সপ্তাহজুড়ে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণের কবলে ঢাকা

0
250
সপ্তাহজুড়ে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণের কবলে ঢাকা

খবর৭১ঃ
গত এক সপ্তাহজুড়ে বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করেছে রাজধানী ঢাকা। গত বুধবার বিশ্বের শহরগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণের দিক থেকে প্রথম স্থানে ছিল ঢাকা। শুক্রবার দুপুর ১টায় দূষণের মানমাত্রা ছিল ১৯০।

বায়ুদূষণের মাত্রা ২০০ ছাড়ালে বলা হয়, মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর। আর ৩০০ ছাড়ালে বলা হয় ‘দুর্যোগপূর্ণ’। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজুয়াল’-এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী শুক্রবার বায়ুদূষণের মানমাত্রায় তৃতীয় স্থানে ছিল ঢাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মাত্রা অস্বাস্থ্যকর।

সম্প্রতি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক পর্যবেক্ষণে ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই পাঁচ বছরের মধ্যে চলতি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত উদ্যোগ না নিলে আরও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। আর পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলছে, দূষণ রোধে কাজ চলছে। কাজ তরান্বিত করতে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু পদক্ষেপ।

ক্যাপস এর পর্যবেক্ষণে দেখানো হয়েছে,২০১৬ সালের ডিসেম্বরের প্রথম আট দিনে ঢাকায় বায়ুমান সূচকে দূষণ ছিল ১৮১, ২০১৭ সালে ছিল ১৮৯, ২০১৮ সালে ২০৭, ২০১৯ ছিল ১৭৩। এর বিপরীতে চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহে বায়ুমান সূচক বেড়ে গিয়ে ২৩৭ এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩৬ দশমিক ৯৯ ভাগ বেশি।

এদিকে চলতি বছরের নভেম্বরে মান সূচকে দূষণের গড় মাত্রা ছিল ১৬৩। নভেম্বরের তুলনায় গড়ে ৪৫ দশমিক ৩৬ ভাগ বায়ুদূষণ বেড়েছে ডিসেম্বরে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বায়ুর মান এমনিতেই খারাপ। শীতকাল এলে তা বিপজ্জনক আকার ধারণ করে। শীতে কুয়াশার কারণে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেড়ে যায়, আর তাতে জমা হয় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বস্তুকণা। শহরের চারপাশে গড়ে উঠা ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও নির্মাণকাজের কারণে বায়ুমানের এমন পরিস্থিতি। এর ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, মার্কারি ও লেডের মতো ভারী পদার্থ বাতাসে মিশে যাচ্ছে। এগুলো ফুসফুস ও হৃদরোগ, যকৃতের সমস্যা ও গর্ভবতী মায়েদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শিশু ও বয়স্কদের জন্যও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। এই পরিস্থিতি রাতারাতি পাল্টানো সম্ভব নয়, তবে উদ্যোগ নিতে হবে এখনই। বায়ুদূষণ মোকাবিলার প্রথম কাজ হচ্ছে দূষণের উৎস বন্ধ করা। শহরের চারপাশের ইটভাটা উচ্ছেদ করতে হবে। যেসব কারখানা বায়ুদূষণ করে, রাজধানী থেকে সেগুলো সরিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে শহরের বিভিন্ন স্থানে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা এবং জলাশয়গুলো রক্ষা করা। দূষিত বায়ুর মধ্যে নগরের মানুষ কীভাবে নিরাপদ থাকবে, সেই ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। ঢাকার যেসব উন্মুক্ত স্থান দখল হয়ে আছে, সেগুলো দখলমুক্ত করে প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ঢাকাকে ভারমুক্ত করার জন্য বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। একে সবুজ করে গড়ে তুলতে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তবে সবার আগে বায়ুদূষণকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংকট হিসেবে দেখতে হবে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এটি সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

এদিকে, গত বছর ২৬ নভেম্বর হাইকোর্ট ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের কারণ খুঁজে বের করা এবং বায়ুদূষণ রোধে ও কমাতে নীতিমালা প্রণয়নে পরিবেশ মন্ত্রণালয় সচিবকে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের আদেশ দেন। কোর্টের আদেশে মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রধান করে ১৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধি আছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here