তরুণরাই বেশি জড়িয়ে পড়ছে সাইবার অপরাধে

0
311
তরুণরাই বেশি জড়িয়ে পড়ছে সাইবার অপরাধে

খবর৭১ঃ ব্যাপক নজরদারির মধ্যেও বেড়ে চলেছে সাইবার অপরাধ। অপরাধীরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাজে মন্তব্য করছে। একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতার ছবি ব্যবহার করেও তারা নানা কুৎসা রটাচ্ছে। সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে তরুণরাই বেশি জড়িয়ে পড়ছে।

তারা সাইবার ফাঁদে ফেলছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, নারী, পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নিরীহ মানুষদের। আবার কৌশলে জিম্মি করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এমনকি মানুষের ইজ্জত-সম্ভ্রমও তাদের কারণে নিরাপদ থাকছে না। এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভিকটিম হচ্ছে তরুণীরা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সাইবার অপরাধীদের বিরুদ্ধে পাহাড়সমান অভিযোগের কারণে রীতিমতো চাপে আছেন তারা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, একটি অভিযোগের তদন্ত শেষ করতে গিয়ে আরো একাধিক অভিযোগ জমা হচ্ছে। ফেক আইডি ব্যবহার করার কারণে অপরাধীরা সহজে ধরা না পরায় পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে, তাদের বেশির ভাগের বয়স ১৬ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। আর ভিকটিম হচ্ছে তরুণীরা।

নারীদের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের উদ্যোগে চালু হয়েছে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’। এ ব্যাপারে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, দেশে সাধারণত ১৬ থেকে ২৪ বছরের নারীরা সাইবার জগতে এ ধরনের অপরাধের বেশি শিকার হয়। সাইবার অপরাধের শিকার ভিকটিমের চার শতাংশের তিন শতাংশ হলো নারী। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও সাইবার স্পেস নিরাপদ রাখতে পুলিশ উদ্যোগ নিয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে প্রায় ৫ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে কেবল গত ছয় মাসে প্রায় ২ হাজার লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। এতে তদন্তে নেমে হিমশিম খেতে হচ্ছে এই বিভাগের সদস্যদের। প্রতি বছরই এ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৭ সালে মামলা বৃদ্ধির হার ছিল ১৫ শতাংশ, যা ২০১৮ সালে হয়েছে ৭ শতাংশ আর ২০১৯ সালে সেটি গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ শতাংশে। আর চলতি বছরের গত ১০ মাসে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। গত ১০ মাসে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত ১ হাজার ৬৩৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সাইবার অপরাধের সর্বশেষ শিকার নোয়াখালীতে এক নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সারা দেশে তোলপাড় হয়। গত শনিবার সিআইডি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে গ্রেফতার করে। এই শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অপচেষ্টা চালিয়েছিলেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন পন্থায় মানুষ সাইবার অপরাধীদের টার্গেটে পড়ছে। বিভিন্ন পেশার মানুষের ফেসবুক হ্যাক করছে হ্যাকাররা। তাদের পেজে আপলোড করে দিচ্ছে বিব্রতকর নানা পোস্ট। পরে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। সাইবার ক্রাইম ইউনিট বলছে, প্রায় প্রতিদিনই তাদের কাছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ ধরনের অভিযোগ আসছে। তবে সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রত্যেকের আবেদনে সাড়া দিতেও পারছেন না তারা। এর মধ্যে বিভিন্ন অফিসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হ্যাক করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে গত ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর বিষয় ডটকম নামে বাংলাদেশি একটি ওয়েবসাইট হ্যাকড হয়। হ্যাকড হওয়া সাইটের কন্ট্রোল প্যানেলটি নিয়ে নেয় হ্যাকাররা। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি মামলা হলে সাইবার ক্রাইম ইউনিট মোক্তার হোসেন বাবুকে ১৩ জানুয়ারি পল্লবী থেকে তাকে গ্রেফতার করে। অতি সম্প্রতি এস ইসলাম নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়। পরে ঐ হ্যাকার মেসেঞ্জারের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর ফেসবুক ফ্রেন্ড এবং আত্মীয়স্বজনের কাছে টাকা দাবি করে। টাকা পাঠানোর জন্য বিকাশ নম্বর দেয়। কেউ কেউ টাকাও পাঠায়। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীর কাছে আইডি ফেরতের জন্য টাকা দাবি করে। না দিলে ফেসবুক আইডি ডিজেঅ্যাবল করে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় গত ২৬ জানুয়ারি রামপুরা থানার ডিজিটাল আইনে মামলা করলে জাকারিয়া মোল্লা ওরফে সুমন নামের এক হ্যাকারকে খুলনা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি ও ক্রাইম ডিভিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে সারা দেশে সাইবার অপরাধের দায়ে মামলা হয়েছে ৬৩৮টি, যা ২০১৬ সালে হয়েছে ৯২৩টি। একইভাবে ২০১৭ সালে ১ হাজার ৫৮টি, ২০১৮ সালে ১ হাজার ১৩৬টি ও ২০১৯ সালে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৪৫৬টি। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা হয়েছে ১৬০টি ও ২০১৯ সালে ৮৪৬টি। ২০১৫ সালে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে ২৩২টি, ২০১৬ সালে ২০৬টি, ২০১৭ সালে ২৮০টি, ২০১৮ সালে ৩৭৩টি ও ২০১৯ সালে ৫৪০টি। আইসিটি অ্যাক্টে ২০১৫ সালে মামলা হয়েছে ৩৬৫টি। একইভাবে ২০১৬ সালে ৬৭৩টি, ২০১৭ সালে ৭৪৮টি, ২০১৮ সালে ৫২২টি ও ২০১৯ সালে হয়েছে ১২টি মামলা। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে ২০১৫ সালে মামলা হয়েছে ৪১টি। ২০১৬ সালে ৪৪টি, ২০১৭ সালে ৩০টি, ২০১৮ সালে ৮১টি ও ২০১৯ সালে ৫৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here