রক্তনালির আঘাত পেলে কী করবেন

0
326

খবর৭১ঃ আমাদের শরীরে ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের রক্তনালি জালের মতো ছড়িয়ে আছে। এরা মূলত দু’ধরনের : ধমনি ও শিরা। ধমনি অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে দেয় (ব্যতিক্রম-ফুসফুসীয় ধমনি) আর শিরা অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত শরীরের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হৃৎপিণ্ড ফিরিয়ে আনে (ব্যতিক্রম-ফুসফুসীয় শিরা)।

বড় বড় ধমনি শরীরের অপেক্ষাকৃত গভীরে বিন্যস্ত থাকে। মানবদেহে শিরার বিন্যাস দু’স্তরে; একটি ত্বকের নিচে ও অপরটি দেহের গভীরে বড় বড় ধমনির সঙ্গে।

যদিও আঘাতের কারণে শরীরের যে কোনো অংশের ধমনি বা শিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বাস্তবতার নিরিখে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বড় বড় ধমনির আঘাত। কেননা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না গেলে এসব আঘাত অল্প সময়ের মধ্যে বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে।

রক্তনালিতে আঘাতের ধরণ ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবুল হাসান মুহম্মদ বাশার।

ধমনিতে আঘাতের রকমফের

দুর্ঘটনায় যখন হাত বা পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তখন চামড়া, হাড়, মাংস, স্নায়ু ইত্যাদির সঙ্গে ওপরে বর্ণিত ধমনিগুলোও আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। আমাদের দেশে এসব আঘাত সংঘটিত হওয়ার প্রক্রিয়াগুলো মোটামুটি এরকম-

সড়ক দুর্ঘটনা

* গাছ বা অন্য কোনো উঁচু জায়গা থেকে নিচে পড়ে যাওয়া যা শিশু বা অল্প বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়

* ভারী যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র নিয়ে কাজ করার সময় দুর্ঘটনা

সহিংসতা

শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য ব্যবহার।

কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিসের জন্য ব্যবহৃত ফিস্টুলায় মোটা সুচের আঘাতজনিত দুর্ঘটনা অথবা জীবাণু সংক্রমণ।

এসবের বাইরে অপারেশন করাতে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত রক্তনালি কেটে ফেলা বা কখনও কখনও ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজের হাত বা পায়ের রক্তনালি কেটে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়।

মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনা বা ভারী যন্ত্রপাতির আঘাতে কখনও কখনও ধমনি ছিঁড়ে গিয়ে এর একটা অংশ স্থানচ্যুত বা বিচ্ছিন্ন হয়। আবার কখনও পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন না হলেও ধমনির দেয়াল থেঁতলে যেতে পারে। তখন ধমনির ওই অংশের ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। আর এসবের অবশ্যম্ভাবী ফল হল আঘাতপ্রাপ্ত ধমনির পরবর্তী অংশে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়া বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া।

ধমনিতে আঘাত বুঝার উপায়

ধমনির ক্ষতিগ্রস্ত স্থান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে বা আঘাতপ্রাপ্ত অংশের আশপাশে জমাট রক্তের চাকা তৈরি হতে পারে।
অবশ্য রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য রক্তনালির ওপর পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে চাপ প্রয়োগ করা বা সম্ভব হলে আঘাতপ্রাপ্ত রক্তনালি সাময়িকভাবে বেঁধে দেয়া যেতে পারে। অন্যথায় রক্তক্ষরণে জীবনহানিও হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ ধমনির আঘাতের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা পরবর্তী প্রতিটি মুহূর্ত মহামূল্যবান।

রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠানোর সময় পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন যেন আঘাতপ্রাপ্ত অংশ আরও ক্ষতিগ্রস্ত না হয় বা সেখানে থেকে নতুন করে রক্তক্ষরণ শুরু না হয়।

অনেক সময় রক্তক্ষরণ বন্ধের জন্য হাত বা পা এত শক্ত করে বাঁধা হয়, যার ফলে পরবর্তী অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এটিও কাম্য নয়।

আঘাতপ্রাপ্ত ধমনি ও শিরার চিকিৎসা

ধমনির আঘাত নিয়ে আসা রোগীদের ক্ষেত্রে ধমনি মেরামতের অপারেশনে যাওয়ার আগে আঘাত ঠিক কোথায় এবং কতখানি মারাÍক- সে সম্পর্কে ধারণা নেয়ার জন্য উপরোল্লিখিত শারীরিক পরীক্ষাগুলো ছাড়াও রক্তনালির ডুপ্লেক্স পরীক্ষার সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

এর ফলে অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় অপারেশন এড়ানো সম্ভব হয়। আঘাতপ্রাপ্ত ধমনির পরবর্তী অংশ জীবিত আছে কিনা- অপারেশনের আগে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়াও জরুরি। যদিও অনুভূতি ও নাড়ানোর ক্ষমতা থাকলে সাধারণভাবে সে অংশকে জীবিত বলে ধরে নেয়া যায়, তারপরও মাংসপেশিতে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের মাধ্যমে এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।

জীবিত ও কর্মক্ষম হাত বা পায়ের ক্ষতিগ্রস্ত ধমনি মেরামতের মাধ্যমে রক্ত সরবরাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়। আবার অনেক সময় ‘ফ্যাসিওটমি’ নামক অপারেশনের মাধ্যমে হাত বা পায়ের ফুলে ওঠা শক্ত অংশের মাংসপেশিগুলোকে আলগা করে দেয়া হয়। এতে মাংসপেশির ভেতরকার চাপ কমে গেলে রক্ত সরবরাহে উন্নতি হয়।

পক্ষান্তরে হাত বা পায়ের যে অংশ জীবিত নেই, সে অংশে রক্ত সরবরাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ধমনি মেরামতের অপারেশন বিধিসম্মত নয়। এতে বরং রোগীর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মৃত মাংসপেশি থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক রক্তে মিশে গিয়ে কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।

আঘাতপ্রাপ্ত শিরার চিকিৎসা ধমনির চেয়ে একটু আলাদা। রক্তক্ষরণ হচ্ছে এমন ছোট শিরা সাধারণত বেঁধে দেয়া হয়। এতে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। মাংসের গভীরে থাকা বড় শিরা বিশেষ করে হাঁটুর পেছনের পপলিটয়াল শিরা সম্ভব হলে মেরামত করা উচিত। অন্যথায় পায়ের নিচের অংশ মারাত্মকভাবে ফুলে যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ ধমনি বন্ধ হয়ে গেলে বা সময়মতো মেরামত করা না গেলে হাত-পা নষ্ট হতে পারে, কিন্তু শিরা বন্ধ হলেও সাধারণত অঙ্গহানি হয় না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here