দেশে ডেঙ্গু রোগের নতুন একটি ধরন শনাক্ত

0
452

খবর৭১ঃ দেশে ডেঙ্গু রোগের নতুন একটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। যার নাম ডেনভি-৩। আর এই ধরনটির মাধ্যমে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ঢাকার রোগীরা। ২০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)।

রোববার (২৯ আগস্ট) বেলা ১১টায় বিসিএসআইআরের আইএফআরডি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ডেঙ্গু ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের তথ্য উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান গবেষক ড. সেলিম খান।

এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ মুন্সি বলেন, দেশে প্রথম এই ধরন শনাক্ত হয় ২০১৭ সালে। ২০১৭ সালের আগে ডেনভি-১, ২-তে আক্রান্ত হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে অনেকের। কিন্তু ডেনভি-৩ এর বিরুদ্ধে এই ক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। যারা আগের দুই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত তারা নতুন করে ডেনভি-৩ আক্রান্ত হলে হেমোরেজ বা সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়েছে। তাই এবার মৃত্যু বেশি।

তিনি বলেন, বিসিএসআইআরের এই সিকোয়েন্সিং ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহায়ক হবে। এবার ডেঙ্গুর ডেনভি-৩ ভ্যারিয়েন্টে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এটা ডেনভি-১,২ এর চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর।

লিখিত বক্তব্যে বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অফিতাব আলী শেখ বলেন, ডেঙ্গুর চারটি সেরাটাইপ যা ডেনভি-১, ডেনভি-২, ডেনভি-৩ এবং ডেনভি-৪ এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এই ভাইরাসের ৪টি সেরাটাইপের মধ্যে ৬৫-৭০ শতাংশ এমিনা এসিড সিকোয়েন্সের মিল আছে। ভাইরাসটি এডিস মশা দ্বারা বাহিত হয় এবং মশার মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমিত হয়। ১৯৬০ সালে পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মশকবাহিত রােগ হলো ডেঙ্গু। বর্তমানে প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন মানুষ এর সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছে। ইতােমধ্যে এ রােগটি বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে বিস্তার লাভ করেছে। বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়।

প্রতিবছর বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যায় এবং এটি বাংলাদেশে সংক্রমিত রােগের মধ্যে অন্যতম। যদিও বাংলাদেশে ১৯৬৪ সালে প্রথম ডেঙ্গু রােগী চিহ্নিত হয়, তবে ২০০০ সালে প্রথমবারের মতাে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশে মহামারি আকার ধারণ করে।

আইইডিসিআরের গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৬ সালের আগে সেরােটাইপ ডেনভি-১ এবং ডেনভি-২ এর মাধ্যমে মহামারি সংঘটিত হয়, তখন পর্যন্ত বাংলাদেশে বাকি ২টি সেরােটাইপ শনাক্ত হয়নি। ২০১৭ সালে ডেনভি-৩ প্রথম শনাক্ত হয় এবং ২০১৮ সালে ডেনভি-৩ সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে এবং ২০১৯ সালে এটি মহামারি আকার ধারণ করে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় এবং আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ২৯ জনের মৃত্যু হয়। যদিও ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ভাইরাসের ১টি মাত্র নমুনার জিনাম সিকোয়েন্স করা হয়, সেখানে সেরােটাইপ-২ শনাক্ত হয়। এবছর এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং এদের মধ্যে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here