ছাতকে সওজর সড়ক সংলগ্ন সরকারী খাল ভরাট করে ইজারার নামে দখলের পায়তারা

0
315
ছাতকে সওজর সড়ক সংলগ্ন সরকারী খাল ভরাট করে ইজারার নামে দখলের পায়তারা

হাবিবুর রহমান নাসির ছাতক প্রতিনিধিঃ ছাতকে সওজর সড়ক সংলগ্ন সরকারী খাল ভরাট করে ইজারার নামে দখলের পায়তারা করছে কতিপয় ভুমিখেকো । ভুমি ইজারা আইনের তোয়াক্কা না করে ভুমি খেকো একটি চক্র সরকারী এ ভুমি নিজ দখলে নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই ভুমিতে প্রস্তাবিত পুলিশ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার লক্ষে একটি সাইনবোর্ডও সাটানো থাকা সত্ত্বেও গোপনে ইজারার নামে সরকারী ভুমি দখলের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে এ চক্র। সরকারী ভুমি সরকারী কাজে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবহার করা বিধান থাকলেও ভুিম প্রশাসনের সহযোগিতায় স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি ওই ভুমি ইজারার নামে দখলে নিতে সম্প্রতি আবেদনও করেছে।

এমন অভিযোগ এনে এবং এখানে প্রস্তাবিত পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের স্বার্থে ওই ভুমি বন্দোবস্ত বা ইজারা বন্ধ করার জন্য গোবিন্দগর গ্রামের হাজী আরব আলীর পুত্র আনছার আলী ২৭ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার বরাবরে একটি লিখিত আবেদন দিয়েছেন। জানা যায়, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার প্রবেশদ্বার গোবিন্দগঞ্জ ব্রীজ সংলগ্ন সরকারী ১ নং খতিয়ানভুক্ত খাল শ্রেণীভুক্ত প্রায় এক একর ১০ শতক ভুমি( নয়ন জুলি খাল) রয়েছে।

ব্রীজ সংলগ্ন এ ভুমিতে প্রস্তাবিত পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য নির্ধারণ করে পরিদর্শনে আসা জেলা ও বিভাগীয় কর্মকর্তারা ইতি মধ্যেই সাইনবোর্ড সাটিয়ে দিয়েছেন। স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষায় এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ২২ সেপ্টেম্বর উপজেলা ভুমি প্রশাসন গোপনে ইজারা প্রদানের জন্য ৯৮৭ নং স্মারকে জেলা প্রশাসন বরাবরে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় চরম অসন্তোষ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভুমি মন্ত্রনালয় আইন অনুযায়ী সড়ক সংলগ্ন সরকারী খাল বা পতিত সড়ক ইজারা যোগ্য নয়।

সর্ব সাধারনের ব্যবহারযোগ্য ভুমি পরিবেশ আইন ও বিধি রক্ষায় সুপ্রিম কোর্ট মোকদ্দমাসমুহে সড়ক সংলগ্ন সরকারী খাল, নদী-নালা, রাস্তা ভরাট, বানিজ্যিক স্থান হিসেবে ইজারা প্রদান নিষেধাজ্ঞা জারীর পাশাপাশি এসব স্থান সংরক্ষনে আদেশও বিদ্যমান রয়েছে। মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও জেলা সড়কের উভয় পাশে অন্তত ১০ মিটার এলাকা পর্যন্ত কোন স্থাপনা না থাকার মর্মে উচ্চ আদালতের ১৫৪৬/২০১১ নং রীট আবেদনেও কার্যকর আদেশ জারী রয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের রীট মামলা নং-৩৮৫৫/১৩ এর প্রেক্ষিতে ২০০০ ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ বাস্তবায়নের জন্য সিনিয়র সহকারী সচিব আলিয়া মেহের’র এক আদেশে মহানগর, বিভাগীয় ও জেলা শহর এবং পৌর এলাকাসহ দেশের সকল খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার ও খাল রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলা হয়েছে।

পাশাপাশি খাল অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং খালে মাটি ভরাট রক্ষায় আইনী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও আদেশ উল্লেখ রয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ ব্রীজ সংলগ্ন খাল(নয়ন জুলি খাল) একদিকে সরকারী সম্পত্তি, অন্য দিকে এলাকার পানি নিস্কাশনের একটি প্রধান জলাধার। এ খাল ভরাট হলে এলাকার বৃহত্তর অংশ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীণ হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী গোবিন্দগঞ্জ ব্রীজ সংলগ্ন খাল শ্রেনীভুক্ত সরকারী ১ একর ১০ শতক ভুমি ইজারা বা বন্দোবস্ত দেয়া সরকারী আইন পরিপন্থি। সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক ও ভটেরখাল নদীর মিলনস্থল গোবিন্দগঞ্জের ব্রীজের গোড়ায় ওই ভুমিতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টি এখন এলাকাবাসীর সময়ের দাবী।

এলাকাবাসীর মতে সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত এবং সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৪টি থানার মোহনা ছাতকের গোবিন্দগঞ্জের ওই ভুমিতে প্রস্তাবিত পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন অতিব জরুরী। সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কসহ এর আশপাশ এলাকা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত পুলিশ ক্যাম্প গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখতে পারবে এলাকাবাসীর বিশ্বাস। ব্রীজের গোড়ায় পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের লক্ষ্যে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সমন্বয়ে পরিদর্শন শেষে স্থান নির্ধারণ করে এখানে সাইনবোর্ড সাটানো হয়।

আবেদনে বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা নিয়ে এখানে প্রস্তাবিত পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন কার্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে সরকারী এ ভুমি ইজারা বা বন্দোবস্ত না দেয়ার জন্য বিহিত ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করা হয়। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, উপ মহা পুলিশ পরিদর্শক সিলেট রেঞ্জ, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে এ ব্যাপারে পৃথকভাবে আবেদন দেয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here