চীনফেরতদের দুই সপ্তাহ আলাদা রাখতে হবে

0
590
চীনফেরতদের দুই সপ্তাহ আলাদা রাখতে হবে

খবর৭১ঃ বাংলাদেশে এখনো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হয়নি। যদিও গতকাল সোমবার একজন চীনা নাগরিক সর্দি-কাশি নিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির পর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে ইত্তেফাকের পক্ষ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ঐ রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কি না সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। শুধু এ রোগী নয়, আরো কিছু চীনা নাগরিকসহ বেশ কিছু মানুষের নমুনা সংগ্রহ করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান। সেগুলো পরীক্ষানিরীক্ষার পর এখনো করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের তথ্য মেলেনি।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গতকাল রাতে ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমরা ঐ চীনা নাগরিকের লালার নমুনা সংগ্রহ করেছি। এর বাইরেও বেশি কিছু মানুষের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশে কেউ আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

গতকাল পর্যন্ত বিমানবন্দরে চীনফেরত ২ হাজার ৪৭০ জন সন্দেহভাজনকে পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে কারো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। সবগুলো স্থলবন্দরেও এ ব্যাপারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ইত্তেফাককে বলেন, ‘করোনা ভাইরাস নিয়ে দেশের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। একটা বিষয় আমি সবাইকে নিশ্চিত করতে চাই, সর্দি-কাশি হলেই যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত, সেটা বলা যাবে না। এখানে মৌসুমি রোগব্যাধি হয়। শীত একটু কমতে শুরু করলে অনেকেরই ঠান্ডা লাগবে। তাতে জ্বর-সর্দি, গলাব্যথা হতেই পারে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যে কোনো সমস্যা হলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে। অযথা গুজব ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো যাবে না।’

গতকাল দুুপুরে জ্বর ও কাশি নিয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক চীনা নাগরিক ভর্তি হন। এরপরই খবর ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজন চীনা নাগরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে একটি বিশেষ কক্ষে রেখেছে। হাসপাতালের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, ‘ঐ চীনা নাগরিক হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে গেলে পরীক্ষায় তার জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট ধরা পড়ে। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী তাকে বাতাসে ঋণাত্মক চাপ আছে—এমন একটি রুমে রাখা হয়েছে। এই রুমের বাতাস বাইরে যায় না। আমরা ঐ চীনা নাগরিকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, তিনি এ মাসের ১৮ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে ঢাকায় এসেছেন। তবে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এটা বলা যাচ্ছে না। আমাদের হাসপাতালে বেশ কয়েকজন চীনা নাগরিক এরই মধ্যে ভর্তি আছেন। আগে যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না। ফলে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’

চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে মৃত মানুষের সংখ্যা ৮১ পার হয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে এই ভাইরাসে প্রায় ৩ হাজার মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। দেশটির ন্যাশনাল হেলথ কমিশন গতকাল জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের উত্পত্তিস্থল হুবেই প্রদেশে মৃত মানুষের সংখ্যা ৫৬ থেকে বেড়ে ৭৬ হয়েছে। অন্য চার জন অন্যত্র মারা গেছে। চীনের বাইরে ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ভিয়েতনামে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা গেছে। চীনের বাইরে সারা বিশ্বে ২ হাজারের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে।

করোনা ভাইরাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সব বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ইত্তেফাককে বলেন, সবাইকে ডব্লিউএইচও (হু)-এর নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা পর্যায়ের চিকিত্সক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সবাইকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গতকাল বিকালে বলেছেন, বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার জন্য এরই মধ্যে চীন সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানান হয়নি। তবে এরই মধ্যে ফিরিয়ে আনা সংক্রান্ত সব প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা আমরা নিয়ে রেখেছি। যাদের ফিরিয়ে আনা হবে তাদের দেশে আনার পর বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পরিস্থিতি ভয়াবহতা বিবেচনায় সতর্কতা জারির ব্যবস্থা নেবে সরকার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফেরত পাঠানো হলো এক জনকে : আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, দুই মাস আগে চীন ভ্রমণ করায় শওকত আহমেদ নামে এক বাংলাদেশি নাগরিককে ভিসা থাকা সত্ত্বেও ভারতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। করোনা ভাইরাস আতঙ্কে গতকাল সকাল ৯টার দিকে আগরতলা ইমিগ্রেশন থেকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষায় করোনা ভাইরাসের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি তার। শওকত আহমেদ ফেনী সদর উপজেলার সাহিবপুর গ্রামের সৈয়দ আহমেদের ছেলে। তিনি চট্টগ্রামে মোটর যন্ত্রাংশের ব্যবসা করেন। ব্যাবসায়িক কাজে গত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে চীন ভ্রমণ করেছিলেন তিনি। শওকত আহমেদ জানান, এক সপ্তাহ ভ্রমণ শেষে গত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে চীন থেকে দেশে ফেরেন তিনি।

লৌহজংয়ে একই পরিবারের দুই জনের মৃত্যু, আতঙ্ক : আমাদের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়া সংলগ্ন জসলদিয়া গ্রামের মাত্র ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে চাচি-ভাতিজার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর আগের লক্ষণে পরিবার আশঙ্কা করছে তারা কি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন? মেডিক্যাল টিম, প্রশাসন, ডব্লিউএইচও প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি করোনা ভাইরাসজনিত ঘটনা নয়। তবে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, করোনা ভাইরাসের লক্ষণের সঙ্গে এর মিল পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। প্রশাসন এবং সিভিল সার্জন মিলে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here