এবার পানি সরবরাহ দেখতে বিদেশ যাবেন ১০ কর্মকর্তা

0
297
এবার পানি সরবরাহ দেখতে বিদেশ যাবেন ১০ কর্মকর্তা

খবর৭১ঃ উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশ সফরের প্রস্তাব দেয়া থামছেই না। করোনা মহামারীর কারণে সরকার যখন ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে, তখন প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ ভ্রমণ যেন অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পুনর্বাসন বা সংস্কার কাজ দেখতে বিদেশ যাবেন ১০ কর্মকর্তা।

প্রত্যেকের পেছনে ব্যয় হবে ৪ লাখ টাকা করে। এতে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। ‘রাজশাহী মহানগরীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্পে এ সফরের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ছাড়া বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রকল্পটি গ্রহণের আগে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে প্রকল্পটি। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৯৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অনুমোদন পেলে চলতি মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে রাজশাহী ওয়াসা।

এ প্রকল্পটিসহ সম্প্রতি অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর অধিকাংশই করোনা মহামারী শুরুর আগে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তাই এগুলো নতুন করে মূল্যায়ন করা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ও বাড়তি ব্যয় সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়ের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হতে হবে, এটি স্পষ্ট করেই বলেছেন তিনি। তবে প্রকল্প প্রস্তাবের সব পাতা দেখা আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। আমি সংশ্লিষ্ট সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছি, যাতে সত্যিই এসব ব্যয়ের প্রয়োজন আছে কি না-সেটি দেখা হয়। তাছাড়া পরিকল্পনা কমিশনে জনবলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। প্রকল্পে বিদেশ সফরের বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বা স্টাডি ভিজিট বাবদ আরও বেশি বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা।

ওই সভায় পরিকল্পনা কমিশন থেকে বলা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ অনধিক ৪০ লাখ টাকার সংস্থান রাখা যেতে পারে। ওই স্টাডি ভিজিট বা প্রশিক্ষণ বিষয়ে দেশের নাম উল্লেখসহ প্রতিটি টিমের ব্যাচভিত্তিক কম্পোজিশন পুনর্গঠিত ডিপিপিতে উল্লেখ করতে হবে। পরে এই সুপারিশ মেনে নিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

কর্মকর্তারা আরও জানান, প্রকল্পের আওতায় আসবাবপত্র ক্রয় খাতে বিস্তারিত বিভাজনসহ এ খাতে অনধিক ১০ লাখ টাকার সংস্থান রাখার পক্ষে মত দেয় পরিকল্পনা কমিশন। সেই সঙ্গে জেনারেটর মেরামত ও জ্বালানি খাত বাবদ প্রস্তাবিত অর্থ পুনঃপর্যালোচনা করে যৌক্তিকভাবে কমানোর সুপারিশ করে। এ ছাড়া কমিশন থেকে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পে কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয় এবং পানি পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি ক্রয় খাতের উপ-অঙ্গসমূহের একক ব্যয়সহ বিভাজন দিয়ে ব্যয় কমাতে হবে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, একেবারেই অপরিহার্য না হলে বিদেশ সফরের মতো বিষয়গুলো প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া উচিত। কেননা করোনা পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে এমননিতেই সরকার অর্থ সংকটে রয়েছে। এই সংকট মোকাবেলায় অবশ্য ইতোমধ্যে বেশকিছু উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। তারপরও গত কয়েকদিনে অনুমোদিত বেশ কয়েকটি প্রকল্পে বিদেশ সফরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, এটা দুঃখজনক। করোনা পরিস্থিতিতে প্রকল্প প্রস্তাবগুলো পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। তাছাড়া এরকম প্রস্তাবের কারণে সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ের উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, সাতটি পাম্প হাউস নির্মাণ ও ৩০টি উৎপাদক নলকূপ প্রতিস্থাপন করা হবে। এ ছাড়া ৮০টি উৎপাদক নলকূপ রিজেনারেশন, ৬০টি উৎপাদক নলকূপের পাম্প মোটর সরবরাহ, শ্যামপুর পানি শোধনাগারে ১২টি পাম্প মোটর সরবরাহ, শ্যামপুর পানি শোধনাগারের ড্রেজিং সিস্টেম প্রতিস্থাপন, শ্যামপুর পানি শোধনাগারে পুকুর পুনর্খনন ও ফিল্টার প্রতিস্থাপন, বিভিন্ন ব্যাসের ৯৫ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, বিভিন্ন ব্যাসের ৩৮ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রতিস্থাপন, ৬০০টি ওয়াস আউট স্থাপন, ১৩৩ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার, পাম্প মনিটরিং ও পরিচালনা সফটওয়্যার ক্রয়, পানি পরীক্ষাকরণ যন্ত্রপাতি ক্রয়, যানবাহন ক্রয়, পাম্প হাউস, জেনারেটর ইত্যাদি মেরামতসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ২৫ কোটি টাকার বেশি প্রকল্পের ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ প্রকল্পে আলাদাভাবে কোনো সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়নি। কিন্তু রাজশাহী ওয়াসার পানি শোধনাগারের জন্য সরকারি অর্থায়নে ২০১৫ সালে ‘এ ফিজিবিলিটি স্টাডি অব সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যাট ফর রাজশাহী ওয়াসা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। ওই স্টাডিতে ২০২২ সাল পর্যন্ত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখতে উৎপাদক নলকূপ স্থাপন ও টারসিয়ারি পাইপলাইন নেটওয়ার্ক স্থাপনের সুপারিশ রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here