যতদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে ততদিন ঢাকা কখনই তার ভূখণ্ডকে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ বা সন্ত্রাসবাদের জন্য ব্যবহার করতে দেবে না। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
টেলিফোনে পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী আরও বলেছেন, বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ নিয়ে উদ্বীগ্ন হওয়ার কিছুই নেই। ভারত-বাংলাদেশের স্থায়ী সম্পর্কের সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা নেই। সামনে এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হতে যাচ্ছে।
কামাল বলেন, ৭ জানুয়ারিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার ‘ভয়ে’ নির্বাচন বয়কট করেছে।
আওয়ামী লীগ নির্বাচন পরিচালনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচন বর্জন করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত তাদের আমলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ভারতবিরোধী বিদ্রোহীদের আশ্রয় দিয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর তাদের নির্মূল করেছি। যতদিন আমরা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় আছি, ততদিন বাংলাদেশ থাকবে। ভারত বিরোধী কার্যকলাপ, সন্ত্রাসী বা বিভাজনকারী শক্তিকে কখনোই আমাদের মাটি ব্যবহার করতে দেব না।’
ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে কামাল বলেন, বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্ক খারাপ ও সংখ্যালঘুরা নৃশংসতার সম্মুখীন হয়েছে।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না জানতে চাইলে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘অবশ্যই তা হবে। অতীতে আমরা দেখেছি এমন হয়েছে।’
ভারত-বাংলা সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের বিপদে সবসময়ই বন্ধু ছিল ভারত, তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বিশেষ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় দিল্লি যে ভূমিকা পালন করেছিল আমরা সবসময় তার স্বীকার করেছি।
ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে ‘ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা’ প্রসঙ্গে কামাল বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে অন্য কোনো সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। তাই, সব দেশের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। চীন বিদ্যুৎকেন্দ্র, অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করেছে এবং অর্থনৈতিক ফ্রন্টে আগ্রাসী বিপণনে নিয়োজিত হয়েছে। কিন্তু সঙ্গে সম্পর্কের দিক দিয়ে ভারত আলাদা। এটি ভারত-বাংলা সম্পর্কের ওপর কোন প্রভাব ফেলবে না।’
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শে বিশ্বাস করি। আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যালঘুতে বিশ্বাস করি না। যখনই কোনো নৃশংস ঘটনা ঘটেছে, আমরা দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। হিন্দুরা জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ।’
সামগ্রিক অপরাধের তুলনায় হিন্দুদের বিরুদ্ধে অপরাধের অনুপাত অনেক কম বলে দাবি করে তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, সেসব ঘটনা (হিন্দুদের বিরুদ্ধে অপরাধ) হাইলাইট করা হয়। বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
তিনি বলেন, ‘জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে সেজন্য সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিএনপি কোনোদিনই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বলে আশঙ্কা করছে। দলটি দিন দিন জনসমর্থন হারাচ্ছে।’আওয়ামী লীগ ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশে ক্ষমতায় রয়েছে।