ছাত্রলীগ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী, ভেঙে দিতে বললেন কমিটি

0
710
ছাত্রলীগ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী, ভেঙে দিতে বললেন কমিটি

খবর৭১ঃ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) গণভবনে দলের এক বৈঠকে শেখ হাসিনা এই নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

শোনা যাচ্ছে, ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর নানা কর্মকাণ্ডে বিরক্তি প্রকাশ করে কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্ষোভ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন নির্দেশ দিয়েছেন । তবে বিষয়টি বাস্তবে কার্যকর না-ও হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী তাদের কর্মকাণ্ডে যে বেশ ক্ষুব্ধ তা বৈঠকে স্পষ্টতই প্রমাণিত বলে জানান তিনি। তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে – বিতর্কিতদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেয়া, দুপুরের আগে ঘুম থেকে না ওঠা, অনৈতিক আর্থিক লেনদেন ইত্যাদি। সূত্র জানায়, সংসদের রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক হয়।

সে বৈঠকে ছাত্রলীগের প্রসঙ্গ তুলে দলটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা দুপুরের আগে ঘুম থেকে ওঠে না। দলীয় সভানেত্রীর এমন বক্তব্যের পর বৈঠকে অংশ নেয়া মনোনয়ন বোর্ডের অন্যান্য সদস্যরাও ছাত্রলীগের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।

তারা জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সকাল ১১টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদকের জন্য। এর পর ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি পৌঁছে গেলেও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রীর পরে গিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। এছাড়া সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদকে প্রধান অতিথি করে আয়োজন করা ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানেও দেরিতে উপস্থিত হন শোভন-রাব্বানী।

এছাড়াও বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সামনে ছাত্রলীগের আরও যেসব উঠে আসে – জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজের সম্মেলনের দুই মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও কমিটি দিতে না পারা, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি করার বিষয়ে অনৈতিক অর্থনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ আসা,

বিবাহিত ও জামায়াত-বিএনপি সংশ্লিষ্টদের পদায়ন করার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনেক বিতর্ক ও বিশৃঙ্খলা।
বৈঠকে এসব বিষয় আলোচনার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা এবং ছাত্রলীগ কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান এক গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।

জানা গেছে, এ বৈঠক চলাকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে জ্যেষ্ঠ নেতাদের পরামর্শে আর দেখা করেননি। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে তারা গণভবন থেকে চলে যান।

ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী গণভবনের সেই বৈঠক শেষে আর কোথাও না গিয়ে এখন রাব্বানীর হাতিরপুলের বাসায় অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র।

প্রসঙ্গত ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন। চলতি বছরের শুরুতে ডাকসু নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও বিএম মোজাম্মেলকে ছাত্রলীগ চালিয়ে নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়।

২০১৮ সালের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছর মেয়াদী আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এভাবে এক বছর চলার পর চলতি বছরের ১৩ মে ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে এ কমিটিতে স্থান পায়নি বেশ কিছু সক্রিয় নেতাকর্মীরা।

বিবাহিত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, চাকরিজীবী ও বিভিন্ন মামলার আসামিদের নতুন কমিটিতে পদ দেয়া হয়েছে অভিযোগ এনে কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলন করেন পদবঞ্চিতরা। এনিয়ে কমিটিতে পদ পাওয়া নেতাদের সঙ্গে পদবঞ্চিতদের মারামারির ঘটনাও ঘটে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here