মুরাদনগরের দৌলতপুরে হারিয়ে যাচ্ছে নজরুল-নার্গিসের স্মৃতি

0
426

মোঃ রাসেল মিয়া ,মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ

মানবতা, সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সৃষ্টিতে এক অনন্য অধ্যায় কুমিল্লা মুরাদনগর উপজলোর  দৌলতপুর। এখানইে নার্গিসের ভালবাসার আগুনের পরশমানিকের ছোঁয়ায় বেজেছিলেন নজরুলের ‘অগ্নীবিণা’। ১৯২১ সালে বন্ধু আলী আকবর খানের সঙ্গে দৌলতপুরে তাঁর গ্রামের বাড়িতে আসেন কবি। এখানকার সবুজ-শ্যামল পরিবেশ কবিকে দারুণভাবে আচ্ছন্ন করে। এখানে কবি রচনা করেছেন বহু কবিতা, গান আর ছড়া। কিন্তু সেই দৌলতপুর আজও অবহেলিত ও উপেক্ষিত। এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে কবির নামে হয়নি কোনো প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় কিছু সংগঠন বিভিন্ন সময় কিছু দাবি নিয়ে আন্দেলন করেও কোন প্রকার লাভ হয়নি। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে আগামী ২৫ মে বৃহস্পতিবার থেকে কবির ১১৮তম জন্মবার্ষিকী পালন শুরু হবে।

মুরাদনগরের কোমপানীগঞ্জ-নবীনগর সড়ক ধরে সামনে এগোলেই দৌলতপুর গ্রাম। এ গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে ‘নজরুল তোরণ’। তোরণের দুই পাশে ইট-সিমেন্টের তৈরি কালো রঙের টুকরো টুকরো বোর্ডে সাদা কালিতে লেখা কবির   কবিতাংশ। ওই পথ ধরে আধা কিলোমিটার এগোলেই খাঁনবাড়ি। যে বাড়িকে কেন্দ্র করে নজরুলময় হয়ে ওঠেন ভক্তরা। ওই বাড়ি আর গ্রাম দীর্ঘদিন থেকে পরিচিত হয়ে ওঠে নজরুল-নার্গিসের গ্রাম হিসেবে।

এখানে রয়েছে আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বিতল বাড়ি। এ বাড়িতেই কবি ছিলেন। এ বাড়ির পলেস্তারা খসে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে না কোন সংস্কার। এ ভবনের পেছনে বাঁশঝাড় পার হলেই কবির বাসরঘর।
জানা যায়, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কবির বাসরঘরটি আটচালা ছিল। পরে চৌচালা হলেও আয়তন ও ভিটির কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ওই ঘরেই ছিল নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুকটি। অযত্ন ও অবহেলার কারনে সে সিন্দুকটি এখন আর নেই। কোথায় আছে এখন তা আর ওই বাড়ির কেউই বলতে পারে না। একসময় ওই ঘরে বাসর খাটটিও ছিল। এখন সেটি পাশের একটি আধা পাকা ঘরে রাখা হয়েছে।
কবিপতত্নী নার্গিস বংশের উত্তরসূরিরা জানান, এ বাড়ির পুকুরঘাটের আম গাছ তলায় কবি দুপুরে শীতলপাটিতে বসে গান ও কবিতা লিখতেন।

খানবাড়ির ছেলেমেয়েদের নাচ, গান ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখাতেন। পুকুরের পানিতে সাঁতার কাটতেন। শখ করে পুকুরে জাল আর পলো দিয়ে মাছ শিকার করতেন। কবির ওই স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার জন্য দৌলতপুরে বানানো হয়েছে ‘নজরুল মঞ্চ’। প্রতিবছর কবির জন্মদিনে সেখানে জেলা প্রশাসন ও মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসন সাদামাটাভাবে অনুষ্ঠান করে থাকে। এর বাইরে আর কিছুই এখানে হয়নি।
এলাকাবাসী জানান, ওই মঞ্চে বছরের অধিকাংশ সময় গরু চরে। শিশুরা হামাগুড়ি দেয়। মুরাদনগর উপজেলা আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমিটির সভাপতি সৈয়দ রাজিব আহাম্মদ আক্ষেপ করে বলেন, ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবির নামে অনেক কিছু হয়েছে। অথচ দৌলতপুরে কিছুই হলো না। কবি এখানে দুই মাস ১১ দিন ছিলেন। এখানে তিনি যৌবনে প্রেম ও বিয়ে করেছেন। অনেক কবিতা ও গান রচনা করেছেন।

দৌলতপুরে কবির নামে বড় ধরনের কোনো স্থাপনা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের জোর দাবি জানান।
রাজনীতিক ও মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ তানভীর আহম্মেদ ফয়সাল বলেন, কবি নজরুলের নামে দৌলতপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিসহ আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বিতল বাড়িটিকে জাদুঘর বানিয়ে কবি পত্মী নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক ও বাসরখাটটি সংরক্ষনের দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, প্রতিবছর এখানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বড় ধরনের কোনো স্থাপনা, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন, কোম্পানীগঞ্জ থেকে নবীনগর উপজেলা পর্যন্ত সড়কটি কবির নামে করতে চাই।

একই সঙ্গে বাঙ্গরা বাজার থানা নজরুল-নার্গিস’র নামে করার উদ্যোগ নিয়ে মুরাদনগর উপজেলা আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’র সাধারন সম্পাদক সৈয়দ রাজিব আহাম্মদ, মুরাদনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ তানভীর আহম্মেদ ফয়সাল, উপজেলা নজরুল নার্গিস স্মৃতি রক্ষা ফাউন্ডেশনের আহবায়ক মো: হুমায়ন কবির খান, নাঈম সরকার ও শেখ সজীব ওয়াজেদ জয় ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মো: গিয়াস উদ্দিন আল মাসুদের নেতৃত্বে স্ব-স্ব সংগঠনের পক্ষে চলতি বছরের  ১৯ মে মুরাদনগরের উত্তরের জন্য প্রস্তাবিত নতুন থানার নামকরনের দাবিতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি পাঠিয়েছিলেন। আজও সেই দাবি গুলোর কোনটাই আদায় না হওয়ায় আমরাসহ স্থানীয়দের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।

এ অবস্থার মধ্য দিয়ে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কবির ১২০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কাল ২৫ মে (শনিবার) সকাল ১০টায় উপজেলার দৌলতপুরে শুরু হবে ২ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। পরদিন ২৬ মে (রবিবার) সমাপনী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরনি হবে। জেলা প্রশাসক ফজল মীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকার কথা রয়েছে ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ও এফবিসিআই এর সাবকে সভাপতি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এমপির। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসানুল আলম সরকার কিশোর। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম। আলোচনা সভা শেষে কবিতা আবৃতি ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতকি অনুষ্ঠানে মুরাদনগর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবে।
এতে দেশের নামকরা নজরুল গবেষক ও ভক্তরা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here