কিবরিয়া হত্যার ১৬ বছরেও বিচার কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় হতাশ পরিবার

0
318

মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ১৬তম শাহাদত বার্ষিকী। ২০০৫ সালের ওই দিনে তিনি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে ঈদ পরবর্তী এক জনসভায় গ্রেণেড হামলায় নির্মমভাবে নিহত হন। শাহ এএমএস কিবরিয়ার ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা ও হবিগঞ্জে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ, শোক র্যা লি, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা। পৃথকভাবে এ কর্মসূচিগুলো পালন করবে আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠন এবং কিবরিয়া স্মৃতি সংসদ। এছাড়া ঢাকার বনানীতে অবস্থিত মরহুমের কবরস্থানে সকাল সাড়ে ৯টায় পুস্পস্তবক অর্পণ করবে কিবরিয়া পরিবার। পরে তারা সেখানে জিয়ারত ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত । কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান।

এদিকে, ১৬ বছরেও শাহ এ এম এম কিবরিয়া হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ায় হতাশ তার পরিবার। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার মিডিয়ায় এক ভিডিও বার্তা প্রদান করে হত্যা রহস্যের উদঘাটন ও বিচারের দাবী জানান ড. রেজা কিবরিয়া। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারী হবিগঞ্জের বৈদ্যারবাজারে আমার বাবা মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সারা জীবন দেশের জন্য কাজ করেছেন। পররাষ্ট্র সচিব ও জাতীসংঘের উপ-মহাসচিব ছিলেন। পরে অর্থমন্ত্রী ও এমপি নির্বাচিত হন। এমপি থাকার সময় বৈদ্যারবাজারে আওয়ামী লীগের এক জনসভায় তিনি আহত হলে কয়েক ঘন্টা পর মারা যান। এর পর ১৬ বছরে আমার বাবার হত্যা নিয়ে হয়েছে প্রহসন। আমার বাবার হত্যার বিচার নিয়ে এভাবে আর কতদিন চলবে। এই হত্যার রহস্য আমার পরিবার ও দেশের জন্য উদঘাটন প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আমি আশাবাদী এই বংলার মাটিতেই আমার বাবার বিচার হবে।
শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকান্ডের বিচার বিলম্ভে হতাশা ব্যক্ত করেছেন মামলার বাদী ও হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি এডভোকেট আব্দুল মজিদ খানও। তিনি বলেন এই সরকারের আমলে বিচার কাজ শেষ না হওয়ায় আমি হতাশ। আশা করি দ্রুত বিচার সম্পন্ন হবে। মামলার আসামীরা বিভিন্ন কারাগারে থাকা এবং স্বাক্ষীদের উপস্থিতি না হওয়ায় মামলার বিচারে বিলম্ভ হচ্ছে বলে জানান, সিলেটের পিপি এডভোকেট সারোয়ার আহমেদ আব্দাল।

শাহ এ এম এস কিবরিয়া কর্মজীবনে পররাষ্ট্র সচিব, এসকাপের নির্বাহী সচিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন শেষে অবসর গ্রহণ করার পর ১৯৯৪ সালে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। পরে তিনি আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০১ সালে তিনি হবিগঞ্জ-৩ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি ছিলেন আওয়ামীলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী। মৃদুভাষন নামে একটি সাময়িকির সম্পাদক ছিলেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধের সময় তিনি প্রবাসে দেশের পক্ষে কাজ করেন। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেলে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে ঈদ পরবর্তী এক জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন তৎকালীন হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। জনসভা ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। বক্তব্য শেষে যখন তিনি মঞ্চ থেকে নেমে সহকর্মীদের নিয়ে বৈদ্যের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেইটে আসেন তখনই দিনের আলো নিভে প্রায় সন্ধ্যা। হঠাৎ করেই বিকট শব্দ। হুড়োহুড়িতে চারদিকে গগনবিদারী চিৎকার। আর্জেস গ্রেনেডের আঘাতে অনেকেই ক্ষতবিক্ষত। সেখানে শাহ এ এমএস কিবরিয়া গুরুতর আহত হলে ঢাকা নেয়ার পর মৃত্যু বরণ করেন। ঘটনাস্থলে মারা যান তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা ও এলাকার তিনজন। আহত হন আরও ৭০জন।
এ ঘটনার পরদিন ২৮ জানুয়ারি তৎকালীন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান এমপি বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে কাজ করে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু মামলাটির স্বাভাবিক তদন্ত না হয়ে দলীয় বিবেচনায় পরিচালিত হতে থাকে। পরে মামলার তিন দফা চার্জশীট দেয়ার পর হত্যা এবং বিষ্ফোরক মামলা দুটি সিলেটের দ্রুত বিচার আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ কোন স্বাক্ষী না যাওয়ায় কার্যত থমকে আছে বিচার কাজ। উভয় মামলায় ১৭৩জন স্বাক্ষী থাকলেও হত্যা মামলায় ৪২ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। বিষ্ফোরক মামলায় এখনও কেউ স্বাক্ষ্য প্রদান করেননি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here