সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ৩০ টাকার আলু ৬০ টাকা

0
348
সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ৩০ টাকার আলু ৬০ টাকা

খবর৭১ঃ পেঁয়াজের পর এবার আলু নিয়ে একটি সিন্ডিকেট কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছে। দেশীয় চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত আলু মজুত থাকলেও রীতিমতো লাগামহীনভাবে বাড়ছে প্রতিদিনের রান্নায় অপরিহার্য এই পণ্যটির দাম। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গতকাল বুধবার এক দিনের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি কেজি আলুর দাম বেড়েছে ১০ টাকা।

বুধবার রাজধানীতে প্রতি কেজি সাধারণ মানের আলু বিক্রি হয় ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। যা এক দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকায়। আর ভালো মানের আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। সরকারের সংস্থাটির হিসাবেই, এক দিনেই দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। আর এক বছরে বেড়েছে ১১১ শতাংশ। চাল, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেলের পর এবার আলুর এ রেকর্ড দাম বৃদ্ধিতে রীতিমতো ভোগান্তিতে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। কিন্তু কেন বাড়ছে আলুর দাম? ব্যবসায়ীদের দাবি, এ বছর দেশের চার দফা বন্যায় উত্তরাঞ্চলসহ ৩৭টি জেলার সবজি খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে এবার ৫০ টাকার নিচে কোনো ধরনের সবজি নেই। আর এর প্রভাব পড়েছে আলুর ওপর। আরেকটি কারণ হলো, করোনায় শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় দাম কম হওয়ায় তারা আলুর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি শ্রমজীবী মানুষকে সহায়তার জন্য ত্রাণ হিসেবে চালের পাশাপাশি আলুও দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে করোনার সময় মার্চের শুরুতে প্রতি কেজি আলুর দাম ২০ টাকা থাকলেও এখন তা ৬০ টাকা ছুঁয়ে গেছে।

তবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলেছে, আলুর দাম বাড়ার কোনো যুক্তিই নেই। তাই সারা দেশে ৩০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা সারা দেশে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফ বলেন, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকা হিসেবে বিক্রির জন্য দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোল্ড স্টোরেজ গেটে প্রতি কেজি আলু ২৩ টাকা। আর পাইকারি বাজারে ২৫ টাকা কেজি আলু বিক্রি হবে। খুচরা পর্যায়ে তা ৩০ টাকায় ভোক্তারা কিনবেন।

তবে গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজার পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বিক্রমপুর আলু বিক্রি হয় ৪৩ টাকা। আর রংপুর ও রাজশাহীর আলু বিক্রি হয় ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা দরে। খুচরা বাজারে তা মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়।

বছরে আলুর চাহিদা কত :কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশে প্রতি বছর আলুর চাহিদা ৭৭ লাখ টন। এর বিপরীতে গত অর্থবছরে দেশে ১ কোটি ৯ লাখ টন আলু উত্পাদন হয়েছে। অর্থাত্ চাহিদা মেটানোর পরও আরো ৩২ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থাকবে। তাই আলুর দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।

পেছনে অসাধু সিন্ডিকেট :এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে অসাধু সিন্ডিকেট। সুযোগ বুঝে তারা বিনা কারণেই আলুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এই অশুভ চক্র চাল, পেঁয়াজ ও সয়াবিন তেলও সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে। এবার অন্যান্য সবজির দাম বাড়ায় আলু নিয়ে কারসাজি শুরু করছে।

রাজধানীর কাওরান বাজারে গত ১০ বছর ধরে ভ্যান চালান সেলিম। হঠাত্ করে আলুর দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করতেই তিনি অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ৬০/৭০ টাকার নিচে কোনো ধরনের সবজি নেই। মাছ-মাংসের দামও বেশি। এখন আলুর দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, এতদিন আলু ওপর নির্ভর ছিলাম। এখন সবজি হিসেবে আলু কিনতে না পারলে আর কী কিনব?

ক্রেতাদের ক্ষোভ :এদিকে লাগামহীনভাবে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বাজার অভিযানের সুফল নিয়ে সংশয় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। রাজধানীর তুরাগে নতুন বাজারে গতকাল কেনাকাটা করতে আসা একজন ব্যক্তি বলেন, এর আগে চালের দর নির্ধারণ করে দেওয়া হলো। এখন আলু দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামে তো বিক্রেতারা চাল-আলু বিক্রি করছে না। তাহলে দাম বেঁধে দেওয়ার নাটক করে কী লাভ? এই ক্রেতা আরো বলেন, মাঝেমধ্যে দেখি বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু কোনো সুফল পাই না। করোনা সংকটের এই সময়ে এমনিতেই আয় রোজগার কমে গেছে। তার মধ্যে লাগামহীনভাবে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ায় আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। চারদিক দিয়ে খরচ কাঁটছাট করেও সংসার চালাতে পারছি না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here