আন্তর্জাতিক মানের সেবা পাবে বছরে ২ কোটি যাত্রী

0
458
আন্তর্জাতিক মানের সেবা পাবে বছরে ২ কোটি যাত্রী


হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুরু হচ্ছে বড়ো কর্মযজ্ঞ। এখানে নির্মাণ করা হবে তৃতীয় টার্মিনাল। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। সুপরিসর ও অত্যাধুনিক সুবিধাসংবলিত এই টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সাহায্য সংস্থা জাইকা প্রকল্প সহায়তা হিসাবে ১১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা দেবে। বাকি অর্থ সংস্থান করবে বাংলাদেশ সরকার। এরই মধ্যে প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান, ভূমি অধিগ্রহণসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৪৮ মাসের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হলে বছরে ২০ মিলিয়ন যাত্রীকে আন্তর্জাতিক মানের সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

প্রকল্পের রূপরেখা অনুযাযী, এই টার্মিনাল হবে পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়। এখানে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রবেশের সুযোগ পাবে। উন্নত হবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যবস্থা। উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার নতুন কার্গো কমপ্লেক্স, ৫ হাজার ৯০০ বর্গমিটার ভিভিআইপি কমপ্লেক্স, ১ হাজার ৮৪০ বর্গমিটার রেসকিউ অ্যান্ড ফায়ার ফাইটিং স্টেশন, ৪ দশমিক ৯৯ লাখ বর্গমিটার অ্যাপ্রোন এবং ১ লাখ বর্গমিটার ট্যাক্সওয়ে নির্মাণ। এছাড়া টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে র্যাপিড এক্সিট অ্যান্ড কানেকটিং ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে হোটেল লা মেরিডিয়ানের কাছেই বিমানবন্দরে প্রবেশের মূল সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। বিমানবন্দরের সঙ্গে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত করতে সাবওয়ে নির্মাণ করা হবে। নতুন কার্গো ভিলেজের আয়তন হবে ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার। পার্কিং অ্যাপ্রোন হবে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে বছরে ৮০ লাখ মানুষ বিমানবন্দর ব্যবহার করে। যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরো বাড়বে। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়েনি বিমানবন্দরের রানওয়ে ও পার্কিং বেসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, শুরুতেই তৃতীয় টার্মিনালে যাত্রী সেবার মানের দিকে নজর দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ আউটসোর্সিংয়ে দেওয়া হবে। টেন্ডারের মাধ্যমে এই আউটসোর্সিংয়ের কাজ ছেড়ে দেওয়া হবে বেসরকারি খাতে। এতে সেবার মান বাড়বে, সহজ হবে ফ্লাইট পরিচালনা।

প্রসঙ্গত, ১৯৮১ সালে তেজগাঁও থেকে কুর্মিটোলায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থানান্তরিত হয়। তখন থেকে এই টার্মিনাল দিয়ে সব আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালিত হয়ে আসছে; কিন্তু টার্মিনাল ভবনে কোনো বোর্ডিং ব্রিজ ছিল না। পরে আটটি বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন করা হয়। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক দ্বিতীয় টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এই টার্মিনাল দিয়ে ৫২ শতাংশ যাত্রী ওঠা-নামা করে। আর ১৭ শতাংশ যাত্রী ব্যবহার করে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর। বাকিরা সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর ব্যবহার করে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশকে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এই বিমানবন্দর থেকে ইউরোপ এবং এশিয়ার ১৮টি রুটে চলাচল করছে। এ বিমানবন্দর দিয়ে বার্ষিক প্রায় ৪০ লাখ আন্তর্জাতিক ও ১০ লাখ অভ্যন্তরীণ যাত্রী চলাচল এবং ১ লাখ ৫০ হাজার টন ডাক ও মালামাল পরিবহন হয়।

যখন কুর্মিটোলায় বর্তমান বিমানবন্দরটি চালু হয়েছিল তখন দেশের জনসংখ্য এবং প্রবাসীর সংখ্য ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম। আশির দশকের পরে বিদেশে কর্মসংস্থান এবং লেখাপড়ার জন্য দেশের মানুষের আগমন-নির্গমনের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। এছাড়া গার্মেন্টস শিল্প ও পর্যটন সম্প্রসারণের কারণে বিদেশিদের আকর্ষণও বাড়ে বাংলাদেশের প্রতি। ফলে আকাশ পথে মানুষের যাতায়াতও বৃদ্ধি পায়। বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর নতুন রুট হিসাবে স্থান করে নিতে থাকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর; কিন্তু সেই তুলনায় তখন বাড়েনি রানওয়ে ও পার্কিং বেসহ আনুষাঙ্গিক অবকাঠামো। চাপ বাড়তে থাকায় পর্যায়ক্রমে সম্প্রসারণ করা হয় এই বিমানবন্দর। পরবর্তীকালে বর্তমান সরকার পদ্মা সেতুর পূর্ব প্রান্তে ২৫ হাজার একর জমির ওপর সুপরিসর আন্তর্জাতিক বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় ২০১১ সালে। দুই বছর আগে সেই প্রকল্প স্থগিত করা হয় এবং ঢাকা শহরের কাছাকাছি বিকল্প স্থানে সেটি নির্মাণের চিন্তাভাবনা চলছে।

এদিকে গতকাল শুক্রবার তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজের উদ্বোধন প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ শেষ হলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে এ অঞ্চলের সেরা বিমানবন্দর। তিনি বলেন, আগামী ৪৮ মাসের মধ্যে তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হবে। তবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে আশ্বস্ত করেছে। আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করতে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল অত্যাধুনিকভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ২২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে জাপানের মিতসুবিশি করপোরেশন, ফুজিতা করপোরেশন ও স্যামসাং নামের তিনটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামকে (এডিসি) কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মোকাব্বির হোসেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here