নামকরণ কাগজে কলমে সৈয়দপুরে শহীদদের নামে সড়কের নাম জানে না নতুন প্রজন্ম

0
334

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর :
মহান মুক্তিযুদ্ধে সৈয়দপুরে আত্মদানকারীদের স্মরণে শহরের সড়কগুলো শহীদদের নাম নামকরণ করা হলেও তা স্বনামে পরিচিতি পাচ্ছে না। দু-একটি সড়ক বাদে অধিকাংশ সড়কের নাম জানেন না সর্বসাধারণ। ফলে সড়কগুলোর নামকরণ নাম সর্বস্ব হয়ে ওঠায় শহীদদের মর্যাদা ভুলন্ঠিত হচ্ছে। নামকরণের এই হতদশা পরিবর্তনে পৌরসভার পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি কোন কার্যকর ব্যবস্থা। এমনকি সড়কগুলোর নাম পরিচিত করতে কোন নামফলকও নেই সড়কের কোথাও। এতে করে সড়কগুলো পূর্বের নামে পরিচিত হওয়ায় নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে না সড়কগুলোর আসল নাম।
জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে উর্দুভাষী অধ্যুষিত সৈয়দপুর শহর বধ্যভূমিতে পরিণত হয়। পাক বাহিনী ও তাদের দোসর উর্দুভাষীদের (অবাঙালী) চালানো হত্যাযজ্ঞে শহীদ হন অগণিত মুক্তিকামী বাঙালী। এইসব বীর শহীদদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও শহরের বিশিষ্টজনরা। দেশ স্বাধীন হলে নিহত শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে শহরের মূল সড়কসহ পাড়া-মহল্লার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা শহীদদের নামে নামকরণ করা হয়। এর মধ্যে স্টেশন রোডের নাম শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়ক নামে পরিচিতি পেলেও অন্য সড়কগুলোর নাম আজও অপরিচিতি রয়ে গেছে। পূর্বের কায়েদে মিল্লাত রোডের নাম শহীদ ডা. শামসুল হক সড়ক নামকরণ করা হয়। অথচ এই সড়কটি মাছ বা কাপড়হাটি রোড নামে অধিক পরিচিত। একইভাবে বঙ্গবন্ধু সড়ককে রংপুর রোড, শহীদ তুলশীরাম সড়ককে দিনাজপুর রোড, শহীদ ক্যাপ্টেন মৃধা শামসুল হুদা সড়ককে বিমানবন্দর সড়ক ও শহীদ মোবারক আলী লেনকে আলম লেন, শহীদ জহুরুল হক সড়ককে কামাল রোড ও শহীদ আজিজার রহমান স্ট্রীটকে তুলশীরাম রোড নামে পরিচিতি পাচ্ছে। পাড়া-মহল্লার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোও পরিচিতি পাচ্ছে না শহীদদের নামে।
সরেজিমেন শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সড়কে থাকা অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে পূর্বের নাম শোভা পাচ্ছে। অনেক সাইনবোর্ডে শহীদদের নামের সঙ্গে পূর্বের নাম জুড়ে দেয়া হয়েছে। আবার অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে শহীদদের নামই লেখা হয়নি। অথচ পৌরসভার নথিতে শহীদদের নাম থাকলেও তা রয়ে গেছে কাগজে-কলমে। নাম বদলের এমন নৈরাজ্য বন্ধে পৌরসভার পক্ষ থেকে কখনও নেয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। ফলে স্বাধীনতার ৫০ বছর গত হলেও সড়কগুলো শহীদদের নামে বহুল পরিচিতি পায়নি। সর্বসাধারণের কাছেও অজানা রয়ে যাচ্ছে বীর শহীদদের নাম।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে পৌর পরিষদের সিদ্ধান্তে বীর শহীদদের নামে শহরের ৩০টি সড়কের নামকরণ করা হয়। সে সময় শহরের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে লেখা হয় শহীদদের নাম। এরপর পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি না থাকায় নৈরাজ্য চলছে নামকরণে।
সড়কের নামকরণ নিয়ে কথা হয় মোকছেদ আলী, রায়হান, শামীম ও জয়নুলসহ কয়েকজন রিক্সা চালকের সঙ্গে। তাদের কাছে শহীদদের নামে নামকরণ করা চারটি সড়কের নাম বললে তা চিনতে পারেন না। তবে সড়কগুলোর পূর্বের নাম রংপুর রোড, দিনাজপুর রোড, মাছহাটি রোড ও বিমানবন্দর রোড বললে তা চিনতে পারেন। তারা জানান, শহরে তারা দেড় যুগেরও বেশী সময় ধরে রিক্সা চালান। রিক্সার যাত্রীরা সড়কগুলোর পুরাতন নাম বলে যাতায়াত করেন। তাদের কাছ থেকে শুনে শুনে ওই নাম জেনেছি।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শহীদ সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ৭১ এর স্থানীয় শাখার সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিন বলেন, শহরের সাইনবোর্ডে শহীদদের লেখা হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব পৌর ও উপজেলা প্রশাসনের। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের উদাসিনতা রয়েছে। যারা সাইনবোর্ডে নামকরণের নির্দেশনা মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দেন এই শহীদ পরিবারের সন্তান।
জানতে চাইলে, সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান সড়কে শহীদদের নাম ব্যবহারে নৈরাজ্যের কথা স্বীকার করে বলেন, নামকরণ করা সড়কগুলোর নাম পরিচিতি করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও আরও যারা শহীদ হয়েছেন , তাদের নামেও অন্যান্য সড়কের নামকরণ করা হবে। এ নিয়ে তিনি শহীদ পরিবার ও সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here