খবর৭১ঃ মিয়ানমারে জান্তা সরকারের ভয়ে নিজের সন্তানদের ত্যাজ্য করে দিচ্ছেন দেশটির শত শত বাবা-মা। যারা বিক্ষোভকারীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাদের সবাইকে আটক করা হবে-গত বছরের নভেম্বরে সামরিক সরকারের এমন ঘোষণার পর থেকেই ত্যাজ্য করার ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত তিন মাস ধরে মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রতিদিন গড়ে ছয় থেকে সাতটি পরিবার তাদের ছেলে, মেয়ে, ভাতিজি-ভাতিজা, ভাগনি, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সম্পর্কছেদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে। ত্যাজ্য সন্তানরা প্রকাশ্যেই জান্তার শাসনের বিরোধিতা করছেন। তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছেন অথবা প্রত্যন্ত অঞ্চলের জঙ্গলে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছেন।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতার দখল নেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু সেনাশাসন মেনে নেয়নি দেশটির গণতন্ত্রপন্থী জনতা। শুরু থেকেই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে তারা। ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত করতে সরকারবিরোধীদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন ও ধরপাকড় চালায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। নভেম্বর মাস বিরোধীদের দমনে আরও কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আন্দোলনে অংশ নেওয়াদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এমনকি বিমান হামলা ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেনাদের এই নারকীয় কর্মকাণ্ড থেকে রক্ষা পেতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদপত্রে প্রত্যেক দিনই সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছেন অভিভাবকরা। রয়টার্স জানিয়েছে, সন্তানদের সঙ্গে অভিভাবকদের সম্পর্কছেদের অন্তত ৫৭০টি বিজ্ঞপ্তি পর্যালোচনা করেছে তারা। দেশটির সাবেক গাড়ি বিক্রয়কর্মী লিন লিন বো বো তাদের একজন এবং তিনিও সামরিক শাসনের বিরোধী সশস্ত্র একটি গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছেন। গত নভেম্বরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দৈনিক দ্য মিররে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে লিন লিন বোর বাবা-মা বলেন, ‘আমরা লিন লিন বো
বোকে ত্যাজ্য ঘোষণা করছি। কারণ সে কখনোই তার বাবা-মায়ের ইচ্ছা শোনেনি।’ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বর্তমানে থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছের একটি শহরে বসবাস করছেন লিন লিন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ২৬ বছর বয়সি এই তরুণ বলেন, তার মা তাকে বলেছিলেন যে, সৈন্যরা বাড়িতে এসে তল্লাশি চালানোর পর তাকে অস্বীকার করেছেন তিনি। কয়েক দিন পর সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তিটি পড়ে তিনি কেঁদেছিলেন বলে জানিয়েছেন।
লিন লিন বলেন, চাপের কারণে পরিবার এটা করতে বাধ্য হয়েছে বলে আমার কমরেড আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু আমি প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছি। রয়টার্স লিনের বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা মন্তব্য জানাতে অস্বীকার করেছেন।