প্রতিশোধ নিতেই ৬ বছর পর দেশে এসে তানভীরকে খুন করে উজ্জল

0
320

মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে অপহরণের পর মুক্তিপণ না পেয়ে স্কুলছাত্র তানভীর হত্যার সাথে জড়িত ঘাতক উজ্জল ও শান্ত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানরন্দি দিয়েছে। গতকাল খড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে আসামীদেরকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তারা আদালতকে ঘটনার বর্ণনা দেয়।ঘাতকদের বর্ণনা অনুযায়ি হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম জানান, ঘটনার শুরু দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর আগে। তানভীরের প্রতিবেশী উজ্জল তাদের বাড়ির পাশে সবজি চাষ করত। সেই জমিতে চাষ করা কলা উজ্জল বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যায়। তৎক্ষণাত তানভীরের বাবা ফারুক মিয়া উজ্জলকে বলে ‘তুই এই কলা চুরি করে নিয়ে এসেছিস’। এই কলা বিক্রির ঘটনা নিয়ে বাজারে সালিশ হয়। ওই সালিশে ভিকটিমের বাবা ফারুক মিয়া অপমান করে উজ্জলের বাবা সৈয়দ আলীকে। যা উজ্জলের মনে দাগ কাটে। সে কখনোই এই অপমানের ঘটনা মেনে নিতে পারেনি। তার মনের কোণে জমতে থাকে ক্রোধ এবং প্রতিশোধের নেশা যা একসময় বিশাল আকার ধারণ করে।এদিকে, সৈয়দ আলী তার ছেলে উজ্জলকে সকল ঝামেলা এড়াতে বিদেশে পাঠিয়ে দেন। যত দিন যেতে থাকে উজ্জলের মনে থাকা ক্রোধ ততই বাড়তে থাকে। তার মনে শুধু একটাই চিন্তা ঘুরপাক খায়, কিভাবে সে তার বাবার অপমানের প্রতিশোধ নিবে। এভাবে কেটে যায় দীর্ঘ ৬ বছর। এরই মধ্যে দেশে ফিরে আসে উজ্জল। আবার মাথাচারা দিয়ে জেগে উঠে তার মনের কোণে জমে থাকা ক্রোধ এবং প্রতিশোধের নেশা।

সে বিভিন্নভাবে ছক কষতে থাকে কিভাবে তার বাবার অপমানের বদলা নেয়া যায়।এরই মাঝে সে নসরতপুর রেলগেইটে একটি মোবাইল টেলিকমের দোকান দেয়। সে পরিকল্পনা করে ফারুক মিয়ার একমাত্র ছেলে তানভীরকে অপহরণ করবে। সাজাতে থাকে তার নীল নকশা। উজ্জল এবং জাহিদ তানভীরকে অপহরণের চেষ্টা করে। এ যাত্রায় বেঁচে যায় ভিকটিম তানভীর। এরই মাঝে উজ্জল আরো বিভিন্ন উপায়ে প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সে কোনোভাবেই তার পরিকল্পনা সফল করতে পারে না। পরবর্তীতে জাহিদের মাধ্যমে নীল নকশার অংশ হয়ে উঠে শান্ত। গত ২৪ জানুয়ারি উজ্জল, জাহিদ এবং শান্ত তানভীরকে হত্যার ছক কষে। শান্ত উজ্জলকে জানায় তানভীরকে ঘরের বাহিরে আনার দায়িত্ব তার। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শান্ত কৌশলে তানভীরকে উজ্জলদের পুকুর পাড়ে ডেকে আনে। পরে পরিকল্পনা মোতাবেক উজ্জল তানভীরের গলায় সুতা দিয়ে ফাঁস দেয়। শান্ত এবং জাহিদ উভয়েই তানভীরের মুখ চেপে ধরে রাখে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ডলে পরে তানভীর। চরিতার্থ হয় তাদের তিন জনের আকাঁ নীল নকশা।পরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মৃত দেহটি পাশের মজা পুকুরে তানভীরের হাত পা বাধা অবস্থায় লুকিয়ে রাখে। তৎক্ষণাত উজ্জল লক্ষ্য করে মৃত দেহটি বার বার পানিতে ভেসে উঠছে। তখন উজ্জল মৃত দেহের পেটে ছুরিকাঘাত করে যাতে মৃত দেহটি ভেসে না উঠে। পরবর্তীতে মৃত দেহটি তারা তিন জন পুকুরে কাদাঁর নিচে মাটি চাপা দিয়ে রাখে। উক্ত স্থানে অনেক কচুরিপানা দিয়ে রাখে যাতে লাশের সন্ধান কেউ না পায়। লাশ গুম করা শেষে উজ্জল এবং জাহিদ তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অপহরণের নাটক সাজায়। জাহিদ তানভীরের ব্যবহৃত সিম থেকে তানভীরের বাবার নাম্বার সংগ্রহ করে এবং উজ্জলের পরামর্শ অনুযায়ী মুক্তিপণের জন্য ৮০ লাখ টাকা দাবী করে। যা ছিল তাদেরই পরিকল্পনার অংশ বিশেষ। মঙ্গলবার দুপুরে আসামী উজ্জলের বাড়ীর পরিত্যক্ত একটি ডোবা থেকে তানভীরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এদিকে, হত্যার ঘটনায় বুধবার তানভীরের বাবা পাঁচ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েক জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।মামলার আসামীরা হলেন, উপজেলার পশ্চিম নছরতপুর গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে উজ্জল মিয়া (২৫) ও নুরপুর গ্রামের মলাই মিয়ার ছেলে শান্ত (২৬) ও বাছিরগঞ্জ বাজারের জলিল কবিরাজের ছেলে জাহিদ মিয়া (২৮)। ইতোমধ্যে এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অজয় চন্দ্র দেব বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত তিনজন এছাড় আরও দুই জনের নাম মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের পরিচয় এখনও প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here