ইদলিবে তুরস্ক-রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে

0
300

খবর৭১ঃ
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের দখলে থাকা সর্বশেষ অঞ্চলটিতে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে ফের সহিংসতার উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় সিরিয়ায় ইদলবের নিয়ন্ত্রণ নিতে আসাদ সরকারের সর্বাত্মক হামলায় নজিরবিহীন সামরিক সংকট দেখা দিতে পারে। প্রদেশটিতে প্রায় ৩০ লাখ লোকের বসবাস।-খবর আরব নিউজের

সিরীয় ও রুশ বিমান হামলার সহায়তা নিয়ে আসাদ সরকারের স্থল বাহিনী বিরোধীদের ঘাঁটির দক্ষিণ থেকে সামনে অগ্রসর হচ্ছে।

সিরিয়ার অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, গত ৩০ এপ্রিল থেকে ইদলিবে সরকারি বাহিনীর হামলায় ২৯১ বেসামরিক লোক ও ৩৬৯ বিদ্রোহী যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।

একই সময় বিদ্রোহীদের হামলায় সরকারি বাহিনীর ২৬৯ সেনা ও ২২ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা বলছে, এ পর্যন্ত ১৩০টি শিশু মারা গেছে। এছাড়া দুই লাখের বেশি লোক বস্তুচ্যুত হয়েছেন।

আংকারার অভিযোগ, তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করেছে আসাদ সরকার। তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার বলেন, রাশিয়াকে আংকারা বলেছে-আসাদ বাহিনীকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

সিরিয়ার বিরোধী দলীয় মুখপাত্র ইয়াহইয়া আল আরিদি বলেন, একটি জনপ্রিয় অভ্যুত্থানকে মোকাবেলায় সামরিক পথ বেছে নিয়েছে সরকারি বাহিনী।

আল আরিদি বলেন, ইদলিবে যা ঘটছে, তা হচ্ছে-তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যের চুক্তি লঙ্ঘন। দুই পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থল বাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন। কিন্তু রাশিয়া ও আসাদ বাহিনীর বোমা হামলার বিরুদ্ধে তাদের কিছু করার থাকবে না।

তিনি বলেন, ভয়ানক মানব ক্ষয় হচ্ছে। হাজার হাজার লোক তাদের বাড়িঘর থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে যাচ্ছেন। এটা মানবিক বিপর্যয়। আর অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই বিশ্ব তাকিয়ে তাকিয়ে তা দেখছে।

তুরস্ক ইতিমধ্যে ৩৬ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। ইদলিবে সশস্ত্র বিরোধীপক্ষকে নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সিরিয়া, ইরান ও রাশিয়ার ব্যাপক চাপে রয়েছে তুরস্ক।

কিন্তু শরণার্থীদের বড় ঢল নিয়ন্ত্রণ ও তুরস্কের স্থল বাহিনীর নিরাপত্তায় বাসার আল আসাদের লাগাম ধরতে রাশিয়াকে প্রয়োজন আংকারার।

মার্কিন থিংক ট্যাংক ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য কর্মসূচির প্রধান অ্যারোন স্টেইন বলেন, কারও স্বার্থ সম্পূর্ণ না মাড়ানো নিশ্চিত করা এবং সহযোগিতার সুযোগ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে রয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার রিসোর্ট সোচিতে এই দুই নেতা ইদলিবে একটি অস্ত্রবিরতির মধ্যস্থতা করেন। রাশিয়ার সমর্থনে বাসার আল আসাদ ও তুরস্কের সমর্থনে বিরোধীরা যাতে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে না পড়েন, সেটা রোধ করার জন্যই ওই অস্ত্রবিরতি হয়েছিল।

কিন্তু ৯ মাস পর সেই চুক্তি ব্যর্থ হয়ে গেছে। সিরীয় সরকার অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ তুরস্কের। হুলুসি আকার বলেন, তারা রাশিয়াকে বলেছেন-আসাদ বাহিনীকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

ইদলিবে বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এছাড়া সিরিয়ার স্থল বাহিনীকে বিমান হামলার সহায়তায় সামনে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে মস্কো।

রাশিয়ার অভিযোগ, উপকূলীয় প্রদেশ লাতাকিয়ায় তাদের সামরিক ঘাঁটিকে হামলার নিশানা বানিয়েছে বিদ্রোহীরা।

কিন্তু এখন ইদলিবে সিরীয় বাহিনীর সর্বাত্মক হামলায় সমর্থন দিতে পারছে না রাশিয়া। কারণ একটি সামরিক লড়াইয়ের চেয়ে তুরস্কের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাদের জন্য।

মস্কোভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রবিষয়ক পরিষদের বিশেষজ্ঞ কিরিল সেমেনোভ বলেন, ইদলিবের কারণে তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে চায় না রাশিয়া।

গত এপ্রিলের শেষ দিকে পুতিন বলেন, একটা বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা তিনি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। কিন্তু সিরীয় বন্ধুদের সঙ্গে আমরা একমত যে, মানবিক সংকটের কারণে এটা এখন করা উচিত হবে না।

বিদ্রোহী হায়াত তাহরির আল শাম রুশ সামরিক ঘাঁটিকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে বলে অভিযোগ করছে মস্কো। এতে ইদলিবে দেশটির ধৈর্য একেবারে কমে যাচ্ছে। শীর্ষ রুশ কর্মকর্তারা ইদলিবকে সন্ত্রাসী উৎপাদনের জায়গা বলে উল্লেখ করেছেন।

অস্ত্রবিরতি সত্ত্বেও উগ্রপন্থীদের উৎখাত করতে পারেনি তুরস্ক। ইদলিবের অধিকাংশ এলাকা হায়াত তাহরির আল শামের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।

ইস্তানবুলের মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক এমরে ইরসান বলেন, হায়াত তাহরির আল শামের(এইচটিএস) ওপর প্রভাব নিয়ে তুর্কি অতিরঞ্জন করেছে। তুরস্ক এই গোষ্ঠীকে ভেঙে ফেলতে চায়। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

এইচটিএস উদারপন্থীদের অধীনে না এসে আসাদের পৃষ্ঠপোষক ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে তুরস্ককে ব্যবহার করেছে। এতে তুরস্ক হামলা চালাতে পারে বলে ঝুঁকি রয়েছে।

একটি পর্যবেক্ষণ ফাঁড়িতে সিরীয় বাহিনীর কামান হামলায় মে মাসের শুরুতে দুই তুরস্ক সেনা আহত হয়েছেন। এছাড়াও আরো তিনটি হামলা এই প্রশ্ন জাগিয়েছে যে এটা কী পরিকল্পিত নাকি আংকারাকে চাপে ফেলতে করা হয়েছে। আর এ ব্যাপারে রাশিয়া অবগত রয়েছে।

হুলুসি আকার বলেন, তুরস্ক বাহিনী যেখানে আছে, সেখান থেকে এক পা পেছাবে না।

এদিকে ইরদোগান ও পুতিন ফোনালাপ করেছেন। শরণার্থীদের ঢল ও বেসামরিক নাগরিকদের হতাহত কমাতে অস্ত্রবিরতি অনুসারে কাজ করতে তারা একমত হয়েছেন। এছাড়া জাপানে জি২০ সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠকেরও পরিকল্পনা রয়েছে এই দুই নেতার।

ইরসান বলেন, এসব আলোচনা ও সহযোগিতা সত্ত্বেও সেখানে এমন কিছু নেই যেটা ইদলিবকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here