৬৭ হাজার টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জন্ম নিচ্ছে প্রতিটি শিশু

0
401

খবর ৭১ঃ দেশে ঋণের বোঝা বাড়ছে। আজ যে শিশুটি জন্ম নেবে, তার মাথায় ৬৭ হাজার ২৩৩ টাকা ঋণের দায় চাপবে। কারণ বর্তমানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু এ পরিমাণ ঋণ রয়েছে। গত ১ বছরে যা বেড়েছে প্রায় ৭ হাজার ২৩৩ টাকা।

আগামী ১ বছরে তা আরও ৫ হাজার ৫৪৭ টাকা বাড়বে। ফলে ওই সময়ে মাথাপিছু ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে ৭২ হাজার টাকা। এ কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরেও প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রেখেছে সরকার। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে মানুষের মাথাপিছু বরাদ্দ ৩২ হাজার ৩৫৫ টাকা।

এ হিসাবে ঋণ মাথাপিছু বরাদ্দের দ্বিগুণেরও বেশি। ঋণ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কর আদায় করতে না পারায় সরকারকে বেশি ঋণের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। আর এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, প্রতি বছর দেশীয় উৎস থেকে সরকার যে হারে ঋণ নিচ্ছে, তা অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার জন্য ইতিবাচক নয়। কারণ সুদের হার বেড়েছে, যা বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করে।

তিনি বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে কর আদায়ের হার অত্যন্ত কম। বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর আদায় ১০ শতাংশের কম। অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে হলে জিডিপির তুলনায় করের অন্তত ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ থাকা উচিত।

তিনি বলেন, করের হার বাড়াতে পারলে ঋণ কমবে না। তিনি আরও বলেন, ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানো ভালো পদক্ষেপ নয়। এতে আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট নয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ৮৭ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ ৯ লাখ ৭০ হাজার ৩৪৮ কোটি এবং সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত মিলিয়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। এছাড়াও এ পরিমাণ ঋণ জিডিপির ৩৫ শতাংশের বেশি।

অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৭ লাখ। এ হিসাবে প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু ঋণ ৬৭ হাজার টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬০ হাজার টাকা। এ হিসাবে ১ বছরে বেড়েছে ৭ হাজার ২৩৩ টাকা।

এরপর আগামী অর্থবছরে আরও ১ লাখ ৩৮ হাজার ২১২ কোটি টাকা ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে। ফলে ঋণের স্থিতি আরও ৮ হাজার ৫৪৭ টাকা বাড়বে।

এ ঋণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কারণ সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে যে ঋণ নেয়া হয়, তার বিপরীতে সরকারকে বছরে ১০ শতাংশের বেশি সুদ গুনতে হচ্ছে। এ কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধে ৫৭ হাজার ৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার। যা দুটি পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের সমান। এক্ষেত্রে ঋণ না কমলে এ টাকা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা যেত।

এ ব্যাপারে মির্জ্জা আজিজ আরও বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ ঋণ অনেক ব্যয়বহুল। সেই ঋণের একটা মোটা অংশ যদি হয় সঞ্চয়পত্র, তাহলে তা আরও ব্যয়বহুল। সরকার ব্যয়বহুল ঋণ বেশি নিচ্ছে, এর অর্থই হচ্ছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো অগ্রাধিকার খাতগুলোয় সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ রাখতে পারছে না।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে বর্তমানে যে ঋণ নেয়া হচ্ছে, তার ৬০ শতাংশই অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপর। এতে আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, ঋণ নির্ভরতা কমানোর জন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে রাজস্ব খাতে বিভিন্ন সংস্কার জরুরি।

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, সরকার ঠিকমতো ঋণ ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না বলেই এর দায় নিতে হচ্ছে জনগণকে। তুলনামূলকভাবে বিদেশি ঋণ অনেক সাশ্রয়ী। কিন্তু সরকার সহজ পথ হিসেবে বেছে নেয় বেশি সুদের অভ্যন্তরীণ উৎসকে। এতে আর্থিক খাতে চাপ বেড়ে যায়।

অন্যদিকে মুদ্রা পরিস্থিতি ইতিবাচক অবস্থায় নেই। ব্যাংকের আমানতের চেয়ে জনগণের হাতে টাকা বেশি। বর্তমানে দেশে মুদ্রার পরিমাণ ১১ লাখ ৬০ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে মেয়াদি আমানত ৯ লাখ ৮ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা, তলবি আমানত ১ লাখ ৬ হাজার ৪১০ কোটি টাকা ও ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতের টাকার পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here