গাইবান্ধায় পানি বৃদ্ধির সাথে তীব্র আকার ধারণ করছে নদী ভাঙন

0
320
গাইবান্ধায় পানি বৃদ্ধির সাথে তীব্র আকার ধারণ করছে নদী ভাঙন

খবর৭১ঃ গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে পড়েছে উপজেলার জিগাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এছাড়া সোমবার পশ্চিম জিগাবাড়ী এলাকার ৪২টি পরিবার নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছে।

এদিকে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে সোমবার ফুলছড়ির তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ও ঘাঘটের পানি নতুন ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৩ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়ে প্রায় ১৮ মানুষ পানি বন্দি হয়েছে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২৫৫ ঘরবাড়ী, নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে ৩ হাজার ৫৪২ হেক্টর জমির ফসল। খোলা হয়েছে ৫০টি সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র।

ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ জানান, ফুলছড়িতে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। চরম হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের জিগাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, জিগাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এরেন্ডাবাড়ী পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, দুই জামে মসজিদ, জিগাবাড়ী বাজার নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা, জিগাবাড়ী ঈদগাঁ মাঠ, একটি বিএস কোয়াটার, ৩টি মোবাইল টাওয়ার ও এরেন্ডাবাড়ী ও জিগাবাড়ী বাজার। ইতিমধ্যে জিগাবাড়ী বাজারের জামে মসজিদটি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়েছে। এছাড়া সোমবার পশ্চিম জিগাবাড়ী এলাকার ৪২টি পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি হারিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, সোমবার ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফুলছড়ির তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ও ঘাঘটের পানি নতুন ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৩ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিনি বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় সোমবার পানি বৃদ্ধি কিছুটা মন্থর গতি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে বৃষ্টি না হলে দুই একদিনের মধ্যে পানি কমতে শুরু করবে।

তিনি আরও জানান, জিগাবাড়ীর স্থাপনাগুলো রক্ষার্থে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ড্যাম্পিংয়ের কাজ চলমান আছে। এছাড়া বাঁধ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এ কে এম ইদ্রিশ আলী বলেন, জেলার সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের ৪ হাজার ৫৩৬ পরিবারের ১৭ হাজার ৮৪৪ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে সরকারী ৫০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২ হাজার ৭৭ জন মানুষ ঠাঁই নিয়েছে। বাকীরা বাঁধ ও সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২ হাজার ২৫৫ ঘরবাড়ী।

তিনি আরও জানান, গত তিন দিনে ১০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৯ লাখ টাকা বন্যাকবলিত চার উপজেলায় বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্ব-স্ব উপজেলাগুলো ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এসব বিতরণ করবে।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান জানান, বন্যার পানিতে জেলায় ৩ হাজার ১০৬ হেক্টর জমির পাট, ১৯৬ হেক্টর আউস ধান ও ১২৮ হেক্টর শাক-সবজি, ৪৩ হেক্টর আমন ধানের বীজতলা, ৪৪ হেক্টর তিল ও ২০ হেক্টর জমির চিনা বাদাম নিমজ্জিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন জানান, বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুদ রয়েছে। এছাড়া বাঁধগুলো যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্য বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে গ্রাম পুলিশসহ স্বেচ্ছাসেবীরা সার্বক্ষনিক তদারকি করছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here