ঢাকা-দিল্লি যৌথ ঘোষণায় প্রাধান্য আগামীর রূপরেখা

0
186

খবর৭১ঃ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সফরকালে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে একটি যৌথ ঘোষণা বিবৃতির মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। এতে দুই দেশের সম্পর্কের আগামীর রূপরেখা থাকবে। এ ঘোষণা প্রণয়নে এখন ঢাকা ও দিল্লিতে রাত-দিন কাজ চলছে। তার পাশাপাশি সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে ইতোমধ্যে একাধিক অগ্রবর্তী দল ঢাকায় পৌঁছেছে। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করছেন। মোদি সফরকালে যেসব স্থানে যাবেন; ওই স্থানগুলো দুই দেশের প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উদযাপনে যোগ দিতে ২৬ মার্চ ২ দিনের সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আসছেন। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে যোগদানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে। তার মধ্যে ইতোমধ্যে তিনটি চূড়ান্ত হয়েছে। এ তিনটি হলো, সমুদ্রে মৎস্য আহরণের ব্যাপারে সহযোগিতা, পরিবেশগত সুরক্ষায় সহযোগিতা এবং দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা। এছাড়াও, সাংস্কৃতিক সহযোগিতাসহ আরও দুটি এমওইউ সই করার বিষয়ে কাজ চলছে। তার বাইরে ঢাকা ও নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধন করা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে এ ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করবেন। পশ্চিমবঙ্গে বিধান সভার নির্বাচন সামনে থাকায় সেখানকার নির্বাচন কমিশন এভাবে ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধনে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় শুধু বাংলাদেশ অংশে চালানো হবে। শুধু বাংলাদেশ সাইডে চালানোর মাধ্যমে ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন হবে। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের পর এবং কোভিড-১৯ মহামারি কমলে দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত নতুন এই ট্রেন সার্ভিস চলাচল করবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে আছে; যার একটি ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে এবং অপরটি খুলনা ও কলকাতার মধ্যে। এছাড়া, ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রোহনপুর এবং ভারতের সিঙ্গাবাদের মধ্যে মালবাহী ট্রেন সার্ভিস চালু হয়েছে।

মোদির সফরকালে বাংলাদেশ-ভারত স্বাধীনতা সড়কের উদ্বোধন হবে। মুক্তিযুদ্ধকালে এ সড়কে ১৭টি গাড়িবহর নিয়ে মুজিবনগরে এসে অস্থায়ী সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হয়। মুজিবনগর থেকে নদীয়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত গেছে এ সড়ক। সফরকালে আশুগঞ্জে একটি সমাধিসৌধ উদ্বোধন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সৈন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের স্মরণে এ সমাধিসৌধ। এছাড়াও, কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কুটিবাড়িতে ভারতের অর্থায়নে যে সংস্কার কাজ হয়েছে; তারও উদ্বোধন করা হবে। বঙ্গবন্ধুকে গান্ধী শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করার পর তার একটা আনুষ্ঠানিকতা থাকবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর পালন উপলক্ষ্যে ১৮ দেশে যৌথভাবে কর্মসূচি উদযাপন করবে বাংলাদেশ ও ভারত। এ ১৮ দেশের নাম ঘোষণা করা হবে। উদযাপনে কী কী কর্মসূচি থাকবে সেটিও ঘোষণা হবে। এছাড়াও, উদযাপনে আরও নতুন নতুন আইডিয়া ভারত জমা দিচ্ছে। বাংলাদেশ এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। মোদি পাঁচ বছর পর বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এর আগে ২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশ সফর করেন। মোদির সফরের আগে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান গুজরাট সফর করেন। গত বছরের মার্চে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগদানের লক্ষ্যে তার বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল। কিন্তু মহামারির কারণে অনুষ্ঠানটি বাতিল হওয়ায় তখন তার সফরও বাতিল হয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অসামান্য অবদান ছিল। ভারতের অনেক সৈন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল প্রতিবেশী এই দেশ।

চলতি বছর বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কেরও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হবে। এসব কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে সরকারের তরফে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। বিশেষ করে মোদির সফরের পূর্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গান্ধী পদকে ভূষিত করায় ঢাকার তরফে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল জাদুঘরের উদ্বোধন করবেন। যদিও কোনো কোনো গোষ্ঠী সফরের বিরোধিতাও করছে। এ প্রেক্ষাপটে সরকার সফরকালে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার আয়োজন করছে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে যাওয়ার জন্যে মোদি যে হেলিকপ্টার ব্যবহার করবেন; সেগুলো ভারত থেকে আনা হচ্ছে।

বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর বাণিজ্য ক্ষেত্রে সুবিধার ধরন কী হবে তা নিয়ে ‘কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট’ (সেপা) চুক্তির প্রস্তাব করেছে ভারত। বর্তমানে বাংলাদেশ সাফটা চুক্তির আওতায় ভারতের কাছ থেকে বাণিজ্য সুবিধা পেয়ে থাকে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়ন ঘটলে সেই সুবিধার ধরনে কী হবে সে ব্যাপারে একটি যৌথ স্টাডির বিষয় যৌথ ঘোষণায় থাকতে পারে। বাংলাদেশের ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট এবং ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ স্টাডি পরিচালনা করবে। অভিন্ন নদীগুলোর পানির ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুই নেতার নির্দেশনা যৌথ ঘোষণায় থাকতে পারে।

জানতে চাইলে দিল্লি থেকে সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী যুগান্তরকে বলেন, ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছরপূর্তি হবে। ওই সময় বাংলাদেশ কীভাবে উদযাপন করবে সেটিও আলোচনায় উঠতে পারে। একাত্তর সালের সম্পর্কটাকেই সামনে আনা হবে।

মূলত মুজিববর্ষ উদযাপন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের যৌথ উদযাপন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে এ সফর করছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তার সফরসঙ্গী হিসাবে যোগ দেবেন। সফরের প্রথম দিন, ২৬ মার্চ রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। এরপর তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন। একই দিন বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য প্রদান করবেন। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে যৌথভাবে তিনি বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনী পরিদর্শন করবেন। সফরের দ্বিতীয় দিন, ২৭ মার্চ সকালে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ পরিদর্শন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। তাছাড়া, তিনি সাতক্ষীরা এবং গোপালগঞ্জে দুটি মন্দির পরিদর্শন করে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত পরিসরে মতবিনিময় করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ২৭ মার্চ বিকালে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠক ছাড়াও প্রতিনিধি পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হবে। উভয় প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে নিজ নিজ দেশের পক্ষে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে পৃথক দুটি স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করবেন। এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সফরশেষে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৭ মার্চ রাতে দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here