করোনাবিধি অমান্য: শাস্তির মুখে দেশি-বিদেশি বিমান

0
296
করোনাবিধি অমান্য: শাস্তির মুখে দেশি-বিদেশি বিমান

খবর৭১ঃ করোনার নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তাতে মানছে না দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্স। কেউ বহন করছেন করোনার পজিটিভ যাত্রী, কেউ আবার নেগেটিভ সনদ না নিয়ে ঢাকায় যাত্রী আনছেন। চলতি মাসে এমন ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানসহ ১০টি দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে।

এদের মধ্যে চারটিকে জরিমানা করা হয়েছে। লঘু অপরাধের কারণে বাকিদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৫টি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ জামিল।

তবে এমন ঘটনায় সুস্থ যাত্রীদের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শাহজালাল বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এয়ারলাইন্সগুলো করোনা পজিটিভ ও করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছাড়াই যাত্রীদের নিয়ে আসছে। করোনা পজিটিভ রোগী ফ্লাইটে নিয়ে আসার কারণে অন্যান্য সুস্থরাও করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন।’

করোনার সংক্রমণ এড়াতে গত ৫ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশে আসতে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ফলে দেশি-বিদেশি কোনো এয়ারলাইন্স করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছাড়া বাংলাদেশে যাত্রী আনতে পারবে না। এ নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে বাংলাদেশে যাত্রী আনতে হলে বিশেষ ছাড়পত্র থাকতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ বিমানসহ দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে এই নিয়ম মানছে না। ফলে গুনতে হচ্ছে জরিমানা।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ জামিল বলেন, আমরা সবসময়ই মনিটরিং করছি। নিয়মের ব্যত্যয় হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। করোনার সংক্রমণ এড়াতে এখানে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

নতুন নিয়ম শুরুর পর থেকে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে নিয়ম না মানা বিমান সংস্থাকে আর্থিক জরিমানা ও কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উন্নত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত জরিমানার মুখোমুখি হতে হয়েছে মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্সকে। এছাড়া বাংলাদেশ বিমান, এয়ার এশিয়া ও সৌদি এয়ারলাইন্সকে (সাউদিয়া) জরিমানার মুখে পড়তে হয়েছে।

জানা গেছে, করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া ১৫ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৮টা) পর্যন্ত সৌদি এয়ারলাইন্স (সাউদিয়া) ২৬০ জন যাত্রী ঢাকায় অবতরণ করে। এর আগেও দুটি ফ্লাইটে নেগেটিভ সনদ ছাড়া বিমান সংস্থাটি প্রায় সমসংখ্যক যাত্রী নিয়ে আসে।

পরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন করার দায়ে সৌদি এয়ারলাইন্সকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

বিমানবন্দরে কর্তব্যরত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মঙ্গলবার তিনটি ফ্লাইটে মোট ২৬০ জন যাত্রী করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া পরিবহন করে সৌদি এয়ারলাইন্স। পরে তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠানো হয়।

এর আগের দিন সৌদি এয়ারলাইন্স করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া ২৫৯ জন যাত্রী নিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে আসে। সেদিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশ অমান্যের কারণ জানতে চাইলে তারা ‘প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেব’ বলে সময় চায়। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় কাগজপত্র দাখিল না করে আরও ২৬০ জন যাত্রীকে নিয়ে আসে। এ কারণে বিমান সংস্থাটিকে জরিমানা করা হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে করোনা সনদ ছাড়া ৫১৬ যাত্রী আনায় সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সকে (সাউদিয়া) দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই কারণে বৃহস্পতিবারও মালদিভিয়ান এয়ারলাইনসকে দুই লাখ ৩৬হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এরমধ্যে গত শনিবার মধ্যরাতে করোনা পজিটিভ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় নামে এয়ার এশিয়া। তাদের জরিমানা করা হয় এক লাখ টাকা।

জানা গেছে, কুয়ালালামপুর থেকে ৯৮ জন যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসা এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটটিতে যাত্রীরা সবাই করোনা পরীক্ষা করে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু এদের মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ রিপোর্টসহ ছিলেন। তবে কুয়ালালামপুরে এ যাত্রীকে বোর্ডিং করানোর সময় কেউ বিষয়টি লক্ষ্য করেননি। যদিও ততক্ষণে সাড়ে তিন ঘন্টা যাত্রা করে এই রোগী ঢাকা এসে পৌঁছেন। পরে যাত্রীকে পাঠানো হয় হাসপাতালে। আর বিমান সংস্থাকে করা হয় জরিমানা।

একই দিনে করোনা সার্টিফিকেট ছাড়া ৬ যাত্রী বহন করায় জরিমানার মুখে পড়তে হয় রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাকে জরিমানা করা হয় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এরআগে গত বৃহস্পতিবার করোনা পরীক্ষার সনদ ছাড়া ২০০ যাত্রী নিয়ে আসায় ২লাখ ৩৬হাজার টাকা জরিমানা করা হয় মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্সকে।

জানা গেছে, মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটটি মালদ্বীপে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার জন্য পরিচালিত হয়। কিন্তু ২০০ যাত্রীর কারো সঙ্গে করোনার পিসিআর পরীক্ষার সনদ ছিলো না।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণের পর যাত্রীদের সনদ পর্যালোচনা করে দেখা যায় করোনার লক্ষণ আছে কি না শুধু তা দেখেই তাদের সনদ দেয়া হয়। করোনা শনাক্তকরণের কোন পরীক্ষা করা হয়নি। পরে যাত্রীদের মধ্যে বিএমইটির কার্ডধারী ৮৭জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। বাকিদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়।

মালদিভিয়ান এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধিরা সরকারের বেধে দেয়া শর্ত যথাযথভাবে পালন করেননি বলে স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ জামিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here