রহস্যময় মানসিক রোগ বাইপোলার হাইপোম্যানিক

0
300

খবর৭১ঃ ঘোরতর মানসিক রোগী বাইপোলার ডিসওর্ডার -হাইপোম্যানিকের প্রেজেন্টেশনটা বেশ ইন্টারেস্টিং। যারা বাইপোলার ম্যানিক তারা বেশ ভায়োলেন্ট থাকেন তাদেরকে বাসা বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়, কিন্তু যারা হাইপোম্যানিক (কম তীব্র) তাদের চিকিৎসা বাসা বাড়িতেই সম্ভব।

হাইপোম্যানিক রোগীরা হয় নিজে আসবেন আত্মীয়ের সঙ্গে অথবা আত্মীয়-স্বজন বুঝিয়ে সুজিয়ে বা জোরাজুরি করে নিয়ে আসবেন।

রোগীর বেশভূষা ভালই থাকবে। অনেক সময় অতিরিক্ত সাজগোজও থাকতে পারে। স্মার্ট, ড্রেস আপ, লুকিং থাকতে পারেন ক্ষেত্র বিশেষে। গাঢ় লাল জাতীয় রং এর ছড়াছড়ি থাকে লুকে।

প্রাথমিক কথোপকথনে অসংগতিটা আপনার কাছে (নন -সাইকিয়াট্রিস্ট) খুব একটা ধরা পড়বে না; কিন্তু আপনি যতই তার সঙ্গে গল্প, আলাপ চালিয়ে যাবেন ততই তার লক্ষণগুলো সুন্দরভাবে আপনার নিকট ফুটে উঠবে।

চেম্বারে বসেই তিনি হয়তো বলতে পারেন, ‘স্যার দেখুন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। কিন্তু উনারা আমাকে জোর করে অসুস্থ বা পাগল সাজিয়ে এনেছেন। আচ্ছা স্যার আপনার কি মনে হয় আমি অসুস্থ?’

রোগীর সঙ্গে খুব সাবধানি হয়ে কথাবার্তা চালিয়ে নিতে হয়। আগ্রহ নিয়ে তার সঙ্গে গল্প করতে হয়। তার সব কথা শুনতে হয়। হতে হয় একজন ভালো শ্রোতা। এতে করে ধীরে ধীরে তার মনের অবস্থাটা পরিষ্কারভাবে ভেসে উঠবে।
কথাবার্তায় ছোটখাটো প্রশংসা করলে ভালো হয়, যেমন ‘আপনিতো বেশ স্মার্ট’, ‘বেশ যৌক্তিক, জ্ঞানী’।

তার সঙ্গে তর্ক করা কখনো সমীচীন হবে না। যদিও তিনি অনেক কিছু বলতে পারেন, যা ধর্ম, বিশ্বাস, সংস্কৃতি, জ্ঞান বিজ্ঞান, সামাজিক আচার আচরণের মধ্যে পড়বে না। কিন্তু ধৈর্য সহকারে তার কথাগুলো শুনতে হবে, ঠাণ্ডা থাকতে হবে এবং ঠাণ্ডা রাখতে হবে।

মাঝেমধ্যে বাইপোলার হাইপোম্যানিক পেশেন্টের কথাবার্তা, যুক্তিতর্ক এতোটা চমৎকার হয় যে, যা আপনাকে মোহিত, দ্বিধাগ্রস্ত করে ফেলবে। তাকে, আপনার একজন মহামানব, পীর, আওলিয়া বা দরবেশ মনে হতে পারে, কিংবা মনে হতে পারে নিশ্চিত কোনো দার্শনিক বা বৈজ্ঞানিক।

তিনি হয়তো আইনস্টাইনের কোন থিওরির ফলেসি গড়গড় করে বলতে থাকবেন, কিংবা স্যার আইজ্যাক নিউটনের তৃতীয় সূত্রের ফলেসি নিয়ে আলাপ জমিয়ে আপনাকে প্যাঁচে ফেলে দিতে পারেন। অথবা তিনি এও বলতে পারেন, তার সঙ্গে জ্বীন, পরী, আজরাইল এর সঙ্গে রোজ আলাপ হয়, তারাই তাকে এসব জ্ঞান বাতলে দেন। তারা তাকে গায়েবি ক্ষমতা প্রদান করে দিয়ে যান রোজ রাতে।

তিনি বলতে পারেন, ‘তার রয়েছে ঐশ্বরিক একটা শক্তি যা দিয়ে তিনি পার্থিব সব কিছু আগাম বুঝতে পারেন’। এমনও হতে পারে তিনি আপনাকে অবাক করে দিয়ে তার চমৎকার সুললিত কন্ঠে একটি রোমান্টিক গান বা স্বরচিত কবিতা পরিবেশন করে আপনাকে স্তম্ভিত করে দিতে পারেন!

আর কিছু লক্ষণ থাকে যেমন, ঘুম একেবারে কমে যেতে পারে, কেনাকাটা বেড়ে যেতে পারে, ঝুঁকিপূর্ণ চাকরি করতে পারেন, বিপজ্জনক সম্পর্কে জড়াতে পারেন, মারাত্মক অর্থের অপচয় শুরু করে দিতে পারেন, নিজ পরিবারে ব্যয় নির্বাহের ক্ষমতা আদৌ নেই কিন্তু অন্যেকে উজাড় করে সব দিয়ে দেউলিয়া হয়ে যান, তার কথাবার্তা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে অগোছালো হয়ে যেতে পারে। নিজেকে মহামানব, বা ক্ষমতাধর বলেও দাবি করতে পারেন।
যাইহোক আগেই বলেছি, যতদূর সম্ভব তাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। দ্রুত সাইকিয়াট্রিস্ট এর শরণাপন্ন হতে হবে।

একটা কথা আপনাকে মনে রাখতে হবে তার সঙ্গে কখনই তর্ক বা ঝগড়া শুরু করা যাবে না। তার লাইনেই তার সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে হবে। উদ্দেশ্য হবে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে আনা।

সাইকিয়াট্রিস্ট তাকে শান্ত করবেন। তার যুক্তিতর্ক, বক্তব্য সব কিছুই শুনবেন। বিবেচনা করবেন পারিপার্শ্বিক সবকিছু। পারিবারিক ইতিহাস নিবেন। সর্বোপরি টার্গেট হবে তাকে কোনোমত ঔষধ খাবার ব্যাপারে উৎসাহিত করা। নিশ্চিত করবেন রোগী যাতে ঔষধ সেবন করেন।

বাইপোলার মুড ডিসওর্ডার রোগটি অনেক সময় এপিসোডিক আকারে দেখা দিয়ে থাকে। ( বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে, অল্প ক’দিনের জন্যে)।

মুড স্ট্যাবিলাইজার মেডিসিন দিয়ে ব্রেইনের ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার এর মাত্রা একটা ব্যালেন্স পর্যায়ে নিয়ে আসেন সাইকিয়াট্রিস্টরা। অনেক ধরনের মুড স্ট্যাবিলাইজার আবিষ্কৃত হয়েছে।
নিয়মিত ঔষধ খেলে এই বাইপোলার রোগ নিরাময় হয়। ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে বেঁচে যায় একটি পরিবার।

লেখক: ডা. সাঈদ এনাম, (ডিএমসি, বিসিএস)

সাইকিয়াট্রিস্ট, সহকারী অধ্যাপক, সিলেট মেডিকেল কলেজ।

ইন্টারন্যাশনাল ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন

ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েট মেম্বার, রয়েল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্ট ইংল্যান্ড।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here