ খুবই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
এলাকাবাসিসহ সকলের দাবী যথাসয়ে বাঁধ মেরামত করে তাদের জানমাল রক্ষা করে প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা করা হোক। ভোক্ত ভোগিদের দাবী যথাযথ ত্রাণ ও গৃহ নির্মাণের ব্যবস্থা যেন করে সরকার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here