সংস্কার সংক্ষিপ্ত হলে বছরের শেষে নির্বাচন: ড. ইউনূস

0
25

বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হতে পারে সে ব্যাপারে আবারও আভাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানিয়েছেন, জনগণ কী ধরনের সংস্কার চায় সেটার ওপর নির্ভর করবে আগামী নির্বাচনের তারিখ। সংক্ষিপ্ত সংস্কার হলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন হবে। আর বিস্তারিত সংস্কার করলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে ‘আ কনভারসেশন উইথ মুহাম্মদ ইউনূস’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।

নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে এ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, যদি আমরা সংক্ষিপ্ত ধরনের সংস্কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করি, সেক্ষেত্রে এ বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচনের টার্গেট করেছি। কিন্তু যদি জনগণ বলে- না না আমরা বড় পরিসরে সংস্কার চাই, সে ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজন আরও ছয় মাস। সেক্ষেত্রে জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা স্বল্প নাকি বড় ধরনের সংস্কার চান। বড় ধরনের সংস্কার হলে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি, আর ছোট ধরনের সংস্কার হলে এ বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন হবে। সেভাবেই আমরা এগোচ্ছি।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট এলে জনগণ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হবে। কমিশনের যেসব সুপারিশ গ্রহণ করা হবে, শুধু সেগুলোই বাস্তবায়ন করা হবে। সব দল ও নাগরিক সংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই জুলাই চার্টার করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাই চার্টারের ভিত্তিতে নির্বাচনসহ আমাদের কর্মপন্থা শুরু করব। জনগণ কী ধরনের নির্বাচন চায়, সেটা জানা ছাড়া আমরা নির্বাচনে যেতে পারি না।

ভোটার হওয়ার বয়স প্রসঙ্গে তিনি তিনি বলেন, আমাদের ভোটার হওয়ার বয়স ‌১৮। আমি পরামর্শ দিয়েছি, ভোটারের বয়স ১৬ হওয়া উচিত। কারণ, আমাদের তরুণরা খুবই ম্যাচিউরড। ১৬ আর ১৮-র মধ্যে তফাত কী! কে বলেছে, ১৮ বছর যা জানে, তা ১৬ বছর বয়সিরা জানে না।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ফেসবুকের মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানো বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে মেটার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগের সাথে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ধনী ব্যক্তি এবং রাজনীতিবিদরা তার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের লাখ লাখ ডলারের সম্পদ লুট করেছে। তিনি বলেন, এখন এই ব্যক্তিরা তাদের সম্পদ ব্যবহার করে বাংলাদেশকে নিয়ে মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে।

নিক ক্লেগ ইংল্যান্ডের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী। তিনি উল্লেখ করেন-বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই ফেসবুক বাংলাদেশে তথ্য যাচাই এবং ডিজিটাল যাচাই কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুকের তথ্য যাচাই বন্ধের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ এবং ইউরোপের দেশগুলোতে প্রযোজ্য হবে না।

ক্লেগ আরও বলেন, ফেসবুক বাংলাদেশে তাদের ডিজিটাল যাচাই কার্যক্রম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে এবং ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করার পথ খুঁজবে, যা উইকিপিডিয়ার কার্যক্রমের অনুরূপ।

প্রায় ত্রিশ মিনিটের এই বৈঠকে নিক ক্লেগ মেটার পক্ষ থেকে সাইবার সিকিউরিটি আইন প্রণয়নে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদানের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, আমাদের এ বিষয়ে বিপুল অভিজ্ঞতা রয়েছে।

মেটার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন, সম্প্রতি চালু হওয়া কোম্পানির ওপেন সোর্সড লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল এআই, এলআইএএমএ স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে। তিনি আশা প্রকাশ করেন এটি বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হবে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মহাসচিবের সাক্ষাৎ

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের (এআই) মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড আজ বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।

এছাড়া বিশ্বের বৃহৎ শিপিং কোম্পানি এপি মুলার মার্কসের চেয়ারম্যান রবার্ট মায়ারস্ক উগলা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলে বাসসকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি গ্রুপ চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বিন সুলাইম ড. ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

ড. ইউনূস বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে আজ তৃতীয় দিন ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি গত ২১ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের দাভোস শহরে পৌঁছান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here