খবর৭১:রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে পরিত্যক্ত পানির পাম্পের পাইপে পড়ে নিহত শিশু জিয়াদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। সে জন্য সরকারের পদস্থ তিন কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান ও পরিচালক (অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজকে এ নোটিশ দেওয়া হয়।
নোটিশ পাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় এ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে নোটিশে বলা হয়েছে।
চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার মো. আবদুল হালিম গত সোমবার এ নোটিশ পাঠিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার এ নোটিশ পাঠানোর কথা সাংবাদিকদের জানান এ আইনজীবী।
হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে ক্ষতিপূরণ হিসেবে জিয়াদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা দিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ও পরিচালককে (অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ) নির্দেশ দেন। গত বছর ৯ অক্টোবর ৪৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এ রায়ে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেন আদালত। এর মধ্যে রেলওয়েকে ১০ লাখ এবং ফায়ার সার্ভিসকে ১০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়।
রায়ের কপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে গত বছর ৭ নভেম্বর আদেশ দেন। তবে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ফায়ার সার্ভিসের আবেদনের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
এ অবস্থায় চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার মো. আবদুল হালিমের পাঠানো নোটিশে বলা হয়, ‘আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেননি। ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে। হাইকোর্ট ৯০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ সময়সীমা গত ১৯ জানুয়ারি শেষ হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনারা (তিন কর্মকর্তা) টাকা পরিশোধ করেননি। তাই আপনাদের নোটিশ পাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় আদালত অবমাননার মামলা করা হবে। ‘
২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলার সময় রেলওয়ে মাঠের পরিত্যক্ত পানির পাম্পের পাইপে পড়ে যায় জিয়াদ। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জিয়াদের মরদেহ উদ্ধারে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়। এরপর কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রায় ২৩ ঘণ্টা পর ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৩টার দিকে জিয়াদের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এ ছাড়া জিয়াদের পাইপে পড়া নিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সন্দেহ প্রকাশ করেন। জিয়াদের বাবাসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টে পৃথক দুটি রিট আবেদন করা হয়। এর মধ্যে জিয়াদের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর রিট আবেদন করেন চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার আবদুল হালিম। এ রিট আবেদনে ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রুল জারি করেছিলেন উচ্চ আদালত। এ রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন।
খবর৭১/জি: