শিশুর কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি

0
334

খবর৭১ঃ প্রতি বছর ১০ মার্চ পালিত হয় বিশ্ব কিডনি দিবস। প্রতি বছরই ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ-উদ্দেশ্য নিয়ে সাজানো হয় দিনটির কার্যক্রম। এবারের কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়ের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ‘কিডনির যত্ন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কিডনি সম্পর্কে বেশি বেশি তথ্য জানা (ব্রিজ দ্য নলেজ গ্যাপ টু বেটার কিডনি কেয়ার)’। বিশেষ করে শিশুদের কিডনি রোগ, চিকিৎসা ও যত্ন সম্পর্কে প্রয়োজন বাড়তি সচেতনতা। শিশু মাতৃগর্ভে থাকাকালীন অবস্থায় কিডনি সক্রিয় হয়। যদিও জন্মের পরপর ও শৈশবে কিডনি পূর্ণবয়স্ক মানুষের তুলনায় পরিপক্ক থাকে না, তবু শিশুর স্বাভাবিক গঠনে তা কোনো বাধা সৃষ্টি করে না। তবে যে কোনো গুরুতর অসুখ অথবা ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কারণে শিশুদের কিডনি সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কিডনি আমাদের শরীরে যেসব কাজ করে : রক্তের মধ্যে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বের করা ও প্রয়োজনীয় পদার্থ ধরে রাখা; শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা; বিভিন্ন হরমোন তৈরি করা ও তৈরিতে সাহায্য করা; রক্তের কণিকা তৈরিতে সাহায্য ও শরীরের হাড়কে সুস্থ রাখা ইত্যাদি কাজ করে কিডনি। প্রতিটি কাজই মানব শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কিডনি সুস্থ না থাকলে এসব কাজে বিঘ্ন ঘটে ও শারীরিক বিপর্যয় দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশুদের ঝুঁকি বেশি।

শিশুদের জন্মগত কিছু কিডনির সমস্যা : শিশুর জন্মগত কিডনি রোগ সম্পর্কে আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে শিশুর জন্মের সময় জানা যায়। মূত্রনালি ও মূত্রাশয়ের গঠনগত সমস্যা; মূত্রপথের ভাল্বের কার্যক্রমে বাঁধা; কিডনি থাকা না থাকা; বিভিন্ন আকারে অর্থাৎ ছোট-বড় থাকা; ঠিক জায়গা মতো না থাকা; কিডনি ফোলা থাকা ইত্যাদি সমস্যা সম্পর্কে আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। শিশুর মূত্রনালির সংক্রমণ (ইউটিআই) শিশুদের অন্যতম প্রধান একটি রোগ। অনেক ক্ষেত্রেই এ রোগের সঠিক নির্ণয় ও চিকিৎসা নিয়ে অবহেলা করা হয়। ফলে বার বার সংক্রমণের দরুন শিশুর কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসার অভাবেই শিশুদের কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট হয়। এসব বিষয়ে অভিভাবকদের বেশি সচেতন থাকতে হবে। শিশুদের প্রস্রাবের সংক্রমণ অবহেলা না করে সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণে কিডনির রোগ প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

শিশুর কিডনি রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা পরামর্শ : ঘন ঘন প্রস্রাব করা, প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়া; ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব করা, বিছানায় প্রস্রাব করা (৬ বছরের অধিক বয়সে), প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, প্রস্রাবের সময় তলপেট/কোমর ব্যথা করা, শরীরে পানি আসা/ফুলে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, কিডনিতে পানি জমা হওয়া, কিডনি ছোট-বড় হওয়া, উচ্চরক্তচাপ দেখা দেওয়া, কিডনিতে জম্মগত ত্রুটি থাকা- এসব লক্ষণ দেখা গেলে, পরিবারের কারও কিডনি রোগ থাকলে, শিশু সময়ের আগে জন্মগ্রহণ করলে, জন্মের পর শিশুর ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম হলে দেরি না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। শিশু যদি ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা সিকেডিতে আক্রান্ত হয়, কিডনি পুরোপুরি অক্ষম হয়, ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয় তবে চিন্তার কিছু নেই। দেশেই এখন কিডনি রোগের সুচিকিৎসা সম্ভব। এছাড়া নিয়মিত ফলো-আপ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক চর্চা ইত্যাদির মাধ্যমে দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here