ঝুঁকিতে সামাজিক সাত অর্জন

0
632
করোনাভাইরাসে দেশে আরও ৩২ জনের প্রাণহানি

খবর৭১ঃ
গত কয়েক বছরে বেশ কিছু সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে অগ্রগতির সাতটি সূচক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী সূচকগুলো হল : শিক্ষার হার বৃদ্ধি, মাতৃমৃত্যু রোধ, শিশুমৃত্যু রোধ, স্থূলমৃত্যু হার প্রতিরোধ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার রোধ, নির্ভরশীলতার অনুপাত হ্রাস এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বৃদ্ধি।

এসব সূচকে ব্যাপক অগ্রগতি হলেও করোনার কারণে তা স্থবির হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, করোনা মোকাবেলায় সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ায় অন্যসব খাত গুরুত্ব হারাচ্ছে। এ ছাড়া সব ক্ষেত্রেই করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিবিএসের ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি জুনে চূড়ান্ত করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, সামাজিক খাতও কোভিড-১৯-এর নেতিবাচক প্রভাবের বাইরে নয়। বিবিএসের প্রতিবেদনে সামাজিক অগ্রগতির যে চিত্র উঠে এসেছে, সেগুলোও অবশ্যই ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তবে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ভালো হওয়ায় এসব সামাজিক খাতে ভয়ংকর কোনো বিপর্যয় হয়তো হবে না।

মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি)-এর তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের আওতায় প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বিবিএস। এতে বলা হয়: ২০১৯ সালের হিসাবে সাত বছর ও তদূর্ধ্ব জনসংখ্যার শিক্ষার হার দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০১৫ সালের জরিপে ছিল ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনসংখ্যার শিক্ষার হার ২০১৯ সালের হিসাবে ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ। যেটি ২০১৫ সালের হিসাবে ছিল ৬৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়: মাতৃমৃত্যু প্রতিরোধে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে সরকার। এ ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যু অনুপাত (প্রতি হাজার জীবিত জন্ম শিশু) ২০১৯ সালের হিসাবে কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬৩ (জাতীয়ভাবে), যা ২০১৫ সালের জরিপে ছিল ১ দশমিক ৮১। শুধু মাতৃমৃত্যুর ক্ষেত্রেই অগ্রগতি হয়নি। শিশুমৃত্যু রোধেও অগ্রগতি হয়েছে। এক বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর হার (প্রতি হাজার জীবিত জন্ম শিশু) ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী ২১টি, যা ২০১৫ সালে ছিল ২৯টি। এ ছাড়া এক মাসের কম বয়সের শিশু, এক মাস থেকে ১১ মাস বয়সের শিশু, ১-৪ বছর বয়সের শিশু এবং পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ইয়ামিন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, করোনার কারণে সারা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তবে সামাজিক সূচকগুলোর সাফল্য যতটা-না অর্থনৈতিক বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল, তার চেয়ে অনেক বেশি অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করে। করোনার কারণে জনঅংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে পরিস্থিতি উন্নতি হলে ঝুঁকি নিরসন সম্ভব এবং এসব সূচকে উন্নতি ঘটবে বলে আশা করছি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৫ সালে স্থূলমৃত্যুর হার ছিল ৫ দশমিক ১। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে ২০১৯ সালে সেটি কমে দাঁড়ায় চার দশমিক ৯ জনে। এ ছাড়া দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার গত পাঁচ বছর ধরে একই রয়েছে। অর্থাৎ এক দশমিক ৩৭। প্রতিবেদনে বলা হয়: নির্ভরশীল জনসংখ্যার অনুপাত ২০১৫ সালে ছিল ৫৫ শতাংশ। সেটি কমে ২০১৯ সালে হয়েছে ৫১ শতাংশ। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার বেড়ে দাঁড়িয়েছে জাতীয়ভাবে ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশে। যেটি ২০১৫ সালে ছিল ৬২ দশমিক ১ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে আধুনিক ও যে কোনো দুই ধরনের পদ্ধতির ব্যবহারই বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাভিত্তিক সামাজিক সূচকগুলোর ভালো অর্জন থাকলেও সেগুলো অত্যন্ত ঝুঁকির মুখে রয়েছে। কেননা স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশা থাকায় মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি দুই ক্ষেত্রেই একই অবস্থা। ফলে মানুষ একেবারেই দায় না ঠেকলে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ নিজে নিজেই চিকিৎসা করছে।

এ ছাড়া করোনার ভয়ে শিশু চিকিৎসা বা শিশুদের টিকা গ্রহণের সংখ্যা ব্যাপক হারে কমে গেছে। এই প্রবণতা শুধু বাংলাদেশেই নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় দেখা যাচ্ছে। ফলে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষায় শিশুদের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভালো করেছে। শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধ এবং জেন্ডার ব্যালান্সের ক্ষেত্রেও অগ্রগতি ভালো ছিল। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দরিদ্র পরিবারের অনেক শিশু ঝরে পড়তে পারে। শিশুদের পুনরায় শিক্ষায় ফিরিয়ে আনা সহজ হবে না। এর বাইরেও অন্য সামাজিক সূচকগুলোয়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক বলেন, এ মুহূর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না। আমাদের কর্মীরা করোনার মধ্যেও মাঠপর্যায়ে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here